যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সেন্ট্রাল আমেরিকা ও নেপালের প্রায় ৬০ হাজার অভিবাসীর অস্থায়ী সুরক্ষা (টেম্পরারি প্রটেক্ট স্টাটাস-টিপিএস) প্রত্যাহারের ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে বহালের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার, ক্যালিফোর্নিয়ার ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জজ ট্রিনা এল থম্পসন এই আদেশ দেন। তার ভাষায়, ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তটি ছিল পক্ষপাতদুষ্ট এবং দেশগুলোর বাস্তব পরিস্থিতির নিরপেক্ষ মূল্যায়ন ছাড়াই নেওয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। এতে বলা হয়, টিপিএস এর আওতায় থাকা ব্যক্তিদেরকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
২০২৫ সালের ৫ আগস্টের মধ্যে প্রায় ৭ হাজার নেপালি নাগরিক এবং সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখের মধ্যে ৫১ হাজার হন্ডুরান ও প্রায় ৩ হাজার নিকারাগুয়ান নাগরিককে দেশত্যাগ করতে বলা হয়েছিল। অবশ্য বিচারক থম্পসনের আদেশ অনুযায়ী এই সুরক্ষা বলবৎ থাকবে মামলার পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত। পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে ১৮ নভেম্বর।
থম্পসন তার আদেশে বলেন, নেপাল, হন্ডুরাস ও নিকারাগুয়া থেকে আগতদের টিপিএস বাতিল হলে তারা চাকরি, স্বাস্থ্য বীমা হারানোর পাশাপাশি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং এমন দেশে ফেরত পাঠানো হবে যেখানে তাদের কোনো সামাজিক ভিত্তি নেই। তিনি আরও জানান, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। বিচারক আরও বলেন, অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নেওয়া এই সিদ্ধান্তগুলো ট্রাম্পের প্রচারণা ও বর্ণবিদ্বেষমূলক মনোভাব দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তিনি বলেন, শুধুমাত্র বর্ণ, নাম বা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে কাউকে দেশত্যাগে বাধ্য করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
নেপাল, হন্ডুরাস ও নিকারাগুয়া সরকারের পক্ষ থেকেও আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে। হন্ডুরাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভিয়ার বুএ সোটো এক্সের পোস্টে জানান, এই রায় প্রমাণ করে যে, আবেদনকারীরা শুধু নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার চাইছে। নিকারাগুয়ায় বর্তমানে দমনমূলক সরকারব্যবস্থার কারণে হাজার হাজার মানুষ দেশ ছেড়েছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করে প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগা দেশটির সব প্রতিষ্ঠান নিজের নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। জাতিসংঘের একটি প্যানেলও ফেব্রুয়ারিতে সতর্ক করে বলেছিল, দেশটিতে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।
এই মামলার মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের আরও কিছু টিপিএস বাতিলের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। ইতোমধ্যে ভেনেজুয়েলা, হাইতি, ইউক্রেন, আফগানিস্তান ও ক্যামেরুনের নাগরিকদের সুরক্ষাও খর্ব করা হয়েছে, যার কিছু নিয়ে মামলা চলছে। ন্যাশনাল টিপিএস অ্যালায়েন্সের আইনজীবীরা বলছেন, প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর প্রবাসীদের দেশ ছাড়ার জন্য প্রায় এক বছর সময় দেওয়া হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে মাত্র দুই মাস সময় দিয়েছিল সরকার, যা অমানবিক। এই আদেশ ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি জয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগে টিপিএস ভুক্ত অভিবাসীরা আপাতত স্বস্তিতে থাকতে পারবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।