আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলোর আড়ালের বাস্তবতা উন্মোচন করে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীন। দীর্ঘদিন ধরে চলা বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এবার ভিন্ন এক কৌশল নিয়েছে দেশটি। তারা বিশ্বের সবচেয়ে দামি বলে বিবেচিত মার্কিন ব্র্যান্ডগুলোর প্রকৃত উৎপাদন খরচ ফাঁস করে দিয়ে গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। চীনের দাবি অনুযায়ী, এসব পণ্যের নির্মাণ ব্যয় এতটাই কম যে তা শুনে সাধারণ ভোক্তারা বিস্মিত।
চীনের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে, বিশেষ করে টিকটকে একের পর এক ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে গুচি, ডিওর, লুই ভিয়েত্তো এবং এমনকি আইফোনের মতো ব্র্যান্ডের পণ্যগুলো মাত্র কিছু হাজার টাকায় তৈরি করে লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গুচি ব্যাগ তৈরি করতে খরচ হচ্ছে মাত্র ২১ হাজার টাকা অথচ বাজারে সেটির মূল্য প্রায় ৩০ লাখ। একইভাবে ডিওরের ব্যাগ ৫ হাজার টাকায় তৈরি হলেও সেটি বিক্রি হচ্ছে দেড় লাখ টাকায়। আর একটি আইফোন তৈরির প্রকৃত ব্যয় যেখানে ১২ হাজার টাকার মতো তা বিক্রি হচ্ছে প্রায় দেড় লাখ টাকায়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে কেবল একটি ব্র্যান্ড লোগোর জন্যই দাম বেড়ে যাচ্ছে দশ গুণ বা তারও বেশি।
চীনের এই বিস্ফোরক তথ্য ফাঁসের পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কঠোর বাণিজ্য নীতি। চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে যার লক্ষ্য ছিল সস্তা চীনা পণ্যের প্রবাহ ঠেকানো এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার রক্ষা করা। চীন এর প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা শুল্ক আরোপের পাশাপাশি একটি কৌশলগত পাল্টা আঘাত হানে তারা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডনির্ভর বাজার কৌশলকে জনসমক্ষে উন্মোচন করে দেয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ শুধু মার্কিন পণ্যের বিক্রিতেই নয়, তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং ভোক্তাদের আস্থার ওপরও বড় ধাক্কা দেবে। চীন শুধু দাম নয়, একইসঙ্গে এসব পণ্যের কাঁচামাল, নির্মাণ প্রক্রিয়া ও কারিগরি দিকও তুলে ধরেছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে মূল ব্র্যান্ডের সঙ্গে চীনের তৈরি নামহীন পণ্যের মধ্যে পার্থক্য কেবল একটি লোগো।
চীন এখানেই থেমে থাকেনি। তারা একই ডিজাইন ও উপকরণ ব্যবহার করে নিজস্ব অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বিক্রি শুরু করেছে এসব পণ্যের বিকল্প সংস্করণ। এসব পণ্যে কোনো ব্র্যান্ড লোগো নেই, তবে মানের দিক থেকে সেগুলোকে মূল ব্র্যান্ডের সমতুল্য বলা হচ্ছে। দামও তুলনামূলকভাবে অনেক কম কিছু ক্ষেত্রে মূল ব্র্যান্ডের দামের দশ ভাগেরও কম। এর মাধ্যমে চীন একপ্রকারে দেখিয়ে দিয়েছে এতদিন ভোক্তারা ‘লাক্সারি’ নামে যে পণ্য কিনছিলেন তা বাস্তবে কেবল ব্র্যান্ড ম্যাজিকের ওপর নির্ভর করেই উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছিল।
বিশ্ববাজারে এই কৌশলগত ধাক্কা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক আধিপত্যেই নয়, বরং ব্র্যান্ড-নির্ভর বাজার ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অনেক ভোক্তা এখন ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন তারা এতদিন আসলে কীসের দাম দিচ্ছিলেন—পণ্যের প্রকৃত মানের, নাকি কেবল একটি নাম ও লোগোর?
বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষ এখন চীনের এই নতুন কৌশলের দিকে নজর রাখছে। দাম, মান ও ব্র্যান্ড—এই তিনের ভারসাম্য নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা। চীনের দৃষ্টিতে, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা শুল্কনীতি ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের জবাবে তারা কেবল পাল্টা চাপ দেয়নি বরং বিশ্ববাজারে ব্র্যান্ডের নামে অতিমূল্যায়নের বাস্তবতাও প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে।
এই ঘটনাপ্রবাহে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠছে—আজকের বাজারে কেবল নাম নয় বরং স্বচ্ছতা, গুণমান এবং পণ্যের প্রকৃত মূল্যই ক্রেতাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ভবিষ্যতের বাজার কি শুধু ব্র্যান্ড নামেই বিক্রি হবে নাকি মানই হয়ে উঠবে প্রধান বিবেচ্য—এই প্রশ্নই এখন সময়ের মুখোমুখি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।