ধর্ম ডেস্ক : আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই প্রযুক্তিতে দিয়েছে নতুন মাত্রা। যার ফলে মানুষের বহু কাজ সহজ হয়েছে, কাজের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর অপব্যবহার মানুষের জন্য হুমকিও হয়েছে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ ডিপফেক।
এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির মানুষ বহু ধরনের প্রতারণা করছে। মানুষের নকল ছবি/ভিডিও তৈরি করে তাদের বিপদে ফেলে দিচ্ছে, অনেক সময় অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনকি মানুষকে হেনস্তা করার জন্য এটি ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি তৈরি করে তা ইন্টারনেটে পর্যন্ত ছড়িয়ে দিচ্ছে। ডিপফেক দিয়ে বানানো ছবি বা ভিডিও এতটাই নিখুঁত হয় যে মানুষ দ্বিধায় পড়ে যায়। এবং প্রতারিত ব্যক্তিকে অপরাধী হিসেবে বিশ্বাস করে নেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়া নিষিদ্ধ। নিম্নে কোরআন-হাদিসের আলোকে এর কারণগুলো তুলে ধরা হলো—
এভাবে ছবি বানানো নিষিদ্ধ : ডিপফেক ব্যবহার করা হয়, কারো ছবি বা ভিডিও নকল করে হুবহু তার চেহারার মডেল তৈরি করার জন্য। ২০১৯ সালে গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টেলিনর রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিয়র্ন হ্যানসেন বলেছেন, ডিপফেক কনটেন্টগুলো এতটাই অত্যাধুনিক হবে যে ডিজিটাল বিশ্বের কোনটা আসল, কোনটা নকল তা আলাদা করা কঠিন হয়ে যাবে।
উন্নত অ্যালগরিদম সহজেই জাল ছবি ও ভিডিও তৈরি করতে পারবে। এভাবে মানুষের ছবি বানানো ইসলামে হারাম। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অবশ্যই কিয়ামতের দিবসে মানুষের মধ্যে (কঠিন) শাস্তি ভোগকারী হবে ছবি তৈরিকারীরা।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৪৩০)
মানুষকে জিম্মি করা হারাম : ডিপফেক ব্যবহার করে অন্যের আপত্তিকর ছবি-ভিডিও বানিয়ে তাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এভাবে অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হাতিয়ে নেওয়া হারাম।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না; কিন্তু পরস্পর সম্মতিক্রমে ব্যবসা করা বৈধ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯)
সম্ভ্রমহানি করা : ডিপফেক ব্যবহার করে অনেক সময় মানুষের ভুয়া ছবি বা ভিডিও বানিয়ে তার সম্ভ্রমহানি করা হয়। ইসলাম এই কাজকে কোনোভাবেই সমর্থন করে না। কেউ যদি এ ধরনের কাজে লিপ্ত হয়ে যায়, তার উচিত অবশ্যই ভুক্তভোগীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া, তা না হলে কিয়ামতের দিন এর চরম মূল্য দিতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়, সেদিন আসার আগে, যেদিন তার কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সেদিন তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তার কাছ থেকে নেওয়া হবে; আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ থেকে নিয়ে তা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৪৯)
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করা : অনেক সময় এ ধরনের অ্যাপ করা হয়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করার জন্য। স্বামী বা স্ত্রীকে ভুয়া ছবি/ভিডিও, অডিও দেখিয়ে খেপিয়ে দেওয়ার জন্য। ইসলামের দৃষ্টিতে এই কাজটিও জঘন্য অপরাধ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এ ধরনের মানুষরূপী শয়তানদের নিন্দা করে বলেন, ‘তারা ফেরেশতাদ্বয়ের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যা দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১০২)
ফিতনা ছড়ানো নিষিদ্ধ : অনেক সময় এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে কোনো সম্মানিত ব্যক্তির জাল ছবি ভিডিও বানিয়ে এমনভাবে প্রচার করা হয়, যার ফলে সমাজে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়, আবার অনেক সময় ধর্মীয় দাঙ্গাও লেগে যায়, সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য এভাবে ফিতনা ছড়ানোও নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ফিতনা হত্যা থেকেও গুরুতর অন্যায়।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২১৭)
বিদ্রূপ করা নিষিদ্ধ : অনেক সময় আবার মানুষের জাল ছবি বা ভিডিও বা অডিও বানানো হয় শুধু তাকে উপহাস করার জন্য। মানুষকে উপহাস করাও ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ কোরো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গুনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তাওবা না করে তারাই জালেম।’ (সুরা : আল-হুজুরাত, আয়াত : ১১)
অশ্লীলতা ছড়ানো হারাম : অনেক সময় এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করা হয়, পর্নো ভিডিও তৈরি করার জন্য। ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন অপরিচিত মানুষের ছবি ডাউনলোড করে কারসাজির মাধ্যমে পর্নো ভিডিও বানিয়ে সেগুলো আবার ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয় অর্থ উপার্জনের জন্য, যা ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্যতম অপরাধ। এখানে একদিকে যেমন ব্যক্তির হক নষ্ট করা হচ্ছে, অন্যদিকে অশ্লীলতা ছড়ানো হচ্ছে, যার দুটোই ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। পবিত্র কোরআনে অশ্লীলতা ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)
পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে অশ্লীলতার আরবি শব্দ ‘ফাহেশা’ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ অশ্লীলতা, নির্লজ্জতা ইত্যাদি। আবার পবিত্র কোরআনের কোনো কোনো জায়গায় ব্যভিচারকেও ‘ফাহেশা’ বলা হয়েছে। যেমন সুরা বনি ইসরাঈলে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না, নিশ্চয়ই তা অশ্লীল ও মন্দ পথ।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।