আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ডিপফেক প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে তৎপর হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ডিপফেক-আতঙ্ক গ্রাস করেছে সর্বত্র। এই আবহে এ বার প্রযুক্তির দুনিয়ায় আরও এক বিপদের কথা প্রকাশ্যে এল। এই নতুন আতঙ্কের নাম ক্লিয়ারফেক।
চলতি বছরের শুরুতে নতুন একটি সাইবার ঝুঁকির আশঙ্কার কথা শুনিয়েছিলেন গবেষকরা। ‘অটোমিক ম্যাকওএস স্টিলার’ বা এএমওএস নামে একটি ভাইরাসকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মূলত ওই ভাইরাসটির শিকার হচ্ছেন অ্যাপল গ্রাহকেরা। এক বার যদি এটি ডিভাইসে ইনস্টল হয়ে যায়, তা হলে এই ম্যালওয়ারটি গ্রাহকের সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারবে। ক্রেডিট কার্ড, ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটের মতো তথ্য হাতাতে সক্ষম এই ভাইরাস। এই নতুন প্রতারণা পদ্ধতির নাম হল ক্লিয়ারফেক।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ডিপফেকের থেকেও বিপজ্জনক ক্লিয়ারফেক। যা ঘিরে নতুন করে আশঙ্কা দানা বেঁধেছে সব মহলে।
কয়েক দিন আগে দক্ষিণের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রশ্মিকা মান্দানার একটি ভুয়ো ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল। যা ঘিরে শোরগোল পড়ে যায়। পরে জানা যায় যে, ডিপফেক প্রযুক্তির কারসাজিতে বানানো হয়েছে রশ্মিকার ওই ভুয়ো ভিডিয়ো।
ওই বিতর্কিত ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল, জ়ারা পটেল নামে এক সমাজমাধ্যম-তারকার শরীরে ডিপফেক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বসানো হয়েছিল রশ্মিকার মুখ। এই কাণ্ড দেখে শিউরে উঠেছিলেন সকলে।
রশ্মিকার পর এই প্রযুক্তির শিকার হন বলিপাড়ার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফ। ‘টাইগার ৩’ ছবিতে ক্যাটরিনার একটি ছবি বিকৃত করা হয় এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে।
এতেই শেষ নয়, ডিপফেকের অপব্যবহারের শিকার হন অভিনেত্রী কাজলও। ডিপফেক প্রযুক্তির এ হেন অপব্যবহার রুখতে তৎপর হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারও।
এমনকী, ডিপফেক-আতঙ্কের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও একটি ভুয়ো ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। যা ঘিরে হইচই পড়ে যায়। খোদ প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেন, ‘‘সম্প্রতি একটি ভিডিয়োতে দেখি আমি গরবা গান গাইছি। কিন্তু ঘটনা হল আমি স্কুল ছাড়ার পরে এ ধরনের কোনও গান গাইনি। যাঁরা আমাকে পছন্দ করেন, তাঁরা অনেকেই আবার ওই ভিডিয়ো আমায় পাঠিয়ে দেন।’’
পরে জানা যায়, ওই ভিডিয়োতে যাঁকে দেখা গিয়েছে, তিনি আসলে প্রধানমন্ত্রী নন। মুম্বইয়ের এক ব্যবসায়ী জানান, ওই ভিডিয়োটি তাঁর।
কিন্তু কী এই ডিপফেক? ডিপ লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়ো ভিডিয়ো তৈরি করাই হল ডিপফেক। যন্ত্র মেধার বলে বলীয়ান এই প্রযুক্তির সাহায্যে কোনও চেহারা, গলার স্বর, মুখের অভিব্যক্তি— সবই নকল করা যায়।
তবে এই ধরনের প্রযুক্তির অপব্যবহার অতীতেও এ দেশে ঘটেছে। ২০২০ সালে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপির একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল, দিল্লির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি মনোজ হরিয়ানভি এবং ইংরেজিতে ভোট চাইছেন। কিন্তু আদতে হরিয়ানভিতে কথা বলেন না মনোজ।
ডিপফেক নিয়ে এমন আতঙ্কের মধ্যেই এ বার প্রকাশ্যে এসেছে ক্লিয়ারফেকের কথা। ডিপফেকের থেকে কতটা আলাদা এই নতুন বিপদ?
ক্লিয়ারফেক ডিপফেকেরই একটি ধরন। মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। ক্লিয়ারফেকের সাহায্যে ছবি বা ভিডিয়ো এমন ভাবে বানানো হয় যে, যা আসল বলে মনে হবে। এ ক্ষেত্রেও গলার স্বর, মুখের অভিব্যক্তি নকল করা যায়।
ক্লিয়ারফেকের হাত থেকে রেহাই পাবেন কী ভাবে? বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কোনও অজানা জায়গা থেকে সফ্টঅয়্যার ডাউনলোড করবেন না।
সরাসরি অ্যাপ থেকে সাফারি এবং ক্রোম আপেডট করুন। কোনও অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে কোথা থেকে করছেন, তা যাচাই করে নিন। এই সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলি মেনে চললেই ক্লিয়ারফেকের হাত থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।