বহু দশক ধরে উঠোনে পাতা ছিল পাথরগুলো। বাড়ির লোকজনের প্রতিদিনের হাঁটাচলা, শিশুদের ছুটোছুটি আর কাপড় কাচার পানি পড়ে মসৃণ হয়ে গিয়েছিল তাদের গা। নিতান্ত সাধারণ মেঝ হিসেবেই তারা বছরের পর বছর ধরে ব্যবহৃত হয়েছে। কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি যে এই সাধারণ পাথরের ভেতরে লুকিয়ে আছে ১৯ কোটি বছর আগের এক বিস্ময়কর ইতিহাস—যেখানে জুরাসিক যুগের এক বিশাল ডাইনোসর তার পায়ের ছাপ ফেলে গিয়েছিল নরম কাদামাটিতে। খবর এনডিটিভির।

দক্ষিণ পশ্চিম চীনের দুই ভাই সম্প্রতি অবাক হয়ে আবিষ্কার করেছেন যে তারা কয়েক দশক ধরে যে পাথরগুলিকে ধাপে ধাপে ব্যবহার করে আসছিলেন তা আসলে ১৯ কোটি বছরের পুরোনো ডাইনোসরের পায়ের ছাপের জীবাশ্ম। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবরে জানা যায়, ২৯ নভেম্বর সিচুয়ান প্রদেশের উলি গ্রামে পাওয়া ডাইনোসরের পায়ের ছাপের উপর গবেষকরা গবেষণা সম্পন্ন করার পর এই আবিষ্কারটি নিশ্চিত হয়েছে।
১৯৯৮ সালে ডিং নামে পরিচিত ওই দুই ভাই কোন কারণে পাথর খনন করছিলেন, তখন তারা কিছু পাথরে অদ্ভুত ‘মুরগির পায়ের থাবার’ মতো চিহ্ন লক্ষ্য করেন। জিগং শহরের অন্তর্গত উলি গ্রামটি ডাইনোসর জীবাশ্মের জন্য বিখ্যাত হলেও, তারা এটিকে কেবল আকর্ষণীয় আকৃতি ভেবে গ্রামের বাড়িতে হাঁটার জন্য ব্যবহার করতে শুরু করেন।
এই অবিশ্বাস্য সত্যটি সামনে আসে ২০১৭ সালে, যখন ডিং ভাইদের একজনের মেয়ে পাথরগুলোর ছবি অনলাইনে শেয়ার করেন। সেই ছবিগুলিতে ধারালো নখর, বৃত্তাকার ছাপ এবং কিছু রৈখিক চিহ্ন দেখে জাদুঘরের গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। এক মাস পরে নিশ্চিত করা হয় যে এই পাথরগুলি ডাইনোসরের পায়ের ছাপ। পরে পারিবারিক অনুমতি নিয়ে জীবাশ্মগুলো আরও গবেষণার জন্য জাদুঘরে স্থানান্তরিত করা হয়।
সম্প্রতি চাইনিজ বিজ্ঞানীরা ‘জার্নাল অফ প্যালিওজিওগ্রাফি’তে উলি গ্রামের এই জীবাশ্মগুলো নিয়ে তাদের গবেষণার ফল প্রকাশ করেছেন। তারা আটটি পাথরের স্ল্যাব বিশ্লেষণ করে ১৮০ থেকে ১৯০ মিলিয়ন বছর আগের মোট ৪১৩টি পায়ের ছাপ পেয়েছেন। বেশিরভাগ ছাপই ছিল গ্র্যালেটোরেস এবং ইউব্রোন্টেস নামের ডাইনোসরের।
গবেষকরা আবিষ্কার করেন, এই ডাইনোসরগুলো আধুনিক পাখির মতো দ্রুত ‘ভূমিতে দৌড়ানো’ গতিতে হাঁটত, যার গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় ৫ দশমিক ৮ থেকে ৮ দশমিক ৬ কিলোমিটার। এছাড়া, তারা বিরল লেজ টেনে নিয়ে যাওয়ার চিহ্নও লক্ষ্য করেন।
বেইজিংয়ের চায়না ইউনিভার্সিটি অফ জিওসায়েন্সেসের অধ্যাপক জিং লিডার মতে, এই চিহ্নগুলো সম্ভবত তৈরি হয়েছিল যখন ডাইনোসর ধীরে চলছিল, চারপাশ দেখছিল অথবা আক্রমণাত্মক আচরণ প্রদর্শন করছিল।
উল্লেখ্য, চীনের বিখ্যাত জিগং শহরের অন্তর্ভুক্ত এই উলি গ্রামটি, যা ডাইনোসরের জীবাশ্মের জন্য পরিচিত এবং দক্ষিণ সিচুয়ান বেসিনের ‘চীনা ডাইনোসরের বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



