জুমবাংলা ডেস্ক : সমবায় ব্যাংক সোনা জমা রেখে ঋণ নেওয়া গ্রাহকদের সম্পদ ভুয়া মালিক সাজিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মহি। তার অন্য একটি পরিচয় কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (চলতি)।
সমবায় ব্যাংক একটি বিশেষায়িত ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলভুক্ত নয়। এটি পরিচালিত হয় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীনে। এখানে সোনা বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া যায়। প্রতি ভরি খাঁটি সোনার বিপরীতে এখন ৫৫ হাজার টাকা ঋণ পাওয়া যায়। সুদের হার ১৭ শতাংশ। বাড়তি ১ শতাংশ বিমা খরচ দিতে হয়। ঋণ নেওয়ার পর সুদ ও আসল টাকা পরিশোধ করে সোনা ফেরত নিতে পারেন গ্রাহকেরা।
কোনো গ্রাহক নির্ধারিত সময়ে ঋণের টাকা শোধ করতে না পারলে বন্ধক রাখা সোনা নিলামে বিক্রি করা যায়। এসুযোগটিই গ্রহণ করেন মহি। ভাগ্নে ও চাচাতো ভাইয়ের সহায়তায় ভুয়া গ্রহক সাজিয়ে সোনা লুট করেন তিনি।
মহির বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি গ্রাহকদের গচ্ছিত রাখা সোনা ভুয়া গ্রাহক সাজিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। একাজে তার সহযোগি ছিলেন তার ভাগ্নেও চাচাতো ভাই। নথি বলছে: ২০২০ সালে মহি ৭ হাজার ৩৯৮ ভরি সোনা ভুয়া গ্রাহক সাজিয়ে বিক্রি করে দেন। যার বর্তান বাজার মূল্য ১০০ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ব্যাংকটির ২ হাজার ৩১৬জন গ্রাহক।
জানা গেছে: ২০০৯ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদটি বাগিয়ে নেন মহিউদ্দিন মহি। চেয়ারম্যান হয়ে ব্যাংকের ভোল্টের দায়িত্ব দেন ভাগ্নে ক্যাশ অফিসার নূর মোহাম্মদ এবং এজিএম চাচাতো ভাই হেদায়েত কবিরকে। আর এদের সঙ্গে নিয়েই ১২ হাজার ভরি সোনা লুটের অভিযোগ মহির বিরুদ্ধে।
সোনা লুট করেই থামেননি মহি। নিয়োগেও করেছেন অনিয়ম। ভুয়া সনদের নিয়োগ দেন বান্ধবী কোহিনুর আক্তারকে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে নিয়োগ দিয়েছেন ১৭৬ জনকে। যার ১৩৮ জনই নিজের ও বান্ধবীর আত্মীয়।
তার এ সোনা বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করেছিলো পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। কারণ তাদের অধিনেই ব্যাংকটি পরিচালিত হয়। সে তদন্ত প্রভাব খাটিয়ে বন্ধ করে দেন মহিউদ্দিন আহমেদ মহি। ২০২১ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন সোনা বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়ে একটি মামলা করে। সে মামলায় ৯ জনকে আসামী করা হয়, যার ১ নম্বর আসামী ছিলেন মহি। সেখানেও প্রভাব খাটিয়ে অভিযোগপত্র থেকে নিজের নামটি বাদ দেওয়াতে সক্ষম হন তিনি।
বিষয়টি আবার নতুন করে সামনে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার ও সমবায় উপদেষ্টা হাসান আরিফের একটি বক্তব্যে। তিনি জানান: সমবায় ব্যাংকের অবস্থা দেখতে গিয়ে জানলাম, ১২ হাজার ভরি (দুদকের মামলায় ৭ হাজার ৩৯৮ ভরি) সোনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না!
তার এ বক্তব্যের পর তোলপাড় শুরু হয়। গ্রাহকরা আতঙ্কিত হয়ে মতিঝিলে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে। সকলে তাদের গচ্ছিত সোনা দেখতে চান।
দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে: ২০২০ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর সময়ে সমবায় ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বন্ধক রাখা সোনা নিলামে না তুলে ভুয়া মালিক সাজিয়ে বিক্রি করে দেন। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করা হয়।
মুকেশ আম্বানির জামাই আনন্দ পিরামলের সম্পত্তিতে কেনা যাবে একটি দেশও
মহিউদ্দিন আহমেদকে জালিয়াতিতে সহায়তাকারীদের একজন সমবায় ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার (ক্যাশ) নুর মোহাম্মদ। তিনি মহিউদ্দিন আহমেদের ভাগনে। দুদকের মামলায় নুর মোহাম্মদ ৬ নম্বর আসামি। মামলাটি এখন বিচারাধীন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।