লাইফস্টাইল ডেস্ক : ভালো কাজ বা সেবামূলক কাজ নিয়ে আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে কিছু ভুল ধারণা ও মনোভাব। অনেকেই মনে করেন এসব করার জন্যে একটা নির্দিষ্ট বয়স এবং সময় রয়েছে। এই যেমন : ছেলেমেয়ের বিয়ে দিয়ে, চাকরি থেকে অবসর নিয়ে, ব্যবসা একটু গুছিয়ে নিয়ে না-হয় ভালো কাজ করা যাবে। আবার অনেকে মনে করেন শিক্ষার্থী জীবনই সেবামূলক কাজের মোক্ষম সময়। যেহেতু সেই সময় পার হয়ে গেছে সেহেতু আর সেবামূলক কাজের বয়স নেই। তবে এসবই ভুল ধারণা।
আবার অনেকে মনে করেন সেবামূলক কাজের ‘বিলাসিতা’ শুধু ধনীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অর্থাৎ নিন্ম বা মধ্যম আয়ের মানুষ তাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে সৎকর্মে ইচ্ছা থাকলেও অংশ নিতে পারেন না।
শিশুদের এসব কাজে যুক্ত করার কোনো প্রয়োজন নেই বলেও মনে করেন অনেকে। তারা ভাবেন শিশুরা এসব বুঝবে না। তাদের শুধু লেখাপড়াতে মনোযোগী হতে হবে।
ওপরের সব কটি ধারণাই সম্পূর্ণ ভুুল। অনেকের ক্ষেত্রেই শেষ বয়সে গিয়ে ভালো কাজ করা আর হয়ে ওঠে না। সাংসারিক দায়িত্ব-কর্তব্যের চাকা চক্রাকারে চলতে থাকে। ধীরে ধীরে শরীরের শক্তি কমতে থাকে, কমে মনের জোরও। শুরু হয় ডাক্তার-বদ্যির পেছনে ছুটোছুটি।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র শ্রীলংকা এবং ইন্দোনেশিয়া স্বেচ্ছাসেবায় অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। সেবামূলক কার্যক্রম নিয়ে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় জরিপ পরিচালনা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ‘চ্যারিটিজ এইড ফাউন্ডেশন’ ওয়ার্ল্ড গিভিং ইনডেক্স (ডব্লিউজিআই)-এর রিপোর্টে ২০০৯-২০১৮ সালের সম্মিলিত হিসেবে বিশ্বের প্রথম ১০টি দানশীল জাতির তালিকায় স্থান পেয়েছে শ্রীলংকা এবং ইন্দোনেশিয়া।
চাই শুধু সদিচ্ছা আর একটু সমন্বয়
শুধু তা-ই নয়, স্বেচ্ছাশ্রমে অংশগ্রহণের দিক দিয়ে শ্রীলংকার স্থান বিশ্বে প্রথম (শতকরা ৪৬ জন) এবং ইন্দোনেশিয়ার স্থান সপ্তম (শতকরা ৪০ জন)। যা প্রমাণ করে দাতা হওয়ার সাথে বিত্ত-বৈভবের কোনো সম্পর্ক নেই। সদিচ্ছা এবং তার বাস্তবায়নই যথেষ্ট।
অর্থাৎ একটু সমন্বয় করে চলতে পারলেই জীবন হয়ে উঠতে পারে অনেক বেশি অর্থবহ। তার মানে সেবামূলক বা ভালো কাজের জন্যে দিন-ক্ষণ-মাসের অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। শ্রেণি, পেশা, আর্থিক অবস্থা নির্বিশেষে প্রায় সব মানুষই যে-কোনো মুহূর্তে ভালো কাজ শুরু করতে পারেন।
শৈশব থেকে শুরু করতে পারলে তো আরো ভালো। অবশ্য এজন্যে পারিবারিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ জরুরি। মা-বাবাকে ভালো কাজ করতে হবে এবং সন্তানদের শেখাতে হবে। উৎসাহ দিতে হবে।
উত্তর আমেরিকায় শিশুরা যখন প্রি-স্কুলে যায়, তখন থেকেই বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবায় সংযুক্ত হওয়া তাদের লেসন-প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত। ভলান্টারি কাজের সাথে যুক্ত থাকাটা হাই স্কুল বা কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিশেষ যোগ্যতা বলে বিবেচিত হয়। মা-বাবাও সন্তানদের শিশু বয়স থেকে বিভিন্ন কমিউনিটি কার্যক্রমে নিয়ে যান। কর্মজীবনে প্রবেশের সময়েও এই ব্যাপারটি বিশেষ গুরুত্ব পায়। শৈশবে কচি মনে যে বীজ রোপিত হয়, তা পত্রপুষ্পে বিকশিত হতে থাকে সারা জীবন ধরেই।
দেরি না করে এখনই শুরু করুন। কাজে পরিণত না করে মনে পুষে রাখা সদিচ্ছার তেমন কোনো মূল্য নেই। তার চেয়ে ছোট্ট একটা ভালো কাজ অনেক বেশি আনন্দের, পুণ্যের তো অবশ্যই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।