যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। শুল্ক নিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের মধ্যে এবার তিনি যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য সম্পর্ককে আখ্যা দিলেন ‘একতরফা বিপর্যয়’ হিসেবে।
চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তির্যক বার্তা দেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক বহু দশক ধরেই একতরফা। তার দাবি, ভারত যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণে পণ্য রপ্তানি করে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বাজারে প্রায় কোনো পণ্য বিক্রি করতে পারে না। তিনি অভিযোগ করেন, ভারতের আরোপিত শুল্ক বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের জন্য মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ স্যোশাল’-এ পোস্ট দিয়ে তিনি লেখেন, ‘কম মানুষই বোঝে যে ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য খুব সীমিত। কিন্তু তারা আমাদের কাছ থেকে প্রচুর ব্যবসা নেয়।
এখন পর্যন্ত এ সম্পর্ক পুরোপুরি একতরফা। বহু দশক ধরে তা এমনই আছে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘ভারত এত বেশি শুল্ক আরোপ করেছে যে আমরা সেখানে পণ্য বিক্রি করতে পারি না। এটি সম্পূর্ণ একতরফা বিপর্যয়।’
রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল তেল ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানির বিষয়েও ভারতের সমালোচনা করেন ট্রাম্প। তিনি স্পষ্ট করে দেন, ভারতের ওপর আরোপিত শাস্তিমূলক শুল্ক প্রত্যাহারের কোনো পরিকল্পনা তার নেই। ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ভারত তাদের বেশির ভাগ তেল ও সামরিক সরঞ্জাম রাশিয়া থেকে কিনে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনে খুব সামান্য। তারা এখন শুল্ক কমিয়ে শূন্য করার প্রস্তাব দিচ্ছে, কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। বহু বছর আগেই তা করা উচিত ছিল।’
গত ৬ আগস্ট রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার কারণে শাস্তিস্বরূপ ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ বিদ্যমান শুল্কের সঙ্গে আরও ২৫ শতাংশ জরিমানা আরোপ করেন। ফলে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়, যা ব্রাজিল ছাড়া অন্য সব দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ।
এই পদক্ষেপের জবাবে চীনের তিয়ানজিনে এসসিও সম্মেলনে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রদর্শন করে ভারত। সম্মেলনের ফাঁকে তিন দেশের নেতারা বৈঠকে বসেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক ও ভূরাজনৈতিক চাপে সৃষ্ট সংকট নিয়ে আলোচনা করেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সম্পর্কই অস্বস্তিকর। ইউক্রেন যুদ্ধ, শুল্কবিষয়ক বিরোধ এবং আঞ্চলিক রাজনীতির চাপের মধ্যে তিয়ানজিনে তিন নেতার একসঙ্গে উপস্থিতি নতুন আঞ্চলিক সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের ভারতের উদ্দেশে দেওয়া ‘সময় শেষ’ বার্তা দক্ষিণ এশিয়া ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
সূত্র: সিএনবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।