মিজানুর রহমান রিয়াদ : নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় মেঘনা নদী ঘিরে ছোট-বড় অন্তত ৩০টি চর জেগে উঠেছে। গত কয়েক বছরে নতুন করে জেগে ওঠা এসব চর নিয়ে মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। এলাকাবাসীর ধারণা, চরগুলোকে উৎপাদনমুখী করে তুলতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সরেজমিন দেখা গেছে, নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ড থেকে চেয়ারম্যান ঘাট হয়ে উত্তাল মেঘনায় ২১ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় দক্ষিণের হাতিয়ায়। একসময় দক্ষিণ দিকে এ হাতিয়াই ছিল জেলার শেষ সীমানা। কিন্তু বর্তমানে বরং হাতিয়া থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে যেতে যেতে চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ নতুন ভূমি। যার কয়েকটিতে ইতিমধ্যে বসতিও গড়ে উঠেছে।
নীলক্ষ্মী, সাগরদি, হরণী, চানন্দী, সুখচর ও নলচিরা ইউনিয়ন নিয়ে হাতিয়া উপজেলা প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৯০ সালের দিকে খরস্রোতা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছিল এসব ইউনিয়নের বেশির ভাগ অংশসহ বহু জনপদ। তবে যে পরিমাণ ভূমি বিলীন হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভূমি ফিরিয়ে দিয়েছে মেঘনা। বর্তমানে জেগে ওঠা এসব চরে হাজার হাজার একর জমি এখন দৃশ্যমান।
বন বিভাগের তথ্যমতে, নতুন করে জেগে ওঠা চরগুলোর মধ্যে চরঘাসিয়ার আয়তন ৫ হাজার ১ একর, ঢালচর ৪ হাজার, চর আতাউর ৫ হাজার ৬৮৩, চর মোহাম্মদ আলী ১ হাজার ১৭১, দমারচর ৬ হাজার ৩৬০, চর আয়েশা ৫ হাজার ২১৩, চর গাঙ্গুরিয়া ১০ হাজার ২, চর নুরুল ইসলাম ১০ হাজার ৩, চর প্রিয়া ২ হাজার ৯৯৯, চর ওছখালী ৭ হাজার ২, চর ইউনুস ৩ হাজার ৭০০, নতুন চর ইউনুস ৭০০, চরকমলা ১৩ হাজার ৩৩৯, চর ওসমান ৫ হাজার ৫০০, চর মুয়িদ ৩ হাজার ৩০০, চর কবিরা ২ হাজার, চর কালাম ৮ হাজার ৭৮৫, খাজারচর ৪ হাজার ৫০০, চর রৌশন ৪ হাজার ৫০০ ও চর জোহান ৫ হাজার ৭০০ একর। এর মধ্যে প্রায় সবগুলো চরের ৪৫ হাজার একর জমি উদ্যানের আওতায় আনা হয়েছে।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, ইতিমধ্যে বসতি গড়ে উঠেছে চর ঘাসিয়া, ঢালচর, চরআতউরসহ কয়েকটি চরে। চর মোহাম্মদ আলী, দমারচর, চর জোনাক, চর গাঙ্গুরিয়া, চর নুরুল ইসলাম, চর প্রিয়া, চর ওছখালীসহ কয়েকটি চরে ধান চাষের পাশাপাশি রয়েছে গরু, মহিষ ও ভেড়ার বাতান।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে চরগুলো কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেলে নৌকা ও গাছে অবস্থান নিয়ে মানুষ রক্ষা পেলেও প্রাণহানি হয় নিরীহ পশুর। জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় একাধিকবার ধান চাষ করেও কৃষকদের পক্ষে মাত্র একবার ফলন ঘরে তোলা সম্ভব হয়েছে। এরপরও প্রতিবছর কয়েক লাখ টাকার কৃষিপণ্য উৎপাদন হয় বিচ্ছিন্ন এসব চরে। তবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে চরগুলো কৃষির আওতায় আনা হলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
তিন যুগ ধরে হাতিয়ার অনেক পরিবর্তন দেখা হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. তোফায়েল হোসেন বলেন, হাতিয়ার চারপাশে প্রাকৃতিকভাবে যেভাবে ভূমি জেগে উঠছে, আগামী ১৫-২০ বছর পর চরগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি যুক্ত হয়ে বড় এলাকা হয়ে উঠবে। সরকারিভাবে এসব চরে বাঁধ দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হলে কৃষি, শিল্প কারখানাসহ অনেক কিছু করা সম্ভব। এ ছাড়া নদীভাঙা ও ভূমিহীন মানুষগুলোকে পুনর্বাসন করা যাবে এসব চরে। চরগুলোকে উৎপাদনমুখী করে গড়ে তুলতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী তিনি।
হাতিয়ার সদ্য সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কায়সার খসরু বলেন, জেগে ওঠা চরগুলোর সার্বিক উন্নয়নে ইতিমধ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প কাজ শুরু করেছে। ক্রমান্বয়ে এসব চরের মানুষগুলোকে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস বলেন, ‘হাতিয়ার চারপাশে জেগে ওঠা নতুন চরগুলোতে ধান, বাদাম, সবজিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন হচ্ছে। বিস্তীর্ণ চরে অসংখ্য গরু-মহিষ পালন করা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সরকারি অন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ সূত্র : আজকের পত্রিকা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।