মো. মাজহারুল পারভেজ : জয়নুল আবেদীন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি করেন স্থাপত্য অধিদপ্তরে। যে বেতন পান, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলার কথা; কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির চালককে মাসে যে টাকা বেতন দেন, সে পরিমাণ টাকা তিনি নিজে বেতনও পান না। তার পরও এই চাকরি করেই গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। একাধিক গাড়ি-বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ রয়েছে অনেক সম্পদ। ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাসেম উদ্দিনের ছেলে তিনি।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৭ বছরের চাকরিজীবনে তার রয়েছে একাধিক প্লট, ফ্ল্যাট, পাঁচতলা বাড়িসহ নামে-বেনামে প্রচুর সম্পদ। চড়েন ৪৮ লাখ টাকা দামের টয়োটা প্রিমিও গাড়িতে। ওই গাড়ির চালককে মাসে বেতন দেন ২২ হাজার টাকা। ঢাকায় নিজের নামে তিনটি ও স্ত্রীর নামে দুটিসহ মোট পাঁচটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের পাশে রয়েছে তার পাঁচতলা বাড়ি। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার ডাকবাংলোর পাশে আছে কয়েকটি প্লট ও ফসলি জমি। স্ত্রী শাহানা পারভীনের নামে রয়েছে দুটি প্রাইভেটকার। একটি এলিয়ন ও আরেকটি নিউ মডেলের প্রিমিও।
অভিযোগ করা রয়েছে, নকশা অনুমোদন থেকে শুরু করে, টেন্ডার, কেনাকাটা সবকিছুতেই হস্তক্ষেপ থাকে তার। আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে দুদকসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে একাধিক অভিযোগ হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার নামে-বেনামে যেসব সম্পত্তি রয়েছে এর মধ্যে রাজধানীর আদাবর এলাকায় বেশি।
জানতে চাইলে জয়নুল আবেদীন বলেন, আমি সব সম্পদ বৈধভাবে উপার্জন করেছি। চাকরির পাশাপাশি ব্রোকারি করেছি। জমি কেনাবেচার কাজ করে এসব উপার্জন করেছি। তা ছাড়া আমার স্ত্রী তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। শ্বশুড়বাড়ি থেকেও অনেক সম্পদ পেয়েছি। একটা মহল আমাকে বেকায়দায় ফেলতে এসব কথা রটাচ্ছে; কিন্তু আমি এসবের তোয়াক্কা করি না। এর আগেও আমাকে দুদক ডেকেছিল। মেট্রোপলিটন পুলিশও ডেকেছে। সরকারি চাকরি করলে কি পাশাপাশি অন্য কিছু আর করা যাবে না? আমি নিয়মিত আয়কর দিই। আয়কর ফাইলে সম্পদের সব বিররণ উল্লেখ করা আছে।
তার এক সহকর্মী জানান, অধিদপ্তরের বড় কর্তাদের সঙ্গে জয়নুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্কের ফলেই নিয়মবহির্ভূত অনেক কাজ সে করে। এই সুবাদে বড় হাউজিং কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তার সখ্য তৈরি হয়েছে। বড় বড় কোম্পানির প্রাথমিক স্থাপত্য নকশা সে চুক্তির মাধ্যমে অনুমোদন করিয়ে দেয়।
জানা গেছে, স্থাপত্য অধিদপ্তরে সাঁটমুদ্রাক্ষরিক পদে যোগদানের পরই জয়নুল জড়িয়ে পড়েন নানা
অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে। সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটরের পাশাপাশি স্থাপত্য অধিদপ্তরের সার্কেল-৫, বিভাগ ১৫-এর নির্বাহী স্থপতি নুসরাত জাহানের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। দায়িত্ব পালন করছেন ৪৩/১৩/বি, শ্যামলী হাউজিং, রোড-৬, শেখেরটেক, আদাবর বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কমিটির সভাপতি হিসেবেও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থাপত্য অধিদপ্তর সার্কেল-৫-এর তত্ত্বাবধায়ক স্থপতি বিশ্বজিৎ বড়ুয়া বলেন, এত ছোট চাকরি করে এত বিশাল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যদিও আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে এ নিয়ে কোনো অভিযোগও আসেনি। এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গেই চাকরি করছেন।
এসব বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একজন সরকারি চাকরিজীবী তার চাকরির বাইরে কিছু করতে চাইলে তাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিয়ে কিছু করলে তা বেআইনি। আইন অমান্য করে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ অর্জন করে থাকলে তদন্তের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি দুর্নীতি দমন আইনে বিচার করতে হবে। যদি বিচার না করা যায়, তাহলে সমাজে এ ধরনের অপরাধীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে। সূত্র : কালবেলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।