সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে বিভিন্ন শাক-সবজি পাইকারি বাজারের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। বিশেষ করে রমজান উপলক্ষ্যে শসা, বেগুন, করলা, লেবু, কাঁচা মরিচের দাম খুচরা বাজারে যেন কিছুতেই কমছে না। কৃষকরা এ মৌসুমের সবজি আড়তে এনে যে দামে বিক্রি করছে খুচরা বাজারে সেই সবজির দাম দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি।
পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের এ ব্যবধানের জন্য পরিবহন ব্যয়, দোকান ভাড়াসহ আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন কারণকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। জেলার সিংগাইর উপজেলায় সবজির আবাদ বেশি হলেও সেখানকার অধিকাংশ সবজি পাইকারদের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানো হয়। এছাড়া মানিকগঞ্জে কাঁচা পণ্যের পাইকারি বাজারের মধ্যে জাগীর আড়ৎ ও সাটুরিয়ার কামতার পল্লীহাট বিখ্যাত।
জাগীর আড়ৎ ও পল্লীহাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি শসা ১৮-২২ টাকা, বেগুন ৩৫-৪০ টাকা, ঢেড়স ১৮-২২ টাকা, করলা ৪৫-৫০ টাকা, ঝিঙে ৪৫-৫০ টাকা, ধুন্দল ৪৫-৫০ টাকা, বটবটি ৪০-৪৫ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া জেলার ঝিটকা ও বরংগাইল হটে কাঁচামরিচ ৪০-৪৫ টাকা ও পেঁয়াজের মণ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জেলা শহরের বিভিন্ন খুচরা বাজারে সেসব পণ্য প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্ররি করতে দেখা গেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি শসা ৪০ টাকা, বেগুন ৮০-১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেড়স ৫০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, ঝিঙে ৮০-৯০ টাকা, ধুন্দল ৮০-৯০ টাকা, পটল-৬০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে সবজির দাম কমলেও পাইকারি বাজারের তুলনায় দাম এখনো প্রায় দ্বিগুণ। তবে সবজির দাম বাড়লেও ৩০ টাকায় নেমেছে পেঁয়াজ। খুচরা পর্যায়ে গত সপ্তাহে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মুড়িকাটা পেঁয়াজের কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকায়।
সাটুরিয়ার জান্না এলাকার সবজি চাষী আবুল কাশেম বলেন, কামতা আড়তে ১০৫ কেজি ঢেড়স এনেছিলাম। ২২ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আব্দুর রহমান নামের আরেক কৃষক জানান, পাইকারি বাজারে সকজির দাম অনেক কমে গেছে। প্রতি কেজি ২০ টাকা দরে প্রায় ৩ মণ শসা বিক্রি করেছি। গত সপ্তাহে শসার দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি।
একই উপজেলার হরগজ এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী তোতা মিয়া বলেন, আড়ৎ থেকে সবজি কিনে অল্প কিছু লাভে ঢাকার কামার পাড়া ও সুইসগেট এলাকায় বিক্রি করি। তবে সেখানকার খুচরা বিক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে একটু বেশি লাভে বিক্রি করেন।
পাইকারি বাজার থেকে কাঁচামাল কিনে ঢাকায় পাঠান আব্দুল হাকিম নামের আরেক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, কাঁচামালের ব্যবসাতয় অনেক ঝুঁকি রয়েছে। শ্রমিক খরচ, বস্তা, গাড়ি ভাড়াদিয়ে অনেক খরচ। অনেক সময় কাঁচামাল পঁচেও যায়। তখন তো লোকসান হয়। কেউ তো ক্ষতিপূরণ দেয় না। আমরা ন্যায্য দামে কৃষকের কাছ থেকে সবজি কিনে ঢাকায় পাঠাই, যা লাভ হয় তা দিয়ে সংসার চালাই।
ধামরাই থেকে সাটুরিয়ার কামতা আড়তে সবজি কিনতে আসা খুচরা ব্যবসাী আব্দুল হাকিম বলেন, শসা, ঢেড়সসহ অন্যান্য সবজি কিনতে এসেছি। যাওয়া-আসা বাবদ আরো ৫-৬শ’ টাকা খরচ হয়। এখানে কম দামে সবজি কিনে একটু পর্তা পাওয়া যায়।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড কাঁচাবাজেরর সবজি বিক্রেতা কাজল হোসেন বলেন, কৃষকেরা আমাদের কাছে সবজি সরাসরি নিয়ে আসে না। পাইকারেরা তাঁদের মালামাল সরবরাহ করেন। এছাড়া আড়তে কমিশন, পরিবহন খরচসহ বিভিন্ন খরচ রয়েছে। সব তো আর বিক্রি করা যায়না, অনেক কাঁচামাল পঁচেও যায়। সেসব বিষয় হিসেব করে কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা লাভে বিক্রি করি।
জহিরুল খন্দকার নামের এক সবজি ক্রেতা বলেন, প্রতিবার রমজান এলেই কোনো কারণ ছাড়াই সবজির দাম বেড়ে যায়। বাজারে প্রচুর পরিমাণে সবজি আছে, অথচ চড়া দাম। কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বিক্রেতারা খেয়াল খুশি মতো দাম বাড়াচ্ছে। এতে ক্রেতাদের অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। রমজানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় কাঁচা মরিচ, শসা, লেবু ও বেগুনের দাম বেশি বেড়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আসাদুজ্জামান রুমেল বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন বাজারে পর্যবেক্ষণ করছি এবং অভিযান শুরু করেছি। বাজারে বিভিন্ন পন্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে আমাদের অভিযান এবং মনিটরিং অব্যাহত থাকবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।