জুমবাংলা ডেস্ক : যানবাহনের বিমা ফের বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ‘সড়ক পরিবহন (সংশোধন) আইন, ২০২৪’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
বুধবার (১৩ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ধারা ১০৯ অনুযায়ী, তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা বাধ্যতামূলক ছিল এবং এর অধীনে ১৫৫ ধারায় দণ্ডের বিধানও ছিল। তবে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-তে তৃতীয়পক্ষের বিমা তুলে দেওয়া হয়।
একই সঙ্গে যানবাহনের বিমা ছেড়ে দেওয়া হয় মালিকের ইচ্ছার ওপর। অর্থাৎ, একজন ইচ্ছা করলে তার যানবাহনের বিমা করতে পারেন, আবার না করলেও কোনো সমস্যা নেই।
এ বিষয়ে ২০২০ সালের অক্টোবরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এর পর ওই বছরের ডিসেম্বরে তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা তুলে দেয় বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
এর পর থেকেই মূলত মালিকরা পরিবহনের বিমা করা প্রায় বন্ধ করে দেন। বর্তমানে যেসব পরিবহন চলাচল করছে তার সিংহভাগেরই কোনো বিমা নেই। বিশেষ করে বিমা ছাড়াই চলাচল করছে মোটরসাইকেল।
তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা তুলে দেওয়ার পর যানবাহনের বিমা বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান বিমা ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তবে কম্প্রিহেনসিভ ইন্স্যুরেন্সে বাধ্যতামূলক করার সুযোগ না থাকায় বিকল্প পথ খুঁজতে থাকেন বিমা সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে বিমা মালিকদের অংশগ্রহণে একাধিক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়।
সেখানে তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমার আদলে নতুন একটি বিমা প্রোডাক্ট চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে এখনো সেই বিমা প্রোডাক্ট চূড়ান্ত হয়নি। এর মধ্যেই ‘সড়ক পরিবহন (সংশোধন) আইন, ২০২৪’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিলো মন্ত্রিসভা।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, মোটরযান মালিককে বিমা করতে হবে বলে একটি ধারা যোগ করা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী মোটরযান মালিককে যথা নিয়মে বিমা করতে হবে। বিমা না করলে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
১৯৮৩ এর ধারা ১০৯ অনুযায়ী তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বিমা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-তে তৃতীয়পক্ষের বিমা তুলে দেওয়া হয় এবং যানবাহনের বিমার বিষয়টি মালিকের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন তাহলে মালিকরা যানবাহনের কোন ধরনের বিমা করবেন?- সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তার কোনো উত্তর দেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
এদিকে যানবাহনের বিমা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি সড়ক পরিবহন আইনে আরও কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, ১২টি ধারায় বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি কমানো হয়েছে। বেশিরভাগই আর্থিক জরিমানার পরিমাণ কমানো হয়েছে। আগে তিনটি ধারায় অপরাধ অজামিনযোগ্য রাখা হলেও সেখানে এখন একটি ধারা অজামিনযোগ্য রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কারিগরি নির্দেশ না মানলে এতদিন তিন বছর জেল দেওয়ার বিধান ছিল। এই অপরাধের সাজা আগের মতো রাখা হলেও এটিকে অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বা ওভারলোড করে গাড়ি চালানোর পর দুর্ঘটনা হলে সেটিকে অজামিনযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। এখন শুধুমাত্র দুর্ঘটনায় মারা গেলে বা গুরুতর আহত হলে তা অজামিনযোগ্য অপরাধ হবে।’
২০১৮ সালে সড়ক পরিবহন আইন করা হয় জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর নেতৃত্বে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল এই আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আইন সংশোধন করা হচ্ছে।’
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত সংক্রান্ত অপরাধ করলে এতদিন ২ বছর জেল ও ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান ছিল, সেটিকে কমিয়ে ২ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা করা হচ্ছে। লাইসেন্স বাতিলের পরেও যানবাহন চালালে বর্তমান আইনে ৩ মাস কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এখন তা কমিয়ে ৩ মাস জেল ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, ‘লাইসেন্স ছাড়া কন্ডাক্টরের দায়িত্ব পালন করলে এক মাস কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানার সাজা বহাল রাখা হয়েছে। এই ধারায় এখন কন্ডাক্টরের সঙ্গে সুপারভাইজর শব্দটি যোগ করা হয়েছে। ভাড়ার তালিকা না দেখালে বা বেশি ভাড়া নিলে এতদিন এক মাস জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। দুটো অপরাধ একসঙ্গে করলে এতদিন এই শাস্তি দেওয়া হতো। এখন ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন না করলে বা বেশি ভাড়া দাবি করলে এই সাজা দেওয়া হবে।’
মিটার টেম্পারিং করলে ৬ মাসের জেল, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতো। এখন এই অপরাধের জন্য তিন মাসের কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে, সঙ্গে এক পয়েন্ট কাটা যাবে- জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত হারের থেকে টার্মিনাল চার্জ বেশি নিলে তা চাঁদাবাজি হিসেবে আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমান আইন অনুযায়ী ট্রাফিক সাইন ও সংকেত না মানলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। এখন জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে ২ হাজার টাকা করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত ওজন বহন করলে ৩ বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হতো। এখন সেটিকে বদলে এক বছর জেল, এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। এর সঙ্গে চালকের এক পয়েন্ট কাটা যাবে। পরিবেশ দূষণকারী মোটরযান চালালে এতদিন ৩ মাস জেল ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হতো। এটিকে কমিয়ে এক মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।’
ইফতার পার্টি না করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করালে বর্তমান আইনে ৫ হাজার টাকা জরিমানার সঙ্গে চালকের এক পয়েন্ট কাটা হতো। এটিকে বদলে শুধু এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। কী অবস্থায়, কীভাবে গাড়ি চালাতে হবে সেই নির্দেশনা অমান্য করলে এতদিন ৩ মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। সেটিকে বদলে এক মাস জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।