জুমবাংলা ডেস্ক : ভেনামি চিংড়ির পোনা ছাড়ার ৮০তম দিনে একেকটি চিংড়ি গড়ে ৩০ থেকে ৩২ গ্রাম ওজন হয়। যা ৮০ দিনেই বিক্রি করা সম্ভব। আর গলদা বা বাগদা চিংড়ি বিক্রিযোগ্য হতে ১২০ দিন সময় লাগে। অন্যান্য চিংড়ির চেয়ে ভেনামি চিংড়ি চাষে খরচ প্রায় অর্ধেক। এমন পরিস্থিতিতে গত দুই বছর ধরে পরীক্ষামূলক চাষের অনুমতি মিলে। এবার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দিয়েছে সরকার।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দিয়ে মৎস্য বিভাগের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বুধবার (২৯ মার্চ)। একইসঙ্গে ভেনামি চিংড়ির চাষের জন্য ‘বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভিত্তিতে চিংড়ি চাষ নির্দেশিকা’ও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষে সফল চাষি ও খুলনার চিংড়ি রফতানিকারকরা দীর্ঘদিন ধরে এর বাণিজ্যিক চাষের দাবি করে আসছিলেন। অবশেষে সেই চাওয়া পূরণ হওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।
চাষিরা বলেন, ভেনামি চিংড়ি রোগ সহনীয় এবং বৃদ্ধিও সন্তোষজনক। এই চিংড়ি চাষে খরচ অনেক কম লাগে। ফলে চাষিরা অনেক লাভবান হবেন। বাগদার পেছনে যেখানে ১০০ টাকা খরচ হয়, সেখানে ভেনামি চিংড়ি চাষে খরচ হয় ৫০ টাকা।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি এস হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘সৌদি আরব, ইউএই ও কাতারের মতো অঞ্চলে এই চিংড়ি চাষ হচ্ছে। আমাদেরও এটির বাণিজ্যিকভাবে চাষের অনুমোদন হওয়ায় এখন চাষ বিস্তার লাভ করবে। চাষিরা সফলতা অর্জন করবেন।’
খুলনা বিভাগের মৎস্য অধিদফতরের উপপরিচালক মো. তোফাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই চিংড়ি নিয়ে বাংলাদেশ ফিশারি ইনস্টিটিউট গবেষণা করছে। তারা পর্যবেক্ষণ করেছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে এটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চলতি বছর পরীক্ষামূলক ভেনামি চাষের জন্য ১২টি প্রতিষ্ঠান অনুমতি পেয়েছিল।’
ভেনামি চিংড়ি পরীক্ষামূলক চাষের অনুমতি পাওয়া খুলনা অঞ্চলের ১২টি প্রতিষ্ঠানের ছয়টি খুলনার, সাতক্ষীরার একটি ও যশোরের একটি রয়েছে। অপর চারটি প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো সংস্কারের পর ভেনামি চাষে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকরা বেশ কয়েক বছর ধরে বেশি লাভজনক ভেনামি জাতের চিংড়ি চাষের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি থাইল্যান্ড থেকে ভেনামি প্রজাতির চিংড়ির পোনা এনে খুলনা অঞ্চলের আটটি প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষামূলক চাষের অনুমতি দিয়েছিল মৎস্য অধিদফতর। ২০২২ সালের ৯ মে এমইউসি ফুডস থাইল্যান্ড থেকে ১২ লাখ ভেনামি জাতের পোনা এনে পাইকগাছার লবণ পানি গবেষণা কেন্দ্রের পুকুরে চাষ শুরু করে।
অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, খুলনার বটিয়াঘাটার ফাহিম সি ফুডস, পাইকগাছার গ্রোটেক অ্যাকুয়াকালচার লিমিটেড, কয়রার আয়ান শ্রিম্প কালচার, ডুমুরিয়ার ইএফজি একোয়া ফার্মিং, বটিয়াঘাটার জেবিএস ফুড প্রডাক্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও সাতক্ষীরার শ্যামনগরের রেডিয়েন্ট শ্রিম্প কালচার-১।
চিংড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, গলদা ও বাগদা চিংড়ির চাষ বছরে একবারের (চাষের সময় মারা গেলে দুবার) বেশি করা যায় না। আর ভেনামি চাষ করা যায় বছরে তিনবার। সাধারণ পুকুরে প্রতি হেক্টরে ৩০০-৪০০ কেজি বাগদা চিংড়ি উৎপাদন করা যায়। অন্যদিকে একই পরিমাণ জমিতে সাত-আট হাজার কেজি ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব। ভারতে ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পাঁচ বছর সময় লেগেছিল। বাংলাদেশ মৎস্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) অধীনে ২০২১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে খুলনার পাইকগাছায় ভেনামি চিংড়ি চাষ শুরু হয়। সে বছর দুটি প্রতিষ্ঠান চাষ করে সফলতা পায়। এরপর ২০২২ সালে পর্যায়ক্রমে ১২টি প্রতিষ্ঠান অনুমতি পেয়ে ভেনামি চিংড়ি চাষ করে সফলতার মুখ দেখছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।