বিশেষ প্রতিনিধি : ঢাকা–১৮ আসনের রাজনীতিতে এখন একটাই প্রশ্ন—শেষ পর্যন্ত এই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে থাকছেন তো এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, নাকি জোট রাজনীতির বাস্তবতায় তার জায়গা নিচ্ছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না?

এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে উত্তরা, আজমপুর, দক্ষিণখান, তুরাগ থেকে শুরু করে পুরো ঢাকা–১৮ আসনের চা-স্টল, রাজনৈতিক আড্ডা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আর সেই ভাবনার কেন্দ্রে রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালতের সাম্প্রতিক এক আদেশ, যা পুরো রাজনৈতিক সমীকরণ ওলট-পালট করে দিয়েছে।
চেম্বার আদালতের আদেশে নতুন প্রাণ মান্নার রাজনীতিতে
ঋণখেলাপির তালিকায় নাম থাকার কারণে এতদিন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাহমুদুর রহমান মান্নার অংশগ্রহণ ছিল অনিশ্চিত। এমনকি ২৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তার রিট খারিজ করায় তিনি কার্যত নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হচ্ছিলেন।
কিন্তু সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. রেজাউল হকের নেতৃত্বাধীন চেম্বার আদালত সেই তালিকা আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। ফলে আইনগতভাবে মান্নার আর নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো বাধা থাকলো না। তার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী আহসানুল করিম।
এই আদেশের পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় ওঠে—মান্না এবার কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন?
বগুড়া–২ না ঢাকা–১৮? শুরু জল্পনা
ঋণখেলাপি মামলার অনিশ্চয়তার কারণে বিএনপি–জোট আগেই বগুড়া–২ আসনে নাগরিক ঐক্যের পরিবর্তে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেয় শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ মীর শাহে আলমকে।
এই প্রেক্ষাপটে গতকালই মাহমুদুর রহমান মান্না ঢাকা–১৮ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে রাখেন। তখন বিষয়টি ছিল অনেকটাই “প্রস্তুতি মাত্র”।
কিন্তু আজ চেম্বার আদালতের আদেশে সব বাধা কাটায় সেই প্রস্তুতি এখন বাস্তব সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছে।
ঢাকা–১৮: এস এম জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন কতটা নিরাপদ?
৪ ডিসেম্বর বিএনপির দ্বিতীয় দফা মনোনয়নে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকা–১৮ আসনে মনোনয়ন পান। ঘোষণার পরপরই এলাকায় উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও খুব দ্রুতই পরিস্থিতি বদলে যায়।
উত্তরার প্রভাবশালী অন্তত পাঁচ নেতা প্রকাশ্যেই জাহাঙ্গীরের বিরোধিতায় অবস্থান নেন। গড়ে ওঠে “ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম” নামে আলাদা মোর্চা। ধারাবাহিক সভা, শোডাউন, ফেসবুক স্ট্যাটাস ও সর্বশেষ মশাল মিছিল—সব মিলিয়ে ঢাকা–১৮ আসনে বিএনপির রাজনীতি কার্যত দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়ে।
ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে মশাল মিছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। দলের ভেতরের এই প্রকাশ্য কোন্দল বিএনপির হাইকমান্ডকেও চিন্তিত করে তোলে।
জোট রাজনীতির বাস্তবতা ও মান্নার সম্ভাবনা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি যদি এই আসনে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামাল দিতে ব্যর্থ হয়, তবে সেটি নির্বাচনী ফলাফলে বড় ধাক্কা দিতে পারে। সে কারণেই জোটের একজন তুলনামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য, পরিচিত ও অভিজ্ঞ মুখ হিসেবে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে।
মান্না ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, আজ সোমবার রাতেই ঢাকা–১৮ আসনে নির্বাচন করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারাও।
তাহলে কি জোটের বলি হচ্ছেন এস এম জাহাঙ্গীর?
এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এখনো কেউ দিচ্ছেন না। তবে বাস্তবতা হলো—
মাঠে জাহাঙ্গীরকে নিয়ে ব্যাপক বিভক্তি
প্রকাশ্য বিক্ষোভ ও নেতৃত্ব সংকট
জোট রাজনীতির চাপ
আর অন্যদিকে আদালতের আদেশে মুক্ত মান্না
সব মিলিয়ে এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের মনোনয়ন এখন গুরুতর ঝুঁকির মুখে—এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও ভোটাররা।
শেষ সিদ্ধান্ত আজ রাতেই?
মান্না ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, আজ রাতের মধ্যেই “শুভ সংবাদ” পাওয়া যেতে পারে। সেই সংবাদ যদি ঢাকা–১৮ আসনে মান্নার প্রার্থিতার ঘোষণা হয়, তবে নিঃসন্দেহে সেটি হবে এই আসনের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় চমক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।


