বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখতে ভিপিএনের (VPN) জনপ্রিয়তা বাড়ছে। দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ইন্টারনেট সেবায় অস্থিরতার মাঝে অনেকেই ভিপিএন ব্যবহার করছেন। সঠিকভাবে একটি ভিপিএন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় জড়িত; যেমন- ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা, গোপনীয়তা এবং প্রয়োজনীয় কনটেন্ট বা সার্বিসে প্রবেশযোগ্যতা।
ভিপিএন কী?
VPN শব্দটার সঙ্গে আমরা প্রায় সবাই কম-বেশি পরিচিত। ভিপিএন এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (Virtual private network)। ভিপিএন ইন্টারনেটের এমন ভার্চুয়াল বা কাল্পনিক প্রাইভেট নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে নিরাপদে তথ্য আদান প্রদান করা হয়। সহজভাবে বললে, VPN একটা কাল্পনিক ‘টানেল’ বা সুড়ঙ্গের মতো।
ইন্টারনেট মূলত পাবলিক নেটওয়ার্ক। পৃথিবীর সবাই এর সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে এটি উন্মুক্ত তথ্য আদান প্রদানের জায়গা। তাই এখানে সরাসরি তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে তথ্যের গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যাবার ঝুঁকি থাকে। এই ঝুঁকি এড়াতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত বা প্রাইভেট নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হওয়ার নিরাপদ পদ্ধতিই হল VPN। এই পদ্ধতিতে ব্যবহারকারী এবং প্রাইভেট নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করার জন্য ইন্টারনেটে একটি কাল্পনিক সুড়ঙ্গ তৈরি হয়।
অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আছে যারা ভিপিএন তৈরি করে। এরমধ্যে কিছু ভিপিএন পেইড বা ব্যবহারের জন্য অর্থ খরচ করতে হয়। আবার কিছু কিছু কোম্পানি তাদের ভিপিএনগুলো বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ দেয়।
কীভাবে একটি ভিপিএন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হয়?
১. একটি নির্ভরযোগ্য ভিপিএন নির্বাচন
একটি ভিপিএন নির্বাচনের আগে সে সম্পর্কে একটু রিসার্চ করে নিন। ভিপিএনটি নির্ভরযোগ্য কি না সেটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করুন।
ভিপিএনের প্রাইভেসি পলিসি ভালোভাবে জেনে নিন। তাদের একটি পরিচ্ছন্ন নো-লগ পলিসি আছে কি না নিশ্চিত হোন। নো-লগ পলিসি থাকলে বুঝতে হবে তারা অনলাইনে আপনার কোনো কার্যক্রমের রেকর্ড রাখছে না। নিরাপত্তা ফিচারগুলো যেমন- শক্তিশালী এনক্রিপশন, কিল সুইচ এবং ডিএনএস লিক প্রটেকশন আছে কি না তা দেখে নিন।
২. ডাউনলোড এবং ইনস্টল
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো অ্যাপ স্টোর থেকে নির্বাচিত ভিপিএনটি ডাউনলোড করুন। তার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন ভিপিএনটি আপনার ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেমের জন্য উপযুক্ত কি না।
৩. সেটআপ এবং কনফিগার
প্রয়োজন হলে ভিপিএনে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। আপনার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড কিংবা অন্য কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবহার করে ভিপিএন অ্যাপ্লিকেশনে লগ ইন করুন।
এরপর সর্বোত্তম নিরাপত্তার জন্য সেটিংস ঠিক করুন। কিল সুইচের মতো বৈশিষ্ট্যগুলি চালু করুন এবং একটি সুরক্ষিত প্রোটোকল নির্বাচন করুন যেমন- ওপেনভিপিএন, আইকেইভি২, ওয়্যারগার্ড ইত্যাদি।
৪. সার্ভারের সাথে সংযোগ করুন
আপনার প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে গোপনীয়তা-বান্ধব কোনো দেশে একটি সার্ভার নির্বাচন করুন। কোনো কনটেন্টের অ্যাক্সেসের জন্য উপযুক্ত দেশটি নির্বাচন করুন।
অনেক ভিপিএনের একটি দ্রুত সংযোগ অপশোন থাকে যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার প্রয়োজনের জন্য সেরা সার্ভার নির্বাচন করে দেয়।
৫. ভিপিএন কানেকশন ভেরিফাই
আপনার আইপি অ্যাড্রেস পরিবর্তন হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করতে whatismyipaddress.com-এর মতো ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন।
একইসঙ্গে ডিএনএস লিক টেস্ট করে নিন। আপনার ডিএনএস রিকোয়েস্ট ভিপিএনের বাইরে ফাঁস হচ্ছে না তা নিশ্চিত করতে dnsleaktest.com এর মতো টুল ব্যবহার করতে পারেন।
৬. নিরাপদ ব্রাউজিং এবং স্ট্রিমিং
কিছু ভিপিএন অতিরিক্ত সুবিধা এবং নিরাপত্তার জন্য ব্রাউজার এক্সটেনশন সুবিধা দেয়। এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।
আপনার ডাটা এনক্রিপ্ট করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে ব্রাউজিং, স্ট্রিমিং বা সংবেদনশীল ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা করার সময় ভিপিএন ব্যবহার করুন।
৭. ডিসকানেক্ট এবং রিকানেক্ট
আপনার কাজ হয়ে গেলে অ্যাপের মাধ্যমে ভিপিএন থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন। তবে অ্যাপ্লিকেশন ফোর্স ক্লোজিং এড়িয়ে চলুন। আবার যখন প্রয়োজন একইভাবে কানেক্ট করে নিন।
৮. সমস্যায় পড়লে
আপনি যদি সংযোগ সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে সার্ভার বা প্রোটোকল পরিবর্তনের চেষ্টা করুন। আর যদি ক্রমাগত সমস্যার সম্মুখীন হন তবে ভিপিএন এর কাস্টমার সাপোর্ট নিন।
বাজার কাঁপাতে শিগ্রই আসছে একেবারে কমমূল্যের ইভি, দাম শুনলে চমকে যাবেন
৯. আরও কিছু টিপস
নিরবচ্ছিন্ন সুরক্ষার জন্য স্টার্টআপে অটমেটিক কানেকশন চালু করুন।
ফ্রি ভিপিএন এড়িয়ে চলুন। ফ্রি ভিপিএনে সাধারণত অল্প কিছু ফিচার ব্যবহার করা যায়। এছাড়া ধীর গতির সমস্যা যেমন থাকে তেমনি গোপনীয়তার সুরক্ষাও পুরোপুরি থাকে না।
আপডেট সুবিধাগুলো পেতে আপনার ভিপিএনটি আপডেট রাখুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।