জুমবাংলা ডেস্ক : আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক ভিসা ও মাস্টারকার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। কৌশলে গ্রাহকের তথ্য হাতিয়ে জাল কার্ড তৈরি করে টাকা উত্তোলন করায় ঝুঁকিতে পড়েছেন ব্যবহারকারীরা। অর্থ হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের একাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে জালিয়াতি রোধে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার কমিয়ে স্থানীয় পেমেন্ট গেটওয়ে ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ (এনপিএসবি) বাংলাদেশকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে জালিয়াতি বন্ধের পাশাপাশি কার্ড কোম্পানিগুলোকে লেনদেনের চার্জ বাবদ বছরে পরিশোধ করা ২০ কোটি টাকার ডলার সাশ্রয় হবে।
ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথের সিসি টিভির ফুটেজ ও লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জালিয়াত চক্র ব্যাংকের বুথে ডিভাইস ও ভিডিও ক্যামেরা স্থাপন করে টাকা জমা ও উত্তোলনের সময় গ্রাহকের কার্ডের তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। এর মাধ্যমে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয় চক্রটি। চক্রটি তৎপর থাকলে ভবিষ্যতে জালিয়াতির পরিমাণ শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভিসা ও মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রনিক পেমেন্ট, কেনাকাটা, এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন, মোবাইল রিচার্জসহ বিভিন্ন কাজ করা যায়। এই কার্ড ব্যবহার করে এমএফএস অ্যাকাউন্টে অ্যাড মানি করা যায়। আর এই সুযোগে কার্ড ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অর্থ হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র। এই ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনায় ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সিআইডি সাইবার ইন্টেলিজেন্স টিম মামলাগুলোর ছায়া তদন্ত করে এবং চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করে প্রতারক চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জালিয়াত চক্রটি যদি এসব কার্ড বিদেশে পাঠিয়ে দেয় তাহলে দেশে যতই ব্যবস্থা নেওয়া হোক বিদেশে বুথ থেকে খুব সহজেই তারা বিদেশি টাকা তুলে নিতে পারবে, যা দেশের ভিতর থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। তাই কখনোই দুশ্চিন্তামুক্ত নয় ভিসা ও মাস্টারকার্ড ব্যবহারকারীরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিষয়টি উদ্বেগের। তবে ব্যবহারকারীদের অধিকতর সতর্ক হতে হবে। এ বিষয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইলেকট্রনিক কার্ড বিশেষজ্ঞ আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরীন বলেন, ভিসা ও মাস্টারকার্ড জালিয়াতি প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে অধিকতর সতর্ক হতে হবে। তাদের মোবাইল ফোনে পাঠানো এসএমএসের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। কোনো লেনদেনের এসএমএস পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে কল সেন্টারকে অবহিত করে কার্ড ব্লক করে দিতে হবে। তবে কার্ডটি বিদেশে চলে গেলে প্রথম লেনদেন কিছুতেই ঠেকানো যাবে না। কিন্তু টাকা উত্তোলনের পরে সেটি ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। এতে গ্রাহকের প্রাথমিক ক্ষতির সম্ভাবনাটি থেকে যায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতিনিয়তই এটিএম বুথের ভিডিও ফুটেজগুলো ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে তদারকি করার কথা। কিন্তু ব্যাংকগুলো যথাযথভাবে পালন করে না। আর এ কারণেই গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয় জালিয়াত চক্র।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ভিসা, মাস্টারকার্ডের অনুমোদন পেতে হলে ব্যাংকগুলোকে ভিসা বা মাস্টারকার্ড থেকে সনদ নিতে হয় টাকার বিনিময়ে। আবার প্রতি বছর এসব সনদ নবায়ন করতে হয়। বাংলাদেশের নিজস্ব পেমেন্ট স্কিম ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) শক্তিশালী না হওয়ায় ট্র্যাডিশনাল পেমেন্ট প্রসেসিংয়ের জন্য ভিসা ও মাস্টারকার্ডের শরণাপন্ন ব্যাংকগুলো। ফলে সনদ নবায়ন ও কার্ডভিত্তিক লেনদেনের চার্জ বাবদ বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছ। ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ শক্তিশালী করা গেলে দেশের টাকা দেশেই রাখা সম্ভব হবে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, আর্থিক লেনদেনের প্রক্রিয়ায় নানা পেমেন্ট সিস্টেম থাকতে পারে। কিন্তু সর্বজনীন মাধ্যম (ইউনিভার্সাল পেমেন্ট গেটওয়ে অ্যাগ্রিগেটর) একটাই হতে পারে। সেটা ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশকেই (এনপিএসবি) হতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে এনপিএসবি সেবা আছে, সেটাকে এখন শক্তিশালী করতে হবে। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।