বিদেশ ভ্রমণ মানেই আনন্দ, অভিজ্ঞতা ও নতুন সংস্কৃতি জানার এক অনন্য সুযোগ। তবে পাসপোর্ট হাতে পেলেই ভিসা মিলবে—এমনটা ভাবলে ভুল করবেন। অধিকাংশ দেশেই ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদনকারীর আর্থিক সামর্থ্য যাচাই করা হয়। তাই ব্যাগ গুছানোর আগে নিশ্চিত হয়ে নিন—আপনার ব্যাংক ব্যালেন্স পর্যাপ্ত কি না।
প্রতিটি দেশের নিজস্ব নীতিমালার ভিত্তিতে পর্যটকদের ন্যূনতম আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে হয়। অনেক সময় এটি নির্ভর করে ভ্রমণের সময়কাল, উদ্দেশ্য ও খরচের উপর। নিচে জনপ্রিয় কিছু দেশের ভিসা পাওয়ার জন্য সাধারণত যে পরিমাণ অর্থ ব্যাংকে থাকতে হয়, তার বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
১. কানাডা (Visitor Visa)
- ন্যূনতম ব্যাংক ব্যালেন্স: CAD 5,000–10,000 (প্রায় ৩–৬ লাখ টাকা)
- প্রসেসিং সময়: ২ থেকে ৪ সপ্তাহ
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- ৩–৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- ট্রাভেল প্ল্যান
- আবাসনের প্রমাণ
- ইনভাইটেশন লেটার (যদি থাকে)
২. অস্ট্রেলিয়া (Visitor Visa)
- ব্যাংক ব্যালেন্স: $5,000–$10,000 (প্রায় ২.৫–৫ লাখ টাকা)
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- ব্যাংক ও বেতন স্লিপ
- আয়কর রিটার্ন
- ট্রাভেল প্ল্যান
- স্পন্সরের তথ্য (যদি থাকে)
৩. জার্মানি (Schengen Visa)
- প্রতিদিনের খরচ ধরা হয়: €100–120 (প্রায় ৯,০০০–১১,০০০ টাকা)
- ১৫ দিনের সফরের জন্য: প্রায় ১.৫–২ লাখ টাকা
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- হোটেল বুকিং
- রিটার্ন টিকিট
- ভ্রমণ বিমা (কমপক্ষে €৩০,০০০ কভারেজ)
৪. স্পেন (Schengen Visa)
- ব্যাংকে থাকতে হবে: দৈনিক €100, মোট অন্তত €900 (প্রায় ৮১,০০০ টাকা)
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- ব্যাংক ও ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্ট
- হোটেল বুকিং
- টিকিট
- চাকরির প্রমাণ
- ট্রাভেল বিমা
৫. ফ্রান্স (Schengen Visa)
- ব্যাংক ব্যালেন্স: দৈনিক €100–120
- ১৫ দিনের সফরের জন্য: প্রায় ১.৫–২ লাখ টাকা
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- ৩ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- চাকরির প্রমাণ
- ইনভাইটেশন (যদি থাকে)
- ভ্রমণ বিমা
৬. শ্রীলঙ্কা (ETA – Electronic Travel Authorization)
- ব্যাংক ব্যালেন্স: $1,000–$2,000 (প্রায় ৮০,০০০–১.৬ লাখ টাকা)
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- ব্যাংক বা ক্রেডিট স্টেটমেন্ট
- হোটেল বুকিং
- রিটার্ন টিকিট
৭. যুক্তরাষ্ট্র (B1/B2 Tourist Visa)
- ব্যাংকে থাকতে হবে: $6,000–$10,000 (প্রায় ৫–৮ লাখ টাকা)
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- বেতন স্লিপ
- আয়কর রিটার্ন
- বিস্তারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা
গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
বিদেশ ভ্রমণের জন্য শুধু টিকিট কাটা বা পাসপোর্ট থাকলেই হবে না, বরং পুরো ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াটি একটি পরিকল্পিত প্রস্তুতির বিষয়। নিচের দিকনির্দেশনাগুলো অনুসরণ করলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়:
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট হালনাগাদ রাখুন: অন্তত ৩–৬ মাসের স্পষ্ট লেনদেন যুক্ত স্টেটমেন্ট জমা দিন।
- বেতন ও আয়কর রিটার্ন যুক্ত করুন: আপনার আয়ের উৎস দেখাতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- ভ্রমণ বিমা সংগ্রহ করুন: ইউরোপের ক্ষেত্রে এটি বাধ্যতামূলক, অন্যান্য দেশেও এটি বাড়তি সুবিধা দেয়।
- হোটেল ও রিটার্ন টিকিট বুকিং রাখুন: এটি ভিসা অফিসারকে আপনার পরিকল্পনার বাস্তবতা বোঝায়।
- ভ্রমণ পরিকল্পনা স্পষ্ট রাখুন: কোথায় যাচ্ছেন, কবে যাচ্ছেন, কোথায় থাকবেন—এসব তথ্য বিস্তারিত উল্লেখ করুন।
আপনার গন্তব্য যেখানেই হোক না কেন, পর্যাপ্ত আর্থিক প্রস্তুতি ছাড়া ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতিটি দেশই তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল অভ্যর্থনার স্বার্থে পর্যটকদের আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করে। তাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য আর্থিক দলিল প্রস্তুত রেখে আবেদন করলেই আপনি পেতে পারেন কাঙ্ক্ষিত সেই ভিসা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।