জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। ভবিষ্যতে জানমালের ক্ষতিসাধন, মব ভায়োলেন্স ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে পারে এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে সেনাসদর।
সোমবার (২৬ মে) ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক (কর্নেল স্টাফ) কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের জনগণের জানমাল এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও স্থাপনার নিরাপত্তা দেওয়াসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনাকে অনুসরণ করে দেশের চরাঞ্চলসহ ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
ভবিষ্যতে জানমালের ক্ষতিসাধন, মব ভায়োলেন্স ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে পারে এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সেনাবাহিনী একতাবদ্ধ হয়ে সর্বদা দেশের জনসাধারণের পাশে থেকে সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে বদ্ধপরিকর।
চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার অভিযান
কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গত ৪০ দিনে সেনাবাহিনী ২৪১টি অবৈধ অস্ত্র ও ৭০৯ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৬১১টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এছাড়াও গত এক মাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ১ হাজার ৯৬৯ জনকে এবং এ পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ২৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
যাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালাল চক্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারী, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গত ২০ মে রাজধানীর ভাষানটেক এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ৪টি বিদেশি পিস্তল, ২৮ রাউন্ড গুলিসহ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিটলু বাবুসহ তার গ্যাং এর ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার ফলে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছে।
মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান
গত ৪০ দিনে যৌথ অভিযানে ৪৮৭ জন মাদক কারবারি এবং আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৪ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য, যেমন ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা, অবৈধ মদ ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে যার মাধ্যমে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছে।
শিল্পাঞ্চল এলাকায় নিরাপত্তা
৫ আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে অদ্যাবধি শিল্পাঞ্চল এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ভেজাল খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় অভিযান
গত এক মাসে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সেনাবাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ভেজাল শিশু খাদ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং বিপণনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এছাড়াও যশোর ও সাতক্ষীরা জেলায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ জেলি মিশ্রিত চিংড়িসহ সিন্ডিকেটের সদস্যদের আটক করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের বিরুদ্ধে এরূপ অভিযান স্থানীয় জনগণের মধ্যে স্বস্তির আস্থা সৃষ্টি করেছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৫৯৬ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, যার মধ্যে ৩৬ জন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঈদুল আজহায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা
ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ঈদের আগে ও পরে মিলে ২ সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
এর অংশ হিসেবে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের গুরত্বপূর্ণ বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে দিন-রাত টহল পরিচালনা, গাড়ির অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট স্থাপনসহ টিকিট কালোবাজারি অথবা অধিক মূল্যে টিকিট বিক্রি রোধ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে যা ঈদুল ফিতরের মতই মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
একইসঙ্গে জনসাধারণকে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোসহ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘনভাবে ঈদ উদযাপনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
কোরবানির পশুর হাটে চাঁদাবাজি ও নিরাপত্তা বিধান
ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাট কেন্দ্র করে চাঁদাবাজ এবং ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়। মূল সড়কের পাশে পশুর হাটের অবস্থান হওয়ায় রাস্তাঘাটে যানজটের সৃষ্টি হয়।
যার ফলে জনসাধারণের মধ্যে দুর্ভোগ ও জানমালের নিরাপত্তার হুমকি সৃষ্টি হয়। সেনাবাহিনী নিয়মিত টহল ও বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে পশু হাটে চাঁদাবাজি ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সচেষ্ট থাকবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও এফডিএমএন ক্যাম্পের নিরাপত্তা
সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করে যাচ্ছে।
এছাড়াও সেনাবাহিনী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলোর সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজে নিয়োজিত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।