জুমবাংলা ডেস্ক : জুমবাংলা ভোক্তা অধিদপ্তরের নতুন পোর্টালে গিয়ে ভোক্তারা নিজেদের সচল মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে প্রোফাইল খুলে সহজেই অভিযোগ ও সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারবেন। প্রশাসনকে ‘জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চালু করেছে নতুন ওয়েব পোর্টাল; যার মাধ্যমে সহজেই অধিদপ্তরের কাছে অভিযোগ ও সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারবেন ভোক্তারা।
বুধবার ‘কনজুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিসিএমএস)’ শীর্ষক এই সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, মোবাইলে অ্যাপ থাকলেই মানুষ যে কোনো জায়গা থেকে এখন অভিযোগ জানাতে পারবেন; অধিদপ্তরও বিষয়টি আগের চেয়ে ভালোভাবে মনিটর করতে পারবে।
সিসিএমএস দুটি অংশে বিভক্ত। একটি অভিযোগ পোর্টাল, অন্যটি প্রশাসনিক প্যানেলে। এর মধ্যে অভিযোগ পোর্টাল (https://dncrp.com/) সবার জন্য উন্মুক্ত।
ভোক্তারা পোর্টালে গিয়ে নিজ নিজ সচল মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে প্রোফাইল খুলে নিজেদের অভিযোগ জানাতে পারবেন।
সফিকুজ্জামান বলেন, “ইদানিং আমরা দেখেছি যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একেকটা ভিডিওর মাধ্যমে আমরা ৪ কোটির বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারছি। এই ভোক্তাদের কাছে যদি সরাসরি যেতে হত, তাহলে তা অনেক কঠিন হত।
“তাই ভাবলাম, একটা অ্যাপ থাকলে মানুষ যে কোনো জায়গা থেকে অভিযোগ করতে পারবে এবং আমরা মনিটরিংটাও ভালোভাবে করতে পারব।”
নতুন এই সেবায় অভিযোগ জানানোর জন্য অডিও, ভিডিও কিংবা যে কোনো ছবি যুক্ত করার সুবিধাও থাকছে।
সিসিএমএস কী?
সিসিএমএস একটি সফটওয়্যারভিত্তিক সেবা, যাতে মোবাইল নম্বর এবং ওটিপির মাধ্যমে ঢুকে অভিযোগ জানানো যাবে। অভিযোগ করার সঙ্গে সঙ্গে ভোক্তা একটি অভিযোগ নম্বর পাবেন।
এ নম্বরের মাধ্যমে ভোক্তা তার অভিযোগের অগ্রগতি জানতে পারবেন। পরে শুনানির জন্য ভোক্তাকে এসএমএস পাঠাবে ভোক্তা অধিদপ্তর।
প্রোফাইল খুলবেন কীভাবে?
নতুন ওয়েব পোর্টালে http://www.dncrp.com/ ঢুকলে ভোক্তারা পোর্টালের ইন্টারফেইস দেখতে পাবেন। এটি দুভাগে বিভক্ত। নতুন অভিযোগ দায়েরের ক্ষেত্রে ভোক্তাকে প্রথমে ‘অভিযোগ দায়ের করুন’ বিভাগটি বেছে নিতে হবে।
এরপর একটি সচল মোবাইল নম্বর সাবমিট করলে ভোক্তার ফোনে ছয় সংখ্যার ওটিপি যাবে। সেই ওটিপি পোর্টালের নির্ধারিত স্থানে দেওয়ার পর পর্যায়ক্রমে নিজের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জন্ম সনদ নম্বর ও পুনরায় মোবাইল নম্বর লিখে প্রোফাইল খুলতে হবে।
তৃতীয় ধাপে ভোক্তাকে তার বাবা-মায়ের নাম, নিজ পেশা, ইমেইল, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা এবং পরিচয়পত্র নম্বর দিতে হবে। এভাবে প্রোফাইল খোলার কাজটি সম্পন্ন করতে হবে।
কীভাবে অভিযোগ জানাবেন?
সরাসরি ওয়েব পোর্টালে অভিযোগ জানাতে হলে ভোক্তাকে প্রথমে অভিযোগের ধরণ নির্ধারণ করতে হবে। এরপর তাকে নির্ধারিত ঘরে প্রতিষ্ঠানের নাম ও অভিযোগের বর্ণনা লিখতে হবে। পাশাপাশি ভোক্তাকে নিজ বিভাগ, জেলা ও অভিযোগ করা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা লিখতে হবে।
ভোক্তার কাছে অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ থাকলে সেসবও সংযুক্ত করার সুযোগ রয়েছে পোর্টালে। পোর্টালের ‘তথ্য প্রমাণ’ বিভাগ সিলেক্ট করে সেখানে ছবি (যেমন- পণ্যের রশিদ), ভিডিও এবং অডিও আপলোড করা যাবে। এতে তার অভিযোগ আরও শক্তিশালী হবে। তবে ভোক্তাকে তথ্য-প্রমাণ আপলোড করতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। শেষ ধাপে অনলাইন ফর্মে তিনি নিজের স্বাক্ষর জমা দেবেন।
অভিযোগ করার পর?
আবেদনটি পুনরায় দেখা এবং সম্পাদনারও সুযোগ রয়েছে। অভিযোগ সম্বলিত আবেদন জমা দিয়ে দিলে ভোক্তা এসএমএসের মাধ্যমে অভিযোগের একটা স্বতন্ত্র ট্র্যাকিং নম্বর পাবেন। ওই নম্বর দিয়ে পরে তিনি পোর্টালের ‘পূর্ববর্তী অভিযোগের অবস্থা যাচাই করুন’ অপশনের মাধ্যমে অভিযোগের অগ্রগতি জানতে পারবেন।
কত রকমের অভিযোগ করা যাবে?
মোট চার ক্যাটাগরিতে অভিযোগ করা যাবে। খাদ্যদ্রব্য, পণ্য, মেডিসিন ও সার্ভিস। নিয়ম অনুযায়ী এই চার ক্যাটাগরি নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তরের।
আর এই চার ক্যাটাগরির বাইরে কারও অভিযোগ থাকলে আগের মত সশরীরে অধিদপ্তরে এসে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
নিষ্পত্তি কতদিনে?
ভোক্তা অভিযোগ জানানোর পর ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করা হবে। এক্ষেত্রে অভিযোগ গ্রহণ হওয়ার পর ভোক্তার কাছে এসএমএস যাবে। তারপর শুনানি হবে। কোথায়, কার কাছে শুনানি পড়েছে সেটি ভোক্তাকে জানানো হবে। আর অভিযোগটি নিষ্পত্তি হবে, নাকি জরিমানা হবে, নাকি পুনরায় শুনানি হবে- সে ব্যাপারেও ভোক্তাকে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে।
অভিযোগ ফি
ভোক্তারা অভিযোগ জানাতে পারবেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। অভিযোগ নিষ্পত্তির পর জরিমানা হলে তার ২৫ শতাংশ পাবেন ভোক্তা।
পর্যায়ক্রমে সারাদেশে সিসিএমএস
পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া এই পোর্টাল আগামী তিন মাস এটি শুধু ঢাকা বিভাগে চলবে। পরবর্তীতে এটি সারাদেশের জন্য উন্মক্ত করে দেওয়া হবে।
অধিদপ্তর আশাবাদী, এই তিন মাসের মধ্যে তারা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনও ডেভেলপ করে ফেলবে। এক্ষেত্রে ওয়েব পোর্টালের নামের সঙ্গে মিলিয়ে সেই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের নামও DNCRP অ্যাপ হবে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তরের ডিজিটাল প্রমোশন বিভাগ।
অধিদপ্তর শুধু অভিযোগ দায়েরের জন্য http://www.dncrp.com/ নতুন সাইট চালু করলেও তাদের মূল সাইট http://dncrp.portal.gov.bd/ আগের মতই রয়েছে।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগে সশরীরে এসে অভিযোগ করলে অনেক ধরনের কাগজপত্র জমা দেওয়ার বিষয় থাকত। তাছাড়া এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে যেতে হত ভোক্তাদের। তবে এখন ভোক্তাকে সেই বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। অভিযোগের পুরো প্রক্রিয়াটি সহজ ও দ্রুত সময়ে হবে বলে আশাবাদী অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।