জুমবাংলা ডেস্ক : ভোলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নদী ও খালের জোয়ার ভাটার পানিতে খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি। কম পুঁজিতে বেশি লাভজনক হওয়ায় ভাসমান এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। ফলে দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে খাঁচায় মাছচাষের চাষিদের সংখ্যা। এতে করে জেলায় বেকারত্ব দূরীকরণের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে অনেকের। মাছ চাষের নতুন এই পদ্ধতি দেখে স্থানীয় বেকার যুবক ও মৎস্যজীবীরা নদীতে মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
ভোলায় হতদরিদ্র মানুষের দারিদ্রতা দূর করে খাঁচায় মাছ চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তুলতে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ, খাঁচা ও মাছ প্রদান করছে একটি বেসরকারি সংস্থা। মৎস্য বিভাগ বলছে, ভোলায় খাঁচায় মাছ চাষে চাষিরা আগ্রহী হওয়ায় খাঁচায় মাছ চাষিদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এতে জেলায় বেকারত্ব দূরীকরণের পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে মাছের উৎপাদন।
ভোলা সদরের চর সেমাইয়া, ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়ার তেঁতুলিয়া নদী ও ৭ উপজেলার বিভিন্ন খালের মুক্ত জলাশয়ে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাত্র ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় তৈরি করা খাঁচায় তারা চাষ করছেন তেলাপিয়া, পাঙাশ, সরপুঁটি ও কার্প জাতীয় মাছ। প্রতিটি খাঁচায় হাজার থেকে ১২শ’ মাছ চাষ করার ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। খাঁচায় চাষ করা মাছের স্বাদ নদীর মাছের মতো। স্রোতে ভেসে মুক্ত পানির খাবার খেয়ে বেড়ে ওঠা খাঁচার মাছ চাষির জন্য বেশ লাভজনক। এই মাছ খেতেও খুব সুস্বাদু। এ কারণে ভোলায় পুকুরের পরিবর্তে তেঁতুলিয়া নদী ও খালে খাঁচা ফেলে মাছ চাষ শুরু করেছে জেলা সদরের ৫ শতাধিক চাষি।
ড্রামের উপর লোহার পাইপ, ও জাল দিয়ে তৈরি প্রতিটি খাঁচায় ছাড়া হয় মাছের পোনা। বিক্রির আগ পর্যন্ত প্রতিটি খাঁচায় মাছের খাবারসহ খরচ দাঁড়ায় ৩০ হাজার টাকা। পোনা ছাড়ার ৩ মাস পর মাছের ওজনের উপর ভিত্তি করে প্রতিটি খাঁচা থেকে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ পাচ্ছেন তারা। এতে খাঁচা প্রতি তাদের বছরে লাভ হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। তবে সম্প্রতি কয়েক দফায় মাছের খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মৎস্য চাষিদের। খাদ্যের দাম বৃদ্ধির তুলনায় মাছের দাম কম থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
প্রথমবারের খাঁচায় মাছ চাষ করে লাভের মুখ দেখা চরসামাইয়া ইউনিয়নের শান্তির হাট এলাকার মো. সোহাগ বলেন, একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ভাসমান মাছ চাষ করার জন্য একটি খাঁচা পাই। বর্তমানে ৫টি মাছ চাষের জন্য খাঁচা রয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে ৩ মাস পর পর মাছ বিক্রি করে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ থাকে। মাছ সুস্বাদু হওয়ায় বাজের এই মাছের বেশ চাহিদা থাকায় এখন অনেকে ভাসমান মাছ চাষ করে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এই মাছ চাষের পাশাপাশি অন্য কাজ করা যায়। সেক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিশ্রম নেই। এখন অমার আর বেকারত্ব জীবন কাটানো লাগছে না।
একই এলাকার মো. আক্তার হোসেন বলেন, বেকারত্ব জীবন থেকে কর্মসংস্থান হয়েছে খাঁচায় মাছ চাষের মাধ্যমে। কম পুঁজিতে অধিক লাভ হওয়ায় খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করি। এখানে নদীর প্রবহমান পানিকে কাজে লাগিয়ে ভাসমান পদ্ধতি খাঁচায় মাছ চাষ করা হয়। ফলে মাছ দ্রুত বাড়ে ও সুস্বাদু হয়। প্রথমে একটি দিয়ে শুরু করেছি এখন খাঁচার সংখ্যা বাড়িয়েছি।
তবে খাবারে দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষিরা কিছুটা দুশ্চিন্তার আছে বলে জানান আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, দাম বাড়তে থাকলে আমাদের মাছ চাষ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা টেকনিক্যাল অফিসার আরিফুজ্জামান বলেন, হতদ্ররিদ্র মানুষের দারিদ্রতা দূর করে স্বাবলম্বী করে তুলতে পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের পিকেএসএফ ফান্ডের সহযোগিতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা বেকার যুবকদের বিনামূল্যে খাঁচা, মাছের পোনা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করছে। এর মাধ্যমে অনেক বেকার যুবক এখন কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।
গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন বলেন, ভোলায় মেঘনার ভাঙনে প্রতি বছর অনেক পরিবার গৃহহীন হয়। এই গৃহহীন পরিবারের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের জন্য গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের পিকেএসএফ ফান্ডের সহায়তায় তাদের আমরা সহযোগিতা করছি। আমরা যারা খাঁচায় মাছ চাষ করতে আগ্রহী তাদের প্রত্যেককে খাঁচা, ড্রাম, পাইপসহ মাছের পোনার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এই খাঁচায় মাছ চাষ করার ফলে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি বেকার যুবকরাও এখন খাঁচায় মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে জেলায় প্রায় ৫ শতাধিক চাষি খাঁচায় মাছ চাষ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই মাছ অনেক সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা রয়েছে।
এদিকে মাছের খাদ্য বিক্রেতা জামাল হোসেন বলেন, গত কয়েক মাসে ২৫ কেজি মাছের খাবার সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে মাছের খাবার বিক্রি। ফলে অনেক খামারি মাছ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ফলে আমাদের বেচাকেনা আগের চেয়ে কমে গেছে। সরকার মৎস্য খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখার দাবি জানান।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, ভাসমান পদ্ধতিতে মাছ চাষে মাছের কোনো রোগ-বালাই না হওয়ায় এবং অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় নতুন করে অনেকে বেকার যুবক মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছে। খাঁচায় মাছ চাষের এই সম্ভাবনাকে টিকিয়ে রাখতে জেলা মৎস্য বিভাগ থেকে তাদের বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি সরকারিভাবে নানা ধরনের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ভোলা সদর উপজেলায় তেতুলিয়া নদীতে ৫ শতাধিক ভাসমান খাঁচা রয়েছে। এর বাইরে ৭ উপজেলায় বিভিন্ন নদী ও খালে রয়েছে আরও প্রায় ৩ শতাধিক খাঁচায় মাছ চাষি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।