জুমবাংলা ডেস্ক :
ভেঙে যাওয়ার এক মাস হলেও এখনও মেরামত করা হয়নি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিচ্ছিন্ন ঢালচর ইউনিয়নের একমাত্র ইটের সড়ক। উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন ও মেঘনা নদীর মাঝে হওয়ায় ইউনিয়নটিতে এখনো কোনো পাকা সড়ক হয়নি। ফলে একমাত্র ইটের সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী।স্থানীয়রা জানান, ভেঙে যাওয়া সড়কটি ঢালচর ইউনিয়নবাসীর যোগাযোগের একমাত্র পথ। ইউনিয়নের মধ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের একমাত্রই ভরসা মোটরসাইকেল।
কিন্তু রাস্তাটি ভেঙে প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারছে না। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে চাইলে পড়তে হচ্ছে দুর্ঘটনায়। তাই ওই দুই কিলোমিটার রাস্তায় হেঁটে পাড়ি দিতে হচ্ছে। ইউনিয়নের একমাত্র সড়কটিও ভেঙে গেছে এক মাস আগে
সরেজমিনে দেখা যায়, গত ২৯ মে নিম্নচাপের প্রভাবে অতি জোয়ারে মেঘনা নদীর পানি ঢালচরের বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করে। এতে অতি স্রোতের কারণে ঢালচর ইউনিয়নের মাঝের চর খাল এলাকার কাঠের ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে চর তারুয়ার সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত রাস্তার প্রায় দুই কিলোমিটার ইটের রাস্তার বিভিন্ন অংশে ভেঙে গেছে। কোনো স্থানে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।
আবার কোথাও কোথায় পানির স্রোতে সড়কের অর্ধেকেরও বেশি রাস্তার ইট এলোমেলো ভাবে পড়ে গেছে। এতে সড়কের ওই অংশ মোটরসাইকেল চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।
ঢালচর ইউনিয়নের মাঝের চর এলাকার বাসিন্দা মো. ইউসুফ ফরাজী ও মো. ইসমাইল মিয়া জানান, ঢালচর ইউনিয়নের পাকা সড়ক বলতে একমাত্র ইটের রাস্তাটি। সেটিও মে মাসের ২৯ তারিখ পানির স্রোতে দুই কিলোমিটার অংশে অনেক স্থানে ভেঙে গেছে।
তাই মাঝের চর বাজার থেকে তারুয়া যেতে হলে এখন হেঁটে যেতে হয়। মোটরসাইকেলে আগে যেখানে সময় লাগতো মাত্র ৫ থেকে ৭ মিনিট এখন হেঁটে সেখানে সময় লাগে ৩০-৪০ মিনিট।
চর তারুয়া সমুদ্র সৈকত এলাকার বাসিন্দা মো. হাবিবুর ইসলাম ও কয়ছর মিয়া জানান, তারুয়া এলাকায় কোনো বাজার নেই। বাজার করতে যেতে হয় মাঝের চর অথবা আনন্দ বাজারে। আগে মোটরসাইকেলে করে গিয়ে দ্রুত বাজার নিয়ে বাড়ি ফিরে আসা যেত।
কিন্তু এখন মোটরসাইকেল চলে না, তাই চাল-ডালসহ সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় বাজার নিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে যেতে হচ্ছে। এতে প্রচণ্ড ভোগান্তি হচ্ছে।
তারা আরও জানান, দিনের বেলায় অনেক কষ্টে হেঁটে যাতায়াত করলেও রাতের বেলায় অন্ধকারের মধ্যে অনেক ভয় ও ভোগান্তি হয়। বিদ্যুৎ নেই তাই সড়কে কোনো লাইট নেই। এতে অন্ধকারের মধ্যে কষ্টে যাতায়াত করতে হয়।
তারুয়া এলাকার বাসিন্দা আসমা বেগম, মিতু আক্তার ও জান্নাত বেগম বলেন, ‘পুরুষরা হেঁটে যেতে পারে কিন্তু আমাদের হেঁটে যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হয়। ঢালচরের গ্রামের নারীদের যে কি পরিমাণ দুর্ভোগ সেটা কেউ শহরে থেকে অনুভব করতে পারবে না।
একটা মাত্র ইটের রাস্তা তাও ভেঙে গেছে। কিন্তু এত দিনেও মেরামতের কোনো নাম নেই। আমরা দেশের একটি ইউনিয়নের বসবাস করেও অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত। দ্রুত রাস্তা মেরামতের জন্য আমরা অনুরোধ করছি।’
তারা আরও বলেন, ‘আমাদের বাচ্চারা স্কুল ও মাদরাসায় পড়াশুনা করে। কিন্তু এখন রাস্তা ভাঙার কারণে হেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে।’
ঢালচর ইউনিয়নের মোটরসাইকেলের চালক মো. আলাউদ্দিন ও সবুজ মিয়া জানান, তারা ঢালচরে মোটরসাইকেল চালিয়েই সংসার পরিচালনা করেন। আগে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আনন্দ বাজার থেকে তারুয়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বার যাতায়াত করতেন।
শত শত যাত্রী নিয়ে যেতেন। কিন্তু এখন রাস্তা ভাঙার কারণে যেতে পারছেন না। এখন আনন্দ বাজার থেকে সর্বোচ্চ মাঝের চর ব্রিজ পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারেন। এতে তাদের আয় অনেক কমে গেছে।
মাঝের চর বাজারের মোটরসাইকেলের চালক মো. সোহেল ও মো. সুজন জানান, এই রাস্তাটি ঘূর্ণিঝড় রিমেলের সময়ও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু মেরামত করা হয়নি। তবুও অনেক কষ্ট করে তারা মোটরসাইকেলের নিয়ে যাত্রী পারাপার করতেন।
অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটতো। তবুও যাতায়াত করা যেত। কিন্তু ২৯ মে নিম্নচাপের পানির স্রোতের রাস্তা ভেঙে অনেক স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও রাস্তা থেকে ইট সরে গিয়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এখন মোটরসাইকেল নিয়ে মাঝের চর বাজারের পরে তারুয়া যাওয়া যাচ্ছে না।
তারা বলেন, ‘রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। আমাদের আগের মতো আয় হয় না। এখন অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়।
আমাদের কয়েকজন মোটরসাইকেলের চালক যাত্রীদের অনুরোধে কয়েকদিন আগে ওই রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার পরে আহত হয়েছেন। এ অবস্থায় আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি রাস্তাটি দ্রুত মেরামত করার জন্য।
চরফ্যাশন উপজেলার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিএম ওয়ালিউল ইসলাম জানান, ২০২৩ সালের দিকে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় ৪ কোটি ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি এইচবিবি করণ বা ইটের রাস্তা করা হয় ঢালচর ইউনিয়নে।
ওই ইটের রাস্তাটি ঘূর্ণিঝড় রিমেলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবার মে মাসের শেষের দিকের নিম্নচাপের অতি জোয়ারের পানির স্রোতেও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা রাস্তাটি মেরামত করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি। বরাদ্দ এলে রাস্তাটি মেরামত করতে পারবো। তবে কবে নাগাদ মেরামত হবে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।