বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : একটা সময় ছিল যখন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন গাড়িগুলোতে বিশাল ড্যাশবোর্ড স্ক্রিন যুক্ত করার জন্য প্রতিযোগিতা করেছিল। এটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে গাড়ির প্রযুক্তিতে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয় এটি। তবে পরবর্তী সময়ে নির্মাতারা বুঝতে পারেন যে শুধু টাচস্ক্রিনের ওপর নির্ভর করা বোকামি। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনগুলোর জন্য, যেগুলো ডিজাইনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
এটি বুঝতে পারার পর ফোকসভাগেন কম্পানি ঘোষণা করেছে, তারা গাড়ির গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনগুলোর জন্য আবার ফিজিক্যাল বাটনে ফিরে যাবে। যেই কথা সেই কাজ। নতুন ডিজাইনের গাড়িগুলোতে পুরোনো যুগের ফিজিক্যাল বাটন নিয়ে আসছে কম্পানিটি।
ফোকসভাগেন কম্পানির ডিজাইন প্রধান আন্দ্রেয়াস মিন্ডট বলেন, ‘স্টিয়ারিং হুইলে টাচস্ক্রিন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে আসাটা একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।
এর ফলে বেশ কিছু বিপর্যয়ের শিকার হতে হয়েছে। আমরা আর কখনোই এই ভুল করব না। স্টিয়ারিং হুইলে শারীরিক বোতাম থাকবে। আর কোনো অনুমান নয়, বাস্তব প্রতিক্রিয়া থাকবে এবং মানুষ এটি পছন্দ করে। এটি একটি গাড়ি, কোনো মোবাইল ফোন নয়।’
২০২২ সালের শেষের দিকে, ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতা ফোকসভাগেন সাহসী একটি পদক্ষেপ নিয়েছিল—তারা ঐতিহ্যগত বোতাম বাদ দিয়ে স্টিয়ারিং হুইলে সম্পূর্ণ টাচ-সেন্সিটিভ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এসেছিল। কিন্তু গ্রাহকদের অভিযোগের কারণে এটি বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে।
মিন্ডট জানান, নতুন প্রজন্মের ফোকসভাগেন গাড়িগুলোতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি ফাংশনের জন্য শারীরিক বোতাম থাকবে—ভলিউম নিয়ন্ত্রণ, সিট হিটিং, ফ্যান কন্ট্রোল এবং হ্যাজার্ড লাইট। এই বোতামগুলো ইনফোটেইনমেন্ট স্ক্রিনের ঠিক নিচে স্থাপন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘এখন থেকে আমরা যে গাড়িই তৈরি করব, তাতে এই পরিবর্তন থাকবে। আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি।’
ফোকসভাগেনের পরিবর্তিত প্রথম গাড়িটি হবে ID.2all ইলেকট্রিক সুপারমিনি। ২০২৬ সালে এটি বাজারে আসবে। এতে ইনফোটেইনমেন্ট ডিসপ্লের নিচে অতিরিক্ত শারীরিক বোতামের একটি সারি থাকবে।
ফোকসভাগেন একমাত্র গাড়ি নির্মাতা নয় যারা আবার শারীরিক বোতামে ফিরে আসছে। গত বছর হুন্দাইও স্বীকার করেছিল যে তারাও একই ধরনের ভুল করেছে। কম্পানির ইউএস ডিজাইন প্রধান জানান, আমেরিকান ড্রাইভাররা পুরোপুরি টাচস্ক্রিন কন্ট্রোলে অভ্যস্ত হতে পারেনি। ভবিষ্যতের হুন্দাই মডেলগুলোতে আরো বেশি শারীরিক বোতাম যুক্ত করা হবে।
গাড়িতে বিশাল টাচস্ক্রিনের প্রবণতা শুরু করেছিল টেসলা। কম্পানিটি ধীরে ধীরে ফিজিক্যাল কন্ট্রোল বাদ দিয়ে সমস্ত ফাংশনকে স্ক্রিনের মাধ্যমে পরিচালিত করার ধারণা নিয়ে এসেছিল। অন্য নির্মাতারাও এটি অনুসরণ করেছিল। কিন্তু চালকরা কখনোই সম্পূর্ণরূপে এই পরিবর্তন গ্রহণ করেনি। গাড়ির ফাংশনগুলোকে স্মার্টফোনের মতো করে তুলতে গিয়ে নির্মাতারা বুঝতে পেরেছে যে এটি আসলে একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।
ফোকসভাগেনের এই ঘোষণা এমন সময় এসেছে যখন ইউ-এর নিউ কার অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম (এনসিএপি) নতুন নিয়ম চালু করতে চলেছে। নিয়মটি হচ্ছে, ২০২৬ সাল থেকে একটি গাড়িকে ফাইভ স্টার সেফটি রেটিং পেতে হলে নির্দিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনের জন্য অবশ্যই শারীরিক বোতাম থাকতে হবে।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অনেক গাড়ি নির্মাতা কম্পানি এখনো ‘কম্পিউটার অন হুইলস’ ধারণাকে সমর্থন করছে। তারা এমন একটি ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে গাড়ির সমস্ত ফাংশন টাচস্ক্রিন ও ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। কিন্তু ফোকসভাগেনের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করছে যে গাড়ির জন্য পুরনো প্রযুক্তিগুলিও মাঝে মাঝে নতুন করে ফিরে আসতে পারে। গল্পের (কাল্পনিক) মাধ্যমে বললে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে।
বোতামের প্রত্যাবর্তন
রাজিব একজন টেক-সচেতন গাড়িপ্রেমী। তিনি সদ্য বাজারে আসা একটি নতুন গাড়ি কিনেছেন, যার সব নিয়ন্ত্রণ শুধু বিশাল একটি টাচস্ক্রিনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
প্রথম কয়েকদিন সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। তবে একদিন রাতে তিনি একটি বিপজ্জনক বাঁক নিতে গিয়ে বুঝতে পারলেন যে তিনি দ্রুত হ্যাজার্ড লাইট চালু করতে পারছেন না। তিনি প্যানিক হয়ে স্ক্রিনের বিভিন্ন মেনুতে হাত চালাতে থাকেন। কিন্তু তখনই তার গাড়ি আরেকটি গাড়ির সামনে চলে যায়। বিপদ থেকে কোনোমতে বেঁচে যান রাজিব। তবে তার মনে আতঙ্কের ছাপ রেখে যায় সেই অভিজ্ঞতা।
এতদিন পর রাজিব বুঝতে পারেন—গাড়ি কখনোই স্মার্টফোনের মতো হওয়া উচিত নয়। গাড়িতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া (রিয়েল ফিডব্যাক) থাকা জরুরি।
এরপর তিনি বাজারে আসা নতুন ফোকসভাগেন ID.2all-এর খবর শুনলেন, যেখানে আবার ফিজিক্যাল বাটন ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তার পরবর্তী গাড়িটি হবে এই নতুন মডেল। কারণ একটি গাড়ি কেবল প্রযুক্তির প্রদর্শনী নয়, বরং এটি নিরাপত্তার প্রতীকও।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।