জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের উন্নয়নের অর্থনীতির মূল যোগান আসে কৃষি থেকে। কৃষি দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। এ দেশের জনমানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা প্রদানের প্রধানতম এবং অন্যতম উৎস কৃষি। এখনো দেশের বিপুল জনসংখ্যার কর্মসংস্থান হয়েছে কৃষিকে অবলম্বন করে। তাই দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে বর্তমান সরকার কৃষির প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। কৃষকদের কৃষিতে উদ্বৃদ্ধ করতে প্রণোদনা ও ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। দ্রুত সময়ে রোপণ ও কাটা-মাড়াইয়ের জন্য যান্ত্রিকীকরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের উন্নয়নে যেসব খাত রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো কৃষিক্ষেত্র। দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলা চলে কৃষি এবং কৃষক। যা খাদ্য ও পুষ্টির নিশ্চয়তা, আয়ের সুযোগ সৃষ্টি এবং দারিদ্র হ্রাসকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।
দেশের অর্থনীতি বহুলাংশে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষির উন্নতি মানে দেশের উন্নতি। শস্য ভান্ডার খ্যাত উত্তরের বরেন্দ্র জেলা নওগাঁ। এ জেলা ধান ও সবজি এলাকা হিসেবে পরিচিত। তবে গত কয়েক বছর থেকে আমের জেলা হিসেবেও পরিচিত পেয়েছে। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের গন্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে বিদেশেও। জেলায় বছরে প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়।
জেলায় ধান, গম, ভুট্টা, আলু, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ, সরিষা, পাট ও শাক-সবজির আবাদ হয়ে থাকে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫ লাখ ১৬ হাজার ৫৩২ জন কৃষি প্রণোদনার আওতায় সুবিভোগী কৃষক ও উপকরণ পেয়েছে। যার ভর্তুকির টাকার পরিমাণ ৪৮ কোটি ৩১ লাখ ৭৭ হাজার ৪৬৮ টাকা।
অপরদিকে ভর্তুকির আওতায় কৃষি যন্ত্রপাতি পেয়েছে ৪ হাজার ৫৬৭ জন। যার ভর্তুকির টাকার পরিমাণ ২৪ কোটি ৮১ লাখ ২০০ টাকা। প্রতি অর্থ বছরে ইরিবোরো, রোপা আমন, আউশ, রবিশস্য, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ও বোরো হাইব্রিড ধান চাষের প্রতি প্রণোদনা ও ভর্তুকি দেওয়া হয়ে থাকে।
২০০৯-১০ অর্থ বছরে ২৭ হাজার ২০৫ জন কৃষককে ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা। ২০১০-১১ অর্থ বছরে পাট চাষের জন্য ৬ হাজার ৫৭২ জন কৃষককে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ১৩ লাখ ১৪ হাজার ৪০০ টাকা। ২০১১-১২ অর্থ বছরে ২০ হাজার ৮৯২ জন কৃষককে আউশ চাষে বীজ, সার, সেচ ও পরিবহন সহ আনুষাঙ্গিক ব্যয়ে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৯৫ লাখ ৬২ হাজার ৯১২ টাকা।
২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ১৪ হাজার ৫২০ জন কৃষককে প্রণোদনা ও পূনর্বাসন হিসেবে বীজ, সার ও পরিবহনসহ আনুষাঙ্গিক ব্যয়ে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৭২ হাজার ৭৭৫ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৯ হাজার ১০ জন কৃষককে আউশ ও নেরিকা চাষে প্রণোদনা হিসেবে বীজ, সার, সেচ ও পরিবহন সহ আনুষাঙ্গিক ব্যয়ে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ ৩২ হাজার টাকা।
২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১০ হাজার ৬২৮ জন চাষিকে প্রণোদনা ও পূনর্বাসন হিসেবে বীজ, সার ও পরিবহনসহ আনুষাঙ্গিক ব্যয় এবং রাজস্ব খাতে রবাদ্দ থেকে বীজ, সার, সাইনবোর্ড, রেজিস্টার ও বীজ সংরক্ষণ পাত্রে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার ৬২৮ টাকা।
২০১৭-২৩ অর্থ বছরে ৪ লাখ ৬১ হাজার ৪৮২ জন চাষিকে প্রণোদনা ও পূনর্বাসনের আওতায় বীজ, সার ও পরিবহনসহ আনুষাঙ্গিক ব্যয় ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৪২ কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ১৫৩ টাকা। ভর্তুকিতে যান্ত্রিকীকরণ: ২০১০-১১ অর্থ বছরে ১০২ টি ট্রাক্টর ও ১ হাজার ৯৪০ টি পাওয়ার টিলারে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
২০১১-১২ অর্থ বছরে ৬৭ টি ট্রাক্টর, ৫৭৭ টি পাওয়ার টিলার ও ২২ টি পাওয়ার থ্রেসারে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৩০১ টি পাওয়ার টিলারে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৯০ কোটি ৩০ হাজার টাকা।
২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৫৬৭ টি পাওয়ার টিলার, ৮৭ টি পাওয়ার থ্রেসার ও ৪টি পিটিও সীডারে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৩১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১১০টি পাওয়ার টিলার, ২৯৯ টি পাওয়ার থ্রেসার, ২ টি ফুট পাম্প, ৫ টি রিপার ও ১৩টি পিটিও সিডারে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৮৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪০০ টাকা।
২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১১৬ টি পাওয়ার থ্রেসার, ১৫ টি কম্বাইন হার্ভেস্টার, ২৪টি ফুট পাম্প, ৩১ টি রিপার ও ২৮টি পিটিও সীডারে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৩২ লাখ ২০ হাজার ৩০০ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৩০টি পাওয়ার থ্রেসার, ৩ টি কম্বাইন হার্ভেস্টার, ১৫ টি রিপার ও ১৫টি পিটিও সীডারে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৮৮ লাখ টাকা।
২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৩৩ টি কম্বাইন হার্ভেস্টার ও ২ টি রিপারে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৫৫ টি কম্বাইন হার্ভেস্টার ও ৬ টি রিপারে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৩২ টি পাওয়ার থ্রেসার, ৪টি কম্বাইন হার্ভেস্টার, ১৪ টি রিপার ও ১১টি পিটিও সিডারে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৯০ লাখ টাকা।
২০২১-২২ অর্থ বছরে ২৫ টি পাওয়ার থ্রেসার, ১১ টি কম্বাইন হার্ভেস্টার এবং ১ টি রিপারে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউপির মকমলপুর গ্রামের কৃষক লিটন হোসেন বলেন, গত দুই বছর থেকে প্রণোদনা হিসেবে পেঁয়াজের বীজ, ওষুধ, সার এবং আগাছা নিড়ানির জন্য কিছু টাকা পেয়েছিলাম। বাজার থেকে এসব উপকরণ কিনতে হলে টাকা লাগতো। যা ফ্রিতে পেয়ে উপকৃত হয়েছে।
জেলার রানীনগর উপজেলার শিয়ালা গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম। নিজের আড়াই বিঘা আবাদি জমি থাকলেও জমি বন্ধকসহ আবাদ করেন প্রায় ১০ বিঘা। যেখানে ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজির আবাদ করেন।
তিনি বলেন, গত প্রায় ৫ বছর থেকে কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও বিভিন্ন ধরনের বীজ পেয়ে আসছি। এছাড়াও প্রণোদনা হিসেবে টাকা পাওয়া যায়। যেটুকু প্রণোদনা পাওয়া যায় তা দিয়ে উপকৃত হয়। তবে প্রণোদনার পরিমাণ আরেকটু বাড়ানো হলে সুবিধা হতো।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব। কৃষির প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে। কৃষকদের কৃষিতে উদ্বৃদ্ধ করতে প্রণোদনাসহ বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা করছে। সার, তেল ও বিদ্যুৎসহ অন্যান্যতে ভর্তুকি দিয়ে আসছে। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। যন্ত্রাংশগুলোতে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার।
গো’প’না’ঙ্গ দেখালেই অভিনয়ের সুযোগ, আয়ুষ্মানের গোপন তথ্য ফাঁস
তিনি বলেন, যে কোনো ধরণের ফসল উৎপাদনে কৃষি অফিস থেকে মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। কৃষকরা পরামর্শ পেয়ে উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি ভালো ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছে। সেই সঙ্গে তারা ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।