ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় দুই দিনের ব্যবধানে চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী ও একটি ঢাকায় ছিল। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে একটি এবং শনিবার (২২ নভেম্বর) দিনের বিভিন্ন সময়ে তিনটি ভূমিকম্প হয়, যার ফলে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহন বলা হচ্ছে। নরসিংদীর মাধবদীতে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৭। ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই একই এলাকায় ফের ৩ দশমিক ৩ মাত্রা ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এরপরই বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক ৩ প্লেট ও ছয় ফল্ট নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। এগুলোর কারণেই মূলত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প হচ্ছে।
বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক প্লেট ও ফল্ট
আবহাওয়া অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও আশপাশে কয়েকটি ভূতাত্ত্বিক প্লেট ও ফল্ট রয়েছে। আসুন এগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত জেনেই নিই-
সংশ্লিষ্ট টেকটোনিক প্লেট
বাংলাদেশ মূলত তিনটি বড় প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত-
ইন্ডিয়ান প্লেট: বাংলাদেশের বৃহৎ অংশ এই প্লেটের পূর্ব-উত্তর অংশে। উত্তরে ইউরেশিয়ান প্লেট এবং পূর্বে বার্মা প্লেটের সাথে সংঘর্ষ ঘটায়।
ইউরেশিয়ান প্লেট: হিমালয় অঞ্চলের ওপরে, বাংলাদেশের উত্তরে। ইন্ডিয়ান প্লেটের সাথে সংঘর্ষে হিমালয় ও উত্তরাঞ্চলের ভূকম্পের উৎস সৃষ্টি করে।
বার্মা প্লেট (Burma Microplate): বাংলাদেশের পূর্বদিকে মিয়ানমার অঞ্চলে এর অবস্থান। এখানেই সবচেয়ে বিপজ্জনক ইন্দো-বার্মা মেগাথ্রাস্ট রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধান সক্রিয় ফল্টসমূহ
দেশের ভেতরে ও সীমান্ত বরাবর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফল্টগুলো হলো-
১. ডাউকি ফল্ট (Dauki Fault): এর অবস্থান সিলেটে মেঘালয়ের পাদদেশ। এর প্রকৃতি হলো বড় থ্রাস্ট ফল্ট। বড় ঝুঁকি হলো রিখটার স্কেলে ৭–৮ পর্যন্ত বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা। এর প্রভাবিত জেলাগুলো হলো সিলেট, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও মৌলভীবাজার।
২. মধুপুর বা মধবপুর ফল্ট (Madhupur Fault): এটির অবস্থান টাঙ্গাইল–ময়মনসিংহ–গাজীপুর অঞ্চলের পশ্চিমে। এর ঝুঁকি হলো এম ৬.৫–৭ মাত্রার ভূমিকম্প ঢাকায় শক্তভাবে অনুভূত হবে। প্রভাবিত জেলাগুলো হলো টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, শেরপুর, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ ও ঢাকা।
৩. চট্টগ্রাম ফোল্ড বেল্ট ফল্টসমূহ: অবস্থান পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম অঞ্চল। এর ধরন হলো বহু সক্রিয় ফল্ট—ক্রাস্টাল কম্প্রেশন। আর প্রভাবিত জেলাগুলো হলো চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার।
৪. ইন্দো-বার্মা মেগাথ্রাস্ট (Subduction Zone): বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পূর্বে এটির অবস্থান। ধরন হলো বড় সাবডাকশন ফল্ট—এশিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনকগুলোর একটি। এর ঝুঁকি হলো এম ৮.৫ এর বেশি হওয়া সম্ভাবনা। প্রভাবিত জেলা হলো কক্সবাজার, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
৫. শিলং প্লাটো সীমান্ত ফল্ট (Shillong Plateau Boundary Faults): এটির অবস্থান ভারতের শিলং–মেঘালয়ের উচ্চভূমি। ঝুঁকি হলো ১৮৯৭ সালের মতো বড় ভূমিকম্প পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা। প্রভাবিত জেলা হলো সিলেট, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ ও ময়মনসিংহ।
৬. তিস্তা লাইনামেন্ট, প্লায়া-গঙ্গা লাইনামেন্ট: এটির অবস্থান উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে, ঝুঁকিও তুলনামূলক কম। প্রভাবিত জেলা হলো রংপুর, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



