আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করেছে রাশিয়া। অভিযানে প্রিগোজিনের বাড়িতে মিলেছে বিপুল পরিমাণ অর্থ, সোনা, অস্ত্র ও ছদ্মবেশ ধারণের সরঞ্জামসহ নির্যাতনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি।
বুধবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারিত ‘৬০ মিনিট’ নামে একটি অনুষ্ঠানে তার বাড়ি থেকে উদ্ধারকৃত মালামালের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়।
রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গে অবস্থিত প্রিগোজিনের বিলাসবহুল বাড়িতে রুশ বাহিনী তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে গত ২৪ জুন।
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। ছবি ও ফুটেজে দেখা গেছে, উদ্ধারকৃত মালামালের মধ্যে রয়েছে বড় বড় বক্সভর্তি রুশ মুদ্রা রুবল।
রুশ কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রিগোজিনের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা নগদ অর্থের পরিমাণ প্রায় ৬০০ মিলিয়ন রুবল বা ৬৬ লাখ ডলার। ছিল কয়েকটি সোনার বারও। গুলিসহ বেশ কিছু ভারী অস্ত্রও পাওয়া গেছে তার বাড়িতে। একটি হাতুড়িবিশেষ বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি পরচুলা। ধারণা করা হচ্ছে, এসব পরচুলা ব্যবহার করে ছদ্মবেশ ধারণ করতেন প্রিগোজিন।
প্রিগোজিনের বাড়ি থেকে যে কয়েকটি পাসপোর্ট উদ্ধার হয়েছে তাতে প্রিগোজিনের ছবি থাকলেও সেগুলোতে রয়েছে প্রিগোজিনের ভিন্ন ভিন্ন নাম। বেশ কিছু মেডেল লাগানো একটি সামরিক পোশাকের পাশে দেখা গেছে একটি পতাকা। পতাকাটিতে রুশ ভাষায় লেখা রয়েছে ‘রক্ত’।
আধুনিক বিশ্বে সম্ভ্রান্ত, অভিজাত এবং প্রভাবশালীদের বাড়িতে একটি জিনিস পাওয়া যাবেই। তা হল চোখধাঁধানো গাড়ির সম্ভার। কিন্তু ‘রুশ অলিগার্ক’ প্রিগোজিন সে সবের ধার ধারেন না। গাড়ি নয়, তার শখ হল হেলিকপ্টার। আর পাঁচটা ধনী লোকের বাড়িতে যেখানে মিলবে গাড়ি, সেখানে প্রিগোজিনের ভিলায় সযত্নে রাখা হেলিকপ্টার!
সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রিগোজিনের ভিলাটি বিশাল এলাকা জুড়ে। সাদা দেওয়াল পেরোলেই সবুজ ঘাসের গালিচা। এক কোণে ‘পার্ক’ করা একটি অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার। প্রয়োজন মতো সেই হেলিকপ্টারে চড়েই প্রিগোজিন চলে যেতেন যে কোনও জায়গায়।
পুলিশের কয়েক জন কর্মী তল্লাশিতে গিয়ে চলে এসেছিলেন ওয়াগনার প্রধানের গোসলঘরে। বিশাল আকৃতির এ ঘরের কোণে মার্বেল পাথরে মোড়া বাথটাব। বাথটাবে পৌঁছনোর জন্য দু’দিকে সিঁড়ি, কালো পাথরে মোড়া। বাথরুমের এক কোণে বিরাট ‘ফ্রেঞ্চ উইনডো’। তার পাশে বসানো দু’টি ডেক চেয়ার। সূর্যের তাপ নিতে নিতে স্নানের আদর্শ স্থান।
যে ঘরে বসে কাজকর্ম সামলাতেন প্রিগোজিন, সেই ঘরের এক দিকে একটি পুল টেবিল। অন্য দিকে কাঠের টেবিলের এক পাশে কালো প্লাস্টিকের প্যাকেটে রাশিয়ার রুবল। গোটা ঘরটি সাজানো বিভিন্ন আকৃতির মানুষের মাথার প্রতিকৃতি দিয়ে।
তবে আসল সম্ভার লুকনো ছিল প্রিগোজিনের শোয়ার ঘরে। বিশাল পালঙ্কের এক ধারে পুরোদস্তুর অস্ত্রশালা। তাতে দেখা গিয়েছে একটি বড় রাইফেল। এ ছাড়াও ছড়ানো-ছেটানো অবস্থায় পড়ে একাধিক বন্দুক, পিস্তল, রাইফেল। কার্তুজবোঝাই অন্তত দু’টি সুটকেসও মিলেছে ডালা খোলা অবস্থায়।
প্রিগোজিনের অন্য একটি বসার ঘরে ঢোকার মুখের প্যাসেজে কাঠের মাঝারি আলমারির উপর যত্নে রাখা একটি অতিকায় কুমিরের খোলস। উপরে চোখধাঁধানো ঝাড়লণ্ঠন।
রাশিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যমের দাবি, প্রিগোজিনের ভিলা থেকে বিপুল নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছে। তাদের অনুমান, ৬৫ লাখ ডলার অর্থমূল্যের রাশিয়ার মুদ্রা পাওয়া গিয়েছে। যদিও ঠিক কত টাকা উদ্ধার হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে থরে থরে সাজানো নোটের বান্ডিল দেখা গিয়েছে প্রকাশিত ছবিতে।
রাশিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ওই ভিলা থেকে একাধিক পাসপোর্টও পাওয়া গেছে। সেই পাসপোর্টগুলোতে নাম রয়েছে ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিনের। কিন্তু প্রতিটিতে ছবি আলাদা আলাদা।
এ থেকেই সন্দেহ, প্রিগোজিন সেজে কি তা হলে অন্যেরাও ঘুরে বেড়াতেন? সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, ইদানীং যাকে প্রিগোজিন বলে দাবি করা হচ্ছে, তিনিই আসল লোক তো?
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।