আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পহেলগামে সংঘর্ষের সূত্র ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বেড়ে যায়। যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর রবিবার রাত ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। যদিও সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখা শান্ত থাকলেও, উভয় দেশই নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছে।
সামরিক পর্যায়ে আলোচনা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
গতকাল দুই দেশের সামরিক পর্যায়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে যে তারা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি আলোচনা চায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, দুই দেশের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধের হুঁশিয়ারি দেওয়ার ফলেই এই যুদ্ধ বন্ধ হয়।
ভারতের দাবি: শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান
আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ড্রোন ভূপাতিত
ভারতের সশস্ত্র বাহিনী এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানায়, তাদের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাকিস্তানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে। বিমান বাহিনীর মহাপরিচালক এয়ার মার্শাল এ কে ভারতী বলেন, “আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেশের জন্য প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে ছিল, শত্রুর পক্ষে এটি ভেদ করা অসম্ভব।
এছাড়া তিনি বলেন, পাকিস্তান হামলায় চীনের তৈরি PL-15 ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, কিন্তু তা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয়।
সন্ত্রাসীদের আস্তানায় হামলা ও রাফাল যুদ্ধবিমান
পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, তারা পাঁচটি ভারতীয় বিমান (তিনটি রাফালসহ) ভূপাতিত করেছে। তবে ভারত এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা কেবল সন্ত্রাসীদের আস্তানাগুলোতে আঘাত হেনেছে। এ কে ভারতী বলেন, “আমাদের লড়াই ছিল শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে।”
শেখ জায়েদ বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাকিস্তানের শেখ জায়েদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়। পাকিস্তানের রহিম ইয়ার খান জেলার ডেপুটি কমিশনার জানান, একটি ক্ষেপণাস্ত্র ও একটি ড্রোন দিয়ে এই হামলা চালানো হয়, যার ফলে আমিরাতের রাজকীয় লাউঞ্জসহ বিমানবন্দরের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উত্তরের ৩২টি বিমানবন্দর খুলে দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের পাল্টা দাবি: ভারত যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেছে
আইএসপিআর-এর বক্তব্য
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (ISPR) মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতির জন্য ভারতকে অনুরোধ করিনি; বরং ভারতই এই আগ্রহ প্রকাশ করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি কঠোরভাবে মেনে চলছি, তবে কেউ লঙ্ঘন করলে আমরা তার জবাব দেব।”
ভারতীয় পাইলট বন্দি নয়
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত খবর যে, একজন ভারতীয় পাইলট পাকিস্তানের হেফাজতে রয়েছেন, তা অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। আইএসপিআর দাবি করেছে, এটি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
ভারতীয় সামরিক স্থাপনায় হামলার দাবি
পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদ বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে তারা ভারতের একাধিক সামরিক স্থাপনা ও সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ধ্বংস করেছে।
তিনি দাবি করেন, “আকাশযুদ্ধে আমরা ভারতকে ৬-০ ব্যবধানে হারিয়েছি।”
আইএসপিআর মুখপাত্রের মতে, পাকিস্তান এখনো তার আধুনিক যুদ্ধক্ষমতার একটি ক্ষুদ্র অংশ ব্যবহার করেছে, এবং বাকি ক্ষমতা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত আছে।
পারমাণবিক যুদ্ধ সম্পর্কে সতর্কতা
আইএসপিআর-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে পারমাণবিক যুদ্ধ জড়ানো ‘নিছক বোকামি’ হবে। এতে দুই দেশই চরম ক্ষতির মুখে পড়বে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: মার্কিন মধ্যস্থতা ও চাপ
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য
হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমরা দুই দেশকেই চাপ দিয়েছিলাম এবং যুদ্ধ থামাতে সাহায্য করেছি।”
তিনি বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই প্রচুর পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী। পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছিল। তাই আমরা বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়েছিলাম।”
ট্রাম্পের মতে, বাণিজ্যই ছিল এই যুদ্ধ থামানোর প্রধান কারণ। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশকে বাণিজ্যিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত, এবং শিগগিরই পাকিস্তানের সঙ্গে আলাপ শুরু হবে।
পরিস্থিতি শান্ত হলেও উত্তেজনা অব্যাহত
যদিও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে এবং উভয় দেশ শান্ত থাকার কথা বলছে, তবুও তাদের পাল্টাপাল্টি দাবি এবং সামরিক অবস্থান পরিস্থিতির ভেতরে থাকা উত্তেজনার ইঙ্গিত দেয়।
আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, এখন এই অঞ্চলের শান্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভবিষ্যতের জন্য দুই দেশের কূটনৈতিক আলোচনার পথ উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন।
সূত্র: বিবিসি, ডন, আনন্দবাজার পত্রিকা
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.