আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নতুন ভারতীয় রণতরীর যাত্রা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে স্নায়ুচাপ বেড়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রতিবেশী দেশ চীন ও পাকিস্তানের। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে কলকাতায় স্টেলথ গাইডেড-মিসাইল ফ্রিগেটের উদ্বোধন করলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ভারতীয় নৌসেনার এই যুদ্ধজাহাজটির নাম আইএনএস বিন্ধ্যাগিরি। এটি ভারতীয় নৌবাহিনীর ‘পি-১৭এ’ প্রকল্পের মধ্যে একটি জাহাজ। আইএনএস বিন্ধ্যাগিরি তৈরি করেছে কলকাতার গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (জিআরএসই)।
সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে ভারতীয় নৌবাহিনীর ‘পি-১৭এ’ প্রকল্পে মোট ৭টি স্টেলথ গাইডেড-মিসাইল ফ্রিগেট তৈরি করছে ভারত। মুম্বাইয়ের মাজগাঁও ডকইয়ার্ডে এর মধ্যে চারটে জাহাজ তৈরি হয়েছে। বাকি তিনটি গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্সে তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে আইএনএস বিন্ধ্যাগিরি এটি প্রকল্পের থার্ড এবং শেষ জাহাজ।
সমরাস্ত্র মোতায়েনসহ একেবারেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এই জাহাজে রয়েছে স্টিলথ ফিচার্স, অত্যাধুনিক সেন্সর। যা মুহূর্তে শত্রপক্ষের জাহাজ কিংবা সাবমেরিন ট্র্যাক করতে সক্ষম। একসঙ্গে ছয় হাজার ৬৭০ টন গোলাবারুদ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র বহন করতে পারে এই জাহাজ। শক্তিশালী এই জাহাজ থেকে বারাক-৮ মিসাইল লঞ্চ করতে সক্ষম।
এই যুদ্ধজাহাজ থেকে ভারতের হাতে থাকা মিসাইল ব্রহ্মস নিক্ষেপ করা সম্ভব। আধুনিক রেডার সিস্টেম রয়েছে INS Vindhyagiri নামের এই জাহাজে। অ্যান্টি সাব মেরিন ওয়েপন সিস্টেম দিয়ে সজ্জিত এই কলকাতায় তৈরি এই জাহাজ।১৫০ মিটার লম্বা এবং ৩৭ মিটার উঁচু এই জাহাজ মাঝ সমুদ্রে শত্রুপক্ষের ঘুম উড়িয়ে দিতে পারে।শুধু তাই নয়, ২৮ নটিক্যাল গতিতে ছুটতে পারে অর্থাৎ সমুদ্রের ঢেউয়ের উপর ঘণ্টায় প্রায় ৫২ কিমি গতিতে ছুটতে সক্ষম এই জাহাজ। নীলগিরি ক্লাসের তৃতীয় এই জাহাজের নামকরণ করা হয়েছে কর্ণাটকের পর্বতশ্রেণীর নামানুসারে।
ভারতের তিন বাহিনীর প্রধান হিসেবে এদিন বোতাম টিপে INS Vindhyagiri এর উদ্বোধন এদিন করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্ম।একই সঙ্গে জাহাজের গায়ে স্বস্তিকা চিহ্ন এঁকে দেন রাষ্ট্রপতি। পাশাপাশি নারকেল ফাটিয়ে, মালা পরিয়ে জাহাজের পুজো করেন তিনি। গার্ডেনরিচের এই অনুষ্ঠানে ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল পি হরি কুমারের সঙ্গেই উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, বিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
এদিন নির্দিষ্ট সময়ে এই যুদ্ধজাহাজের নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্যে নির্মাণ সংস্থা জিআরএসই ধন্যবাদও জানান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।একই সঙ্গে দেশের সুরক্ষায় ভারতীয় নৌবাহিনীর অবদানের কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি। যেভাবে জলসীমায় পাহাড়াদার হিসাবে নৌবাহিনী কাজ করছে সেই অবদানের কথাও রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে উঠে আসে।
অন্যদিকে নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল পি হরি কুমার বলেন, “কমব্যাট প্ল্যাটফর্মের দিক থেকে এই ধরনের জাহাজ নৌবাহিনীর হাতে আসায় মেরিটাইম সিকিউরিটি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। আমাদের জন্য আজ এটা খুব গর্বের দিন। এই ফ্রিগেট যে শুধু অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি তাই নয়, অস্ত্রও সজ্জিত রয়েছে অত্যন্ত আধুনিক মানের। আমাদের মেরিটাইম ক্যাপাবিলিটি পরিকল্পনা তৈরি করা রয়েছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে আমাদের দেশের মেরিটাইম ক্যাপাবিলিটি অনেক বেশি আপগ্রেড হয়ে যাবে। আরো বেশি করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন হয়ে উঠবে। বর্তমানে এখন যে পরিমাণ যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করা হয়, আগামী দিন সেই সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যাবে। যুদ্ধ জাহাজের সংখ্যা এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির হিসাবে নৌবাহিনী সবার উপরে উঠে আসবে। তাছাড়া ফ্লিট সাপোর্ট জাহাজগুলির পরিষেবার ব্যাপ্তি অনেক বড়। এগুলি মূলত জ্বালানি সরবরাহ, খাদ্যপণ্য সরবরাহ, তথ্যপ্রযুক্তির ক্যাপাবিলিটি বৃদ্ধি করা সহ একাধিক কাজ করা হয়। এর ফলে নৌবাহিনীর লজিস্টিক এবং অন্যান্য পরিষেবা দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হবে”
ভারতীয় নৌসেনার আই এন এস নীলগিরি শ্রেণির ছটি যুদ্ধ জাহাজ বা ফ্রিগেট ১৯৭২ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত পরিষেবা দেওয়ার পরে মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় অবসৃত হয়। তার বদলে পি -১৭ এ ( অ্যাডভান্সড) শ্রেণির সাতটি মাঝারি আকারের যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়। যার মোট ব্যয় ধরা হয়, ১৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ভারতীয় প্রযুক্তিবিদদের তৈরি নকশার উপর নির্ভর করে সাতটি জাহাজের চারটি মুম্বুই সংলোগ্ন মাজগাঁওতে এবং তিনটি কলকাতার গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্সের কারখানায় তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের সর্বশেষ যুদ্ধ জাহাজটি বৃহস্পতিবার পানিতে ভাসানো হলো।
প্রায় ছয় হাজার ছ’ শ টনের ওই জাহাজ থেকে একাধিক গাইডেড মিসাইল বা দিকদর্শী ক্ষেপনাস্ত্র উৎক্ষেপণ করার ব্যবস্থা থাকবে।
উচ্চ ক্ষমতসম্পন্ন এম এফ স্টার শ্রেণির বহু বিধ সুবিধা যুক্ত রাডার ছাড়াও ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র, তিনটি মেশিনগান এবং চারটি টর্পেডো লঞ্চারে সজ্জিত থাকবে ওই যুদ্ধজাহাজ। ভূমি থেকে আকাশ এবং ভূমি থেকে ভূমি ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও ব্রাহমোস ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া যাবে জাহাজ থেকে। এই জাহাজে দুটি গ্যাস টারবাইন এবং দুটি ডিজেল ইঞ্জিন থাকবে। জাহাজে ২২০ জন নৌসেনা এবং আধিকারিক এক সঙ্গে থাকতে পারবেন। প্রায় চার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর রয়েছে জাহাজে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।