ইয়াসিন রহমান : রমজানে তরমুজের দাম নিয়েও ঠকবাজি চলছে। পাইকারি বাজার থেকে পিস হিসাবে তরমুজ কিনলেও খুচরা পর্যায়ে কেজি হিসাবে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে খুচরা বিক্রেতারা বেশি মুনাফা করছে। তদারকি সংস্থার হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেক সময় অনেক বিক্রেতা আবার পিস হিসাবে বিক্রির ভান করে থাকেন। মৌসুমি রসালো ফল তরমুজ কিনতে সাধারণ ক্রেতাদের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। এজন্য অনেকের সাধ থাকলেও ফলটি কিনতে পারছেন না।
বাজারসংশ্লিষ্টরা জানান, তরমুজ রসে ও গুণে টইটুম্বুর। ফলটিতে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন গুণ আছে। এজন্য ইফতারের তালিকায় সব শ্রেণির ভোক্তাই ফলটি রাখেন। রমজানে তরমুজের ব্যাপক কদর বেড়েছে। এ কারণে দামও বেশি। বেশি লাভের আশায় বিক্রেতারা কারসাজি করছে। এক্ষেত্রে তদারকি সংস্থাগুলোর কঠোর নজর দেওয়া উচিত।
বুধবার রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি ফলের আড়ত বাদামতলীর আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানে ১০ থেকে ১২ কেজি ওজনের ১০০ পিস তরমুজ ৩২ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতি পিস তরমুজের দাম ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা। পাশাপাশি ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের ১০০ পিস তরমুজ ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতি পিস তরমুজের পাইকারি দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
রাজধানী ঘুরে খুচরা পর্যায়ে পিস হিসাবে তরমুজ বিক্রি করতে দেখা যায়নি। কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে ১০ থেকে ১২ কেজি ওজনের প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে ১০ কেজির একটি তরমুজ ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে এ সাইজের তরমুজ ২৮০-৩৭০ টাকা বেশি দরে খুচরা বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি কেজিপ্রতি ৪০-৫০ টাকা দরে ৪-৫ কেজি ওজনের তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। এতে ৫ কেজির একটি তরমুজের দাম ২০০-২৫০ টাকা। অথচ পাইকারি বাজার বা আড়ত থেকে প্রতি পিস তরমুজ ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেনা হচ্ছে।
নয়াবাজারে তরমুজ কিনতে আসা মো. সাঈদ বলেন, ইফতারে তরমুজ না হলে চলে না। সেজন্য ফলটি কিনতে এসেছি। কিন্তু দাম অনেক বেশি। ভালো লাভের আশায় খুচরা বিক্রেতারা কেজি হিসাবে বিক্রি করছে। অথচ পাইকারি পর্যায়ে পিস হিসাবে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করা হলেও দেখার কেউ নেই।
বাদামতলী ফল আড়তদার হাসান সিকদার বলেন, কয়েক বছর ধরে খুচরা বিক্রেতারা তরমুজ বিক্রিতে ক্রেতার পকেট কাটছে। তারা আমাদের কাছ থেকে কম দামে পিস হিসাবে তরমুজ কিনে কেজি হিসাবে বিক্রি করে দ্বিগুণেরও বেশি লাভ করছে। এটা ঠিক নয়। নয়াবাজারের খুচরা ফল বিক্রেতা মো. জাকির বলেন, আমরা পিস হিসাবে কিনে আনি, এটা সত্য। মাঝেমধ্যে পিস হিসাবেও বিক্রি করি। কিন্তু রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের চাঁদা দিয়ে খুচরা পর্যায়ে ফল এনে বিক্রি করতে হয়। এছাড়া লাইনম্যানকেও টাকা দিতে হয়। সঙ্গে পরিবহণ ভাড়া যোগ করতে হয়। এ কারণে পিস হিসাবে বিক্রি করে লাভ হয় না। তবে খুচরায় কেজি হিসাবে তরমুজ বিক্রি করলে কিছু লাভ হয়। এছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পণ্যের দাম নিয়ে সব স্তরেই কারসাজি করা হচ্ছে। রমজান ঘিরে নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের ফলের দামও বেশি রাখা হচ্ছে। এতে ক্রেতার স্বস্তি নেই। এসব বিষয়ে তদারকি সংস্থার কঠোর মনিটরিং করা দরকার।
বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, তরমুজ বিক্রিতে কারসাজি হচ্ছে। অনেকে বেশি মুনাফা করতে তরমুজ কেজি হিসাবে বিক্রি করছে, তা রোধে তদারকি করা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, তরমুজ কেজি দরে বিক্রি হবে নাকি পিস দরে বিক্রি হবে, এ বিষয়ে কৃষি বিপণন আইনে স্পষ্ট কোনো কথা উল্লেখ নেই। তবে কেউ পিস দরে কিনলে তাকে অবশ্যই পিস দরে বিক্রি করতে হবে। তা না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।