জুমবাংলা ডেস্ক: ট্রাকে করে ফলের আড়তে তরমুজ নিয়ে এসেছেন বিক্রির উদ্দেশ্যে পরশ মন্ডল। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও ক্রেতার দেখা মিলছে না। কখন তরমুজ বিক্রি হবে। আর বিক্রি হলেও কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাবেন কিনা সেই দুশ্চিন্তায় নিয়ে আড়তে বসে আছেন তিনি। খুলনার দাকোপ উপজেলা থেকে ট্রাকে করে শহরের কদমতলা ফলের আড়তে তরমুজ আনার পর এ চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, খুলনার কদমতলার সর্ববৃহৎ ফলের আড়তে ট্রাক ট্রাক তরমুজ আসছে। বাজারে থাকা আড়তদারদের প্রতিটি ঘরে তরমুজে সয়লাব। সেগুলো বিক্রি না হওয়ায় অনেক চাষি ট্রাক থেকে তরমুজ নামাতে পারছেন না। ফলে চাষিরা চরম বিপাকে পড়েছেন। বাজারে ৪ থেকে ৮ কেজি ওজনের তরমুজ গড়ে প্রতি পিস ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে পাইকারি প্রতি কেজি তরমুজ ৪ থেকে ৫ টাকা পড়ছে। তবে চাষিরা ট্রাক ভাড়া, লেবার খরচ দিয়ে প্রতি পিস তরমুজে ৫ থেকে ৭ টাকা পাচ্ছেন। অনেকটা পানির দরে তরমুজ বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আড়তদার ও চাষিরা। যা দিয়ে তাদের লাভ তো দূরের কথা খরচই উঠছে না।
দাকোপ উপজেলার খোটাখালী গ্রামের পরশ মন্ডল বলেন, ক্ষেত থেকে তরমুজ কেটে ট্রাকে লোড দিয়ে আড়তে এসেছি লাভের আশায়। কিন্তু এখানে এসে ক্রেতার দেখা পাইনি।
তিনি বলেন, গত বছর চার বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে দুই লাখ টাকা কেনাবেচা করেছিলাম। লাভও হয়েছিলো। লাভের আশায় এবার ৬ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছিলো। কিন্তু বাজারে এসে দেখি বাজার খারাপ (দাম কম)। মূল্য কত কি যে হবে তাও বলতে পারি না।
কৌলাশগঞ্জের কৃষক অসীত রায় বলেন, এ বছর প্রথম চার বিঘা জমিতে তরমুজের ক্ষেত করেছি। সবমিলিয়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আজ ১ হাজার ৮০০ পিস তরমুজ ২২ হাজার টাকায় ট্রাক ভাড়া করে নিয়ে আসছি। যার মধ্যে ৮৪৫টি তরমুজ বিক্রি করেছি ২১ হাজার টাকায়। লাভ তো দূরের কথা এখনো ট্রাক ভাড়াই ওঠেনি। বাকি যে তরমুজ রয়েছে তা বিক্রি হবে কিনা সন্দেহ আছে।
তন্ময় ট্রেডার্সের আড়তদার এসএম সেলিম বলেন, তরমুজ নিয়ে বিপদে পড়ে গেছি। ক্ষেত থেকে মাল তুলে এনে বেচাকেনা করে গাড়ি ভাড়ার টাকাও পাচ্ছি না। বাজারে তরমুজের সরবরাহ অনেক, কিন্তু ক্রেতা নেই। সকালে ১০০ পিস তরমুজ ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি, যে মাল ঈদের আগে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলাম।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ১৩ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে দাকোপে ৭ হাজার ৬২৫ হেক্টর, বটিয়াঘাটায় ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর, পাইকগাছায় ১ হাজার ৫১০ হেক্টর, কয়রায় ৮৯৫ হেক্টর, ডুমুরিয়ায় ৩৫০ হেক্টর, রূপসায় ৫ হেক্টর, তেরখাদায় ৩ হেক্টর ও ফুলতলা উপজেলায় এক হেক্টর এবং মেট্রো থানায় এক হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। দেশ রূপান্তর
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, খুলনায় এবার তরমুজের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে চাষিরা তরমুজের ভালো দাম পেয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে তরমুজের দাম কিছুটা কম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।