ভারতে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশটির প্রযুক্তি সংস্থা জোহো দ্বারা তৈরি চ্যাট অ্যাপ আরাত্তাই। সংস্থার দাবি, ‘গত সপ্তাহে মাত্র সাত দিনে’ এটি সাত মিলিয়নবার ডাউনলোড হয়েছে, যদিও নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। মার্কেট অ্যানালিটিক্স ফার্ম সেন্সর টাওয়ার জানিয়েছে, আগস্টে আরাত্তাইয়ের ডাউনলোড ছিল ১০ হাজারের কম।
আরাত্তাই তামিল শব্দ যার অর্থ হলো ‘বিনোদনমূলক আড্ডা’, ২০২১ সালে সফট লঞ্চ করা হয়েছিল, তবে তখন খুব কম মানুষই জানত।
হঠাৎ জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে কেন্দ্র সরকারের স্বনির্ভর ভারতের প্রচেষ্টা, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের প্রভাব মোকাবেলায় দেশীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর আহ্বান করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মন্ত্রীরা বারবার বলেছেন—‘মেড ইন ইন্ডিয়া, স্পেন্ড ইন ইন্ডিয়া’।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধরমেন্দ্র প্রধান এক্সে পোস্ট করে বলেছিলেন, ‘ভারতে তৈরি অ্যাপ ব্যবহার করুন এবং সংযুক্ত থাকুন।’ এরপর কয়েকজন মন্ত্রী ও ব্যাবসায়িক নেতারাও আরাত্তাইয়ের প্রচার শুরু করেন।
জোহোর সিইও মণি ভেম্বু বলেছিলেন, ‘শুধু তিন দিনে দৈনিক সাইন-আপ তিন হাজার থেকে তিন লাখ ৫০ হাজারে উঠে গেছে। ব্যবহারকারীর সক্রিয়তা ১০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।’
যদিও আরাত্তাই-এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা হোয়াটসঅ্যাপের ৫০০ মিলিয়নের কাছাকাছি নয়। ব্যক্তিগত বার্তা থেকে ব্যবসা পরিচালনা পর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপ ভারতীয়দের দৈনন্দিন জীবনের অংশ।
আরাত্তাই হোয়াটসঅ্যাপের মতো মেসেজ পাঠানো, ভয়েস ও ভিডিও কল করার সুবিধা দেয়। এটি কম স্পিড ইন্টারনেট এবং লো-এন্ড ফোনেও চলার উপযোগী। অনেক ব্যবহারকারী ডিজাইন ও ইন্টারফেস পছন্দ করেছেন এবং দেশীয় অ্যাপ হওয়ায় গর্ব প্রকাশ করেছেন।
তবে আরাত্তাইয়ের ব্যবহারকারীর ডেটা নিরাপত্তা নিয়ে কিছু উদ্বেগ রয়েছে। যদিও ভিডিও ও ভয়েস কল এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন দ্বারা সুরক্ষিত, বার্তায় তা প্রয়োগ করা হয়নি।
সংস্থাটি এ সুরক্ষা বার্তায় আনতে কাজ করছে। আরাত্তাই প্রথম ভারতীয় অ্যাপ নয় যা আন্তর্জাতিক বড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতিস্থাপনের স্বপ্ন দেখেছে।
অতীতে কু এবং মজ-এর মতো ভারতীয় অ্যাপগুলো যথাক্রমে এক্স এবং টিকটকের বিকল্প হিসেবে প্রচারিত হয়েছিল, তবে প্রাথমিক সাফল্যের পর এগুলো জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেনি। এমনকি একসময় হোয়াটসঅ্যাপের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত শেয়ারচ্যাট তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা কমিয়েছে।
দিল্লি ভিত্তিক প্রযুক্তি লেখক ও বিশ্লেষক প্রসান্ত কে. রয় বলেন, হোয়াটসঅ্যাপের বিশাল ব্যবহারকারীর সংখ্যা এবং প্ল্যাটফর্মে থাকা ব্যবসা ও সরকারি পরিষেবার কারণে আরাত্তাই-এর জন্য এতে প্রবেশ করা কঠিন হবে।
তিনি আরো বলেন, আরাত্তাই-এর সফলতা নির্ভর করবে নতুন ব্যবহারকারী আনার পাশাপাশি তাদের ধরে রাখার সক্ষমতার ওপর, যা কেবল জাতীয়তাবাদী প্রচারণা দিয়ে সম্ভব নয়। তিনি যোগ করেন, ‘পণ্যের গুণগত মান ভালো হতে হবে, তবু এটি বিশ্বের বিলিয়ন বিলিয়ন ব্যবহারকারীর অ্যাপ প্রতিস্থাপন করতে পারবে কি না, তা সন্দেহজনক।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।