লাইফস্টাইল ডেস্ক : দেশের ১৩টি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে ভারী বর্ষণ এবং ভারত থেকে আসা পানির ঢলে। এতে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর-ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন ৩৬ লাখ মানুষ। এখন পর্যন্ত ৪ জেলায় ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে দক্ষিণের ৯ নদীর পানি।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) পর্যন্ত সব মিলিয়ে এখন দেশের ১৩টি জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব জেলা হলো ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙ্গামাটি ও সিলেট।
জানা গেছে, আকস্মিক এই বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনীর মানুষ। কোথাও বুকপানি, কোথাও গলাপানি আর কোথাও কোথাও একতলা পর্যন্ত ডুবে গেছে। অন্যান্য উপজেলার চিত্রও প্রায় একই। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।
এদিকে, অনেকেই ঘর থেকে কিছু বের করতে না পেরে খালি হাতে ছুটে এসেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। দুর্গত এলাকায় এখন দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট।
বন্যার পানিবাহিত রোগ থেকে বাঁচার উপায়
বন্যা প্রকৃতপক্ষে প্রাকৃতিক এক বিপর্যয়। বন্যার দূষিত পানি মানুষের জীবনযাত্রা বিপন্ন করে তোলে। বন্যায় সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার বেড়ে যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় শিশুরা। বিশুদ্ধ পানির অভাবে দেখা দেয় নানা সমস্যা। ডায়রিয়া, কলেরা, রক্ত আমাশয়, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, ভাইরাল হেপাটাইটিস, পেটের পীড়া, কৃমির সংক্রমণ, চর্মরোগ, চোখের অসুখ প্রভৃতি মহামারি আকার ধারণ করে ছড়িয়ে পড়ে। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে হবে: বন্যার সময় পানির উৎস সংক্রমিত হয়ে যায়। এ কারণে পানি থেকে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে যে পানি ওঠে তার প্রধান উৎস বিভিন্ন স্যুয়ারেজ লাইন। নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় স্যুয়ারেজ লাইনে পানি নিষ্কাশনও সম্ভব হয় না। রাজধানী ও বন্যাকবলিত এলাকায় শুধু বিশুদ্ধ পানির অভাবে বিস্তার লাভ করে পানিবাহিত রোগগুলো। ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, কৃমির সংক্রমণ দেখা দেয় মহামারি হিসেবে। ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যু ঘটে অনেকের। পানির অপর নাম জীবন; কিন্তু দূষিত পানির অপর নাম এখন মৃত্যু-মহামারি। সুতরাং বন্যায় প্রথমেই পানির বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। পানিকে বিশুদ্ধ করে খাওয়া ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে পারলে এসব রোগের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব হবে।
বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য পানি ভালো মতো ফুটিয়ে নিতে হবে। পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে তারপর পান করতে হবে এবং সব কাজে ব্যবহার করতে হবে।
টিউবওয়েলের নিরাপদ পানি পান করা ও সব কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে টিউবওয়েলের পানি এক ঘণ্টা চেপে ফেলানোর পর তা সংগ্রহ করতে হবে। অবশ্য টিউবওয়েলের পানিও ফুটিয়ে নেওয়াটা নিরাপদ।
বন্যার পানিতে টিউবওয়েল ডুবে গিয়ে থাকলে সেই টিউবওয়েলের পানি খাওয়া নিরাপদ নয়। এ ক্ষেত্রে টিউবওয়েলের ওপরের অংশ বাকেটসহ খুলে নিয়ে, পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানি দিয়ে বাকেট ধুয়ে পুনঃস্থাপন করতে হবে। এক কলস পানিতে তিন-চার চা চামচ ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে টিউবওয়েলের ভেতর এই পানি ঢেলে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। এরপর একটানা আধা ঘণ্টা চেপে টিউবওয়েলের পানি বের করে ফেলে দিলে টিউবওয়েলের পানি খাওয়ার উপযোগী হবে। ব্লিচিং পাউডার পাওয়া না গেলে একটানা এক ঘণ্টা চেপে টিউবওয়েলের পানি বের করে ফেলতে হবে। এক ঘণ্টা পর টিউবওয়েলের পানি খাওয়ার উপযোগী হবে। তবে এ সময় নিরাপত্তার জন্য টিউবওয়েলের পানিও ভালোমতো ফুটিয়ে নেওয়া উচিত। পানি ছেঁকে ১০ মিনিট টগবগিয়ে ফুটিয়ে তারপর ঠান্ডা করতে হবে।
পানি ফুটানোর ব্যবস্থা না থাকলে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করতে হবে। প্রতি দেড় লিটার খাবার পানিতে ৭ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম হ্যালোজেন ট্যাবলেট (হ্যালো ট্যাব), তিন লিটার পানিতে ১৫ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট এবং ১০ লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা রেখে দিলে পানি বিশুদ্ধ হয়।
তবে এতে অন্যান্য জীবাণু মরলেও ভাইরাসজাতীয় জীবাণু মরে না। একমাত্র টগবগিয়ে পানি ফুটানোর ফলে ভাইরাস জীবাণু ধ্বংস হয়। অনেকে ফিটকিরি ব্যবহার করতে আগ্রহী; কিন্তু ফিটকিরিতে পানি জীবাণুমুক্ত হয় না। যদি অন্য কোনো ব্যবস্থার সুযোগ না থাকে, তাহলে ফিটকিরি ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ২৫ লিটার পানিতে ২ চা চামচ গুঁড়া ফিটকিরি ভালোভাবে মিশিয়ে এক ঘণ্টা পর পান করা যেতে পারে।
পানি বিশুদ্ধ করার জন্য বাসার পানির ট্যাংকিতে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতি এক হাজার লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার এক ঘণ্টা রাখলে পানি বিশুদ্ধ হবে। তবে এ ক্ষেত্রেও ভাইরাস জীবাণু ধ্বংস হবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।