জুমবাংলা ডেস্ক : জমিজমা সংক্রান্ত ঝামেলা অনেকেকেই পোহাতে হয়। একটি পরিসংখ্যান বলছে, এই মূহুর্তে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখের মত, আর এসব মামলার বড় অংশটি অর্থাৎ প্রায় ৬০ শতাংশ মামলা জমিজমা সংক্রান্ত নানা ধরণের বিরোধের সূত্রে দায়ের করা। এই তথ্যের বোঝা যাচ্ছে কত বিস্তৃত এই সমস্যাগুলো।
তবে কিছু সমস্যা আছে যেগুলো একটু সচেতন হলেই সমাধান করা সম্ভব। যেমন জমির দলিলে ভুল। সাধারণ নাগরিকগণ এখনও মনে করে থাকে যে, জমির দলিল একবার ভুল হয়ে গেলে তা আর সংশোধন করা যায় না—এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। জমির দলিলের যেকোনো ভুল হলে সংশোধন করা হয়। চলুন জেনে নেই।
জমির দলিলে ভুল
দলিল রেজিষ্ট্রির পর তাতে দাগ, খতিয়ান, মৌজা, চৌহদ্দি বা নামের বানানে কোনো প্রকার ভুল ধরা পড়লে ৩ বছরের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে দলিল সংশোধনের মামলা করতে হবে। ৩ বছর পর এ ধরনের মামলা তামাদির কারণে বারিত হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সংশোধন মামলা করা যায় না, তবে তখন ঘোষণামূলক মামলা করা যায়।
এক্ষেত্রে আদালতের দেওয়া মামলার রায়ই হচ্ছে সংশোধন দলিল। রায়ের একটি সার্টিফাইড কপি আদালত থেকে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিষ্টারের কাছে পাঠানো হলে সাব-রেজিষ্টার ওই রায়ের আলোকে সংশ্লিষ্ট ভলিউম সংশোধন করে নেবেন। এক্ষেত্রে আর নতুন করে কোনো দলিল করার প্রয়োজন নেই।
সংশোধন করলে নতুন করে দলিল করতে হয়? জমি রেজিস্ট্রি করার পর অনেক সময় দেখা যায় দলিলে কোনো জায়গায় হয়তো ভুল হয়েছে। এ নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। দলিল রেজিস্ট্রির পর তাতে দাগ, খতিয়ান, মৌজা, চৌহদ্দি বা নামের বড় ধরনের কোনো ভুল ৩ বছরের মধ্যে ধরা পড়লে তা খুব সহজেই সংশোধন করা যায়। এরূপ ভুল হওয়ার ৩ বছরের মধ্যে দেওয়ানি আদালতে দলিল সংশোধনের মামলা করতে হবে। ৩ বছর পর এরূপ মামলা তামাদির দ্বারা বারিত হয়ে যায়। তাই তখন আর সংশোধন মামলা করা যায় না, তবে ঘোষণামূলক মামলা করা যায়। এরূপ মামলার রায়ই হল সংশোধন দলিল। রায়ের ১ কপি আদালত হতে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার এর নিকট পাঠানো হলে সাব-রেজিস্ট্রার উক্ত রায়ের আলোকে সংশ্লিষ্ট ভলিউম সংশোধন করে নেবেন, ফলে নতুন করে কোনো দলিল করার আর কোন প্রয়োজন নেই (সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ৩১ ধারা)।
সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক সংশোধন
দলিল রেজিস্ট্রির পর তাতে দাগ, খতিয়ান বা নামের ছোট-খাটো কোনো ভুল ধরা পড়লে এবং যে ভুল সংশোধন করলে দলিলের মূল কাঠামো বা স্বত্বেও কোনো পরিবর্তন ঘটবে না সেরূপ ভুল সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার বরাবরে আবেদন করা যাবে। সাব-রেজিস্ট্রার এই ধরনের ছোট-খাটো ভুল সংশোধন করতে পারেন।
দলিলের সরকারি নমুনা অনুসরণ করে দলিল তৈরি করা হলে ভুলের সম্ভাবনা অনেক কমে যায় / দলিল প্রুফ বা দলিল একাধিকজনকে দিয়ে প্রুফ রিডিং করালে বড় ধরনের ভুলত্রুটি থাকে না। দক্ষ ও অভিজ্ঞ দলিল লেখক নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তার আপনার জমির দলিল লেখক তালিকাভূক্ত কিনা তা যাচাই করে নিবেন।
দলিল লেখার সময় ক্রেতাকে যেসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে
১. দলিল সম্পাদনকারী তথা জমি দাতা (বিক্রেতা) আইনের দৃষ্টিতে সাবালক ও সুস্থ মস্তিষ্কে সম্পন্ন কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে ৷
২. পুরাতন দলিল এবং নতুন দলিলের বিভিন্না জায়গা যেমন (ক) শিরোনাম (খ) সাফ কবলা (গ) বায়নাপত্র ইত্যাদি খেয়াল করতে হবে ৷
৩. ক্রেতা যে জমিটি কিনতে যাচ্ছেন সেই প্রস্তাবিত জমিটির পরিমাণ বিক্রয় মূল্য (বায়না দলিল হলে বায়নায় পরিশোধিত টাকা এবং বাকী টাকা) পক্ষ পরিচয় তথ্য (১) দলিল গ্রহীতা (২) দলিল দাতা অথবা (ক) প্রথম পক্ষ (খ) দ্বিতীয় পক্ষ উভয় পক্ষের পূর্ণ নাম, ঠিকানা, পেশা, ধর্ম ইত্যাদি।
স্বত্ত্বের বর্ণনা: জমি দাতার মালিকানার ভিত্তি, দলিল মূলে হলে পূর্বের দলিলের নম্বর ও তারিখ পর্চা/খতিয়ান ইত্যাদি ৷
৪. জমির বিক্রেতা যদি জমিটি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে তাহলে মূল মালিকের সাথে বিক্রেতা যোগ সূত্র/সম্পর্ক সঠিক আছে কিনা তা জেনে নিতে হবে ।
৫. দলিলে প্রস্তাবিত জমির তফশিল যেমন জেলার নাম, উপজেলার নাম, রেজিস্ট্রি অফিসের নাম, মৌজার নাম, দাগ নং খতিয়ান নম্বর জমিটি কোন শ্রেণীর যেমন ভিটা, নাকি দলা, নাকি ডাঙ্গা নাকি জলাভূমিতে তা দেখতে হবে ।
৬. ক্রেতা যে জমিটি ক্রয় করতে চাচ্ছে সেই জমিটির চৌহদ্দি ঠিক আছে কিনা অর্থাৎ উত্তর, দক্ষিণ পূর্ব, পশ্চিম পাশের জমির বর্ণনাসহ মালিকের নাম উল্লেখ করতে হবে।
৭. জমি বিক্রেতা বা দলিল দাতা দলিলের ১ম পৃষ্ঠার উপরের ডান পাশ্বের নীচ থেকে উপরের দিকে তার নিজ নাম স্বাক্ষর করবেন অথবা নিরক্ষর হলে নিজ নামের উপরে টিপ সহি প্রদান করেছেন কিনা তা দেখতে হবে। এছাড়াও জমি বিক্রেতা বা দাতা দলিলের শেষ পৃষ্ঠার নীচে স্বাক্ষর বা টিপ সহি করবেন। তবে দলিলের প্রতি পৃষ্ঠায় দাতার স্বাক্ষর বা টিপ সহি দিলে ভালো হয়।
৮. জমির বিক্রেতা দলিলের শেষ পৃষ্ঠার নীচে যে জায়গায় তার নিজ নাম স্বাক্ষর বা টিপ সহি করেছেন ঠিক তার নীচে উক্ত দলিলটির লেখক তার নাম স্বাক্ষর করবেন; এরপর কমপক্ষে ২ জন সাক্ষী এবং অপর একজন জমির বিক্রেতাকে সনাক্ত করে সনাক্তকারী হিসাবে স্বাক্ষর করবেন।
৯. দলিলে যতদূর সম্ভব কাটাকাটি, ঘষামাঝা, অষ্পষ্টতা এড়াতে হবে তবুও যদি কোনরূপ ভুল ক্রটি ঘষামাঝা কাটাকাটি হয়েও যায় তাহলে সেক্ষেত্রে উক্ত কাটাকাটি বা ঘষামাঝা যুক্ত লাইন ও শব্দের ক্রম উল্লেখ করে দলিলের শেষাংশে কৈফিয়ত লিখে দলিল লেখককে তার নীচে স্বাক্ষর করতে হবে।
১০. জমির তফশিল লেখার সময় প্রত্যেক দাগে মোট জমির পরিমাণ কত এবং আদ্যকার বিক্রয় দলিলে উক্ত দাগের মধ্য হতে কত একর বা শতাংশ জমি দেয়া হচ্ছে তা প্রতি ক্ষেত্রে লিখে নিতে হবে। তবে উল্লেখ্য যে, কোন অবস্থাতেই কয়েকটি দাগের জমি একত্রে যোগ করে একর/শতাংশ লেখা উচিত হবে না।
১১. জমির ক্রেতাকে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে তা হলো বিভিন্ন জরিপের দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বর, যাতে দলিল লেখকের মাধ্যমে সঠিকভাবে লিখানো হয়। এজন্য জমির ক্রেতাকে জমি ক্রয় করার পূর্বেই তহসিল অফিস হতে জমির সঠিক দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বর জেনে নিতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।