জুমবাংলা ডেস্ক : খারাপ মানুষের চেয়ে বেশি বিপদজনক মানুষ হলো ভন্ড মানুষ। আর আমরা হলাম ভন্ড মানুষ।
দীর্ঘদিন একাকী থাকা একজন নারী, তার চেয়ে অনেক কম বয়সি এক ছেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। সমাজের চোখ এড়িয়ে তারা ঠিকঠাক সংসারও করছে। কিন্তু যখনই মিডিয়ার চোখে পড়েছে সেটিকে হট নিউজ বানিয়েছে। সিংহভাগ মানুষ সেই বিয়ে নিয়ে রসালো আলোচনা করেছে, কুরুচিপুর্ণ মন্তব্য করেছে।
আজ সেই নারী আত্মহত্যা করেছেন। এখন পর্যন্ত তার আত্মহত্যার নিশ্চিত কারণ জানা যায়নি, তবে যতটুকু শোনা গিয়েছে, তার পরিবার বিয়ে মেনে নেয়নি, সমাজের কটুকথা ইত্যাদির মানসিক যন্ত্রণা সইতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
ভদ্র মহিলা আত্মহত্যা করার পরে, একটি অংশ মিডিয়ার দোষ দেয়া শুরু করেছে। মিডিয়ার দোষ আছে, কিন্তু তারা যেভাবে মিডিয়ার দোষারোপ করছে, তাতে মনে হচ্ছে, জনগণ সব ধোয়া তুলসী পাতা হয়ে গেছে। ভাবটা এমন যে, এই দেশের জনগণ খুবই ভাল, তারা অন্যর ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলায় না।
মাস খানেক আগে একটি ভিডিও দেখলাম, যেখানে একজন লুঙ্গী পরিহিত লোক, বৃষ্টির মধ্যে ছাদে তার স্ত্রীকে কোলে নিয়েছেন। সিম্পল ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। কে যেন সেই ভিডিও আবার গোপনে তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছে। যথারীতি সেখানে প্রচুর বাজে মন্তব্য। স্বামী-স্ত্রী হোক, যাই হোক, কোলে তুলুক আর নাই বা তুলুক, কারো অধিকারই নেই, অনুমতীহীন ভাবে আরেকজনের ছবি-ভিডিও তুলে সামাজিক মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া। যারা এগুলো করে তাদের কিছু হয়না। কেউ কিছু বলেনা।
এই দেশের ভালবাসাহীন মানুষগুলো অন্যর ভালবাসা সহ্য করেনা, সব সময় নাক গলানো তার অধিকার মনে করে। একটা জিনিস ভাবেন, আমি কারো খাইনা, পড়িনা, অথচ একদম অপরিচিত মানুষ এসে আমার ব্যাক্তিগত বিষয়ে নাক গলাবে এবং আমার কিছু করার থাকবে না।
কেউ যদি পার্কে প্রেম করতে যায়, তাহলে সেই প্রেমিক জুটিকে হুমকি দেয়া, ভয় দেখানো, গোপনে ভিডিও করে ছেড়ে দেয়া আমার নাগরিক অধিকার। দুদিন পর পর দেখি ম্যাজিস্ট্রেট এসে পার্কে ঢুকে মানুষের প্রেমে বাগড়া দেয়। প্রেম-ভালবাসা-যৌনতা এগুলো মানুষের প্রাকৃতিক বিষয়। অথচ এখানেও বাধা দেয় সমাজ।
আপনার সমাজ, রাষ্ট্র প্রেম পছন্দ নাই করতে পারে। মেনে নিলাম। কিন্তু চারিদিকে প্রেমের গান, চলচ্চিত্র, বই, সারাদিন আশেপাশে প্রেমে আগ্রহী করে গড়ে তোলার উপাদান রাখবেন, অথচ প্রেম করতে গেলে সমস্যা? তাহলে এইসব প্রেমের গান, চলচ্চিত্র বন্ধ করেন।
প্রেম, মানুষের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আপনাদের যত আগ্রহ, যত বাধা, তার ১০% বাধা যদি এই দেশের অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রদর্শন করতেন, তাহলে এই দেশের চিত্রই পাল্টে যেতো। এই দুঃখে নচিকেতা বলেছিলেন, “প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া এই দেশে অপরাধ ঘুষ খাওয়া কখনই নয়।”
কে কি খেলো, কাকে বিয়ে করলো, কার সাথে হাত ধরে ঘুরলো এটাই এই জাতির সবচেয়ে আলোচনার বিষয়বস্তু। যারা এই ইস্যুতে গণমাধ্যমের দোষ দিচ্ছেন, তাদের দেখে আমরা হাসি লাগছে। মানুষের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে রসের গল্প করাতো আমাদের পরিবারের অংশ। আমাদের নাটক চলচ্চিত্রেও এই সকল ব্যক্তিগত বিষয়ের কুটনামীতে ভরপুর। কে কি খাবে, কি পরবে, কখন বাচ্চা নিবে, এগুলোতে মাথা ঘামানো আমাদের পরিবার থেকেই শেখানো হয়। আমার মনে হয়, আমাদের অধিকাংশ পরিবারেই এই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আরে সখিনা শুনেছিস, ওর না ডিভোর্স হয়ে গেছে। আরে সাদিয়া শুনেছিস, ফারজানার এত বয়স হয়ে গেছে, তাও বাচ্চা নিচ্ছেনা। আরে তুমি মাত্র একটা বাচ্চা নিয়েছ কেন? আরেকটা নাও। এত বয়স হয়ে গেছে, বিয়ে করছোনা কেন? সমস্যা! ডাক্তার দেখাও।
আমার পড়াশোনা, খাওয়া কোন কিছুতেই যার কোন অবদান নেই, সেও এসে বিয়ে, বাচ্চার ব্যাপারে, দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে আসে।
মাঝে মধ্যে ছেলেরা দেখি বলে, ছেলেরা বেকার মেয়ে বিয়ে করলে, মেয়েরা বেকার ছেলে বিয়ে করবে না কেন? ওই শিক্ষিকাতো বেকার ছেলেকেই বিয়ে করেছিল, তারপরেও আপনাদের কটু কথা থেকে রেহাই পায়নি। এই হলো আপনাদের ভন্ডামি। আমি এমনও মানুষ দেখেছি, যে নিজে দুই বেলা দুজনের সাথে রুটিন করে ডেটিং করে, সেও পর্যন্ত অন্য মানুষের প্রেমের বেলায় ছিঃ ছিঃ করে, প্রেম হারাম বলে ফতোয়া দেয়।
দোষ যতটা না মিডিয়ার তার চেয়ে বেশি আপনাদের পরিবারগুলোর। মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলানো পরিবার থেকেই বন্ধ করেন। পরিবারের কেউ এসব ব্যাপারে আলোচনা করতে আসলে থামিয়ে দিন। বলুন যে, গীবত করা, ব্যাক্তিগত বিষয়ে নাক গলানো কোন সুস্থ মানুষের আচরণ হতে পারেনা। নিজেদের পরিবারগুলো আগে ঠিক করেন। সাংবাদিক, মিডিয়া আকাশ থেকে পড়েনা। আমার আপনার পরিবার থেকেই এসব সৃষ্টি হয়, ওগুলো তারা পরিবার থেকেই শিখে আসে।
এটি একটি জুয়েলারী প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন। যেখানে কম বয়সী একটি ছেলে বয়স্ক মহিলাকে বিয়ে করেছেন। আর বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে, সত্যিকারের ভালবাসা সব সময়ই জয়ী হয়।
কোন ছেলে লম্বা মেয়ে বিয়ে করলো, কোন সাদা পুরুষ, কালো নারীকে বিয়ে করলো এই সব নিয়ে আশ্চর্য হওয়া বন্ধ করুন। মানুষ হোন।
– লেখাটি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।