স্পোর্টস ডেস্ক : বয়সে সৌরভ গাঙ্গুলির চেয়ে চার বছরের বড়, ভাই স্নেহাশিষ গাঙ্গুলি। ক্রিকেট খেলে দুনিয়া জুড়ে নাম কামাতে না পারলেও তারই ছোট ভাই সৌরভ গাঙ্গুলিকে ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিতে বড় ভাই স্নেহাশিষ গাঙ্গুলির অবদানের কথা সবার জানা।
কথাটা মুখ থেকে কেড়ে নিয়ে স্নেহাশিষ গাঙ্গুলি বললেন, ‘এটা ঠিক নয়। আমরা এক সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি। দুই জন একটা ব্যাট দিয়ে খেলেছি।’ বড় ভাই স্নেহাশিষ গাঙ্গুলির স্পর্শ ছিল, সৌরভ বড় হয়েছেন। শত কোটি মানুষের ক্রিকেট অধিনায়ক হয়েছিলেন। বাংলায় আরো ক্রিকেটার খেলেছেন। কিন্তু সৌরভের মতো সৌরভ ছড়িয়েছেন কজনা। নিজের ক্যারিয়ারের তুলনায় সেটা নিয়ে আফসোস নেই বড় ভাই স্নেহাশিষ গাঙ্গুলির। ভারতের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন স্নেহাশিষ। এরপর সংগঠক হিসেবে তার নাম ভারতীয় ক্রিকেট পাড়ায় বীজ বুনে। গড়ে ওঠেন সংগঠক হিসেবে, প্রতিষ্ঠা পান।
ছোট ভাই সৌরভের পর স্নেহাশিষ গাঙ্গুলি এখন ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গলের (সিএবি) সভাপতি। ভারতে এসে স্নেহাশিষ গাঙ্গুলির সাংগঠনিক দক্ষতার কথা শোনা গেল। কলকাতায় বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কয়টা ম্যাচ হবে, আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে কলকাতার ক্রিকেট পাড়ায় সংশয় ছিল। ভারতের মতো বিরাট জনগোষ্ঠীর এতো বড় দেশে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ক্রিকেট হবে অথচ কলকাতায় খেলা হবে না তা কি করে হয়।
বাঙ্গালির ক্রিকেট ক্ষুধা মেটাতে ইডেনে বিশ্বকাপ ম্যাচ আনতে গিয়ে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে এই সাবেক ক্রিকেটার স্নেহাশিষ গাঙ্গুলিকে। যখন ম্যাচ পাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা আলোর মুখ দেখল তখন স্নেহাশিষ গাঙ্গুলি আইসিসির সঙ্গে কথা বলে আরো বেশি ম্যাচ চাইলেন। বিশ্বকাপের একটা সেমিফাইনাল আয়োজন করতে চাইলেন। সেটা নিয়ে দৌড়ঝাঁপও নাকি কম হয়নি। কেনই বা ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড কলকাতায় সেমিফাইনালে ম্যাচ দেবে।
অনেকে স্টেট সেমিফাইনাল চেয়েছিল। সেমিফাইনাল ম্যাচই হবে দুইটা। বড় বড় শহর থাকতে কলকাতা কেন। এমনি এমনি বিসিসিআই দেয়নি। ভারত বর্ষে এতো বড় বড় স্টেডিয়াম থাকতেও কলকাতায় দিয়েছে। সাড়ে তিন মাস গ্রাউন্ডওয়ার্ক করেছেন সিএবির সভাপতি স্নেহাশিষ। বিশ্বকাপ আয়োজনে প্রেজেন্টেশন দেখে খুশি বিসিসিআই। শেষ পর্যন্ত সাংগঠনিক জোরেই বিসিসিআইয়ের কাছ থেকে একটা সেমিফাইনাল কেড়ে নিয়ে এসেছেন স্নেহাশিষ গাঙ্গুলি।
তিনি বলেন, ‘২৭ বছর পর ফিফটি ওভার বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচ করছি আমরা। ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল হয়েছিল ইডেনে। ভারত-শ্রীলঙ্কা খেলেছিল। ২৭ বছর পর আবার আমরা সেমিফাইনাল ম্যাচ আয়োজন করতে পারছি। সেমিফাইনালসহ পাঁচটা ম্যাচ কলকাতায় হবে। এটা আমরা একটা উপহার পেয়েছি। বাংলার দর্শকের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।’
সিএবির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আইসিসির প্রতিনিধিদল (শনিবার) ইডেন দেখে গেছেন। তারা ক্লিয়ারেন্স দেবেন এমন বিশ্বাস বাংলার ক্রিকেট কর্তাদের। কারণ আইপিএলে ইডেন পেয়েছে সেরা ভেন্যুর পুরস্কার। কর্তাদের কথায় স্পষ্ট বহু আগ থেকেই কলকাতার দর্শকদের কথা মাথায় রেখে ইডেন প্রস্তুত করা হচ্ছে। নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে এরই মধ্যে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন স্নেহাশিষ।
কলকাতায় শুধু কলকাতার দর্শকই আসবে না বাংলাদেশের দর্শকও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা খেলা দেখতে আসবেন। কী ভাবনা আছে বাংলাদেশ নিয়ে, ‘বিশ্বকাপ টিকিটের চাহিদা প্রচুর হবে। অনলাইনে টিকিট পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের ম্যাচ আছে। আমরা জানি বাংলাদেশকে টিকিট দিতে হবে। সেটা আমাদের মাথায় আছে। সেটা নির্ভর করে চাহিদা কতোটা। আর আমরা কতোটা টিকিট পাবো, সাপ্লাইয়ের একটা ব্যাপার আছে।’
অক্টোবরে বিশ্বকাপ। ভিসা জটিলতা এড়াতে স্নেহাশিষের পরামর্শ বাংলাদেশের যারা খেলা দেখতে আসতে চান তাদের জন্য স্নেহাশিষ বললেন, ‘এখন থেকে ভিসার জন্য আবেদন করে রাখুন।
ক্রিকেট খেলে সৌরভ গাঙ্গুলি দুনিয়া জয় করল। স্নেহাশিষ গাঙ্গুলি কেন সৌরভের মতো ক্রিকেটার হতে পারেনি? ‘সৌরভ সৌরভই। কে কার মতো হয় না হয় সেটা ব্যাখ্যা করা যায় না। সৌরভ সৌরভই-বললেন স্নেহাশিষ। কখনো কি সৌরভকে হিংসা হয় ? একদমই নয়, গর্ববোধ করি সে আমার ভাই। এতো বড় একটা ট্যালেন্ট, আবার নেক্সট কবে আসবে আমরা জানি না। তবে সে ম্যাজিশিয়ান কিনা জানি না। সৌরভ খুবই পরিশ্রম করতে জানে। ওর ব্রেনটাই অন্যরকম। বাংলার মানুষের কাছে সৌরভ ভেরি ভেরি স্পেশাল।’
বিশ্বকাপ ঘিরে ক্রিকেট দুনিয়ায় ইডেন গার্ডেন্স নিজেকে নতুন করে মেলে ধরবে। এজন্য জমকালো অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করতে যাচ্ছে সিএবি। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবে কে। সেই প্রশ্ন উঠলেও সরাসরি মুখ খোলেননি সিএবি’র কেউ। সিএবি’র ভেতরের গুঞ্জন বড় ভাই স্নেহাশিস যাকে ভেরি ভেরি স্পেশাল বলেছেন সেই বাঙলার ক্রিকেটের গর্ব সৌরভ গাঙ্গুলি অনুষ্ঠানের প্রদীপ জ্বালাবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।