জুমবাংলা ডেস্ক : রমজান মাস চলছে। ইফতারে যেসব ফল খাওয়া হচ্ছে তার মধ্যে আছে আনারসও। রীতিমতো হলদে পাকা আনারস! অভিজ্ঞ কৃষক ও কৃষি বিজ্ঞানীরা কিন্তু বলছেন, এখন আনারসের মৌসুম নয়। অনিবার্যভাবে তাই প্রশ্ন উঠে আসে, বাজারে হলুদ রঙের পাকা আনারস তাহলে এলো কোথা থেকে।
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আনারসের রাজধানী খ্যাত টাঙ্গাইলের মধুপুরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান। তিনি দেখতে পান মধুপুরের বেশির ভাগ বাগানে আনারস তেমন বড় হয়নি। খুব কম জমিতেই তোলার উপযোগী আনারস দেখা যাচ্ছে। এ সময় বেশ কয়েকজন আনারস চাষির সঙ্গে কথা বলেন অধ্যাপক নূর আলী খান।
চাষিরা তাঁকে জানান, যাঁরা পাকা আনারস বাজারে দিচ্ছেন তাঁরা অবশ্যই হরমোনসহ রাসায়নিক ব্যবহার করেছেন। কারণ তা না হলে এ সময় আনারস পাকা সম্ভব নয়।
রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রায় প্রতিটি ফলের দোকানে আনারস পাওয়া যাচ্ছে। এ প্রতিবেদক বাজার থেকে সম্প্রতি আনারস কিনেছেন এমন কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলেন।
তাঁদের সবারই অভিযোগ, দেখতে পাকা হলেও এ আনারসগুলো খেতে বিস্বাদ, মিষ্টিও নেই বললেই চলে।
ঢাকার কাফরুলে রাস্তা থেকে আনারস কেনা মনির হোসেন নামের একজন ক্রেতা বললেন, বাজারে দুই ধরনের আনারস পাওয়া যায়। একটি মধুপুরের আরেকটি রাঙামাটির। মধুপুরের আনারস আকারে বড় হয় আর রাঙামাটিরটি ছোট। রাঙামাটির আনারসটি সারা বছরই হয়।
তিনি মধুপুরের আনারস কিনে ঠকেছেন। কারণ এটি অকালে কৃত্রিমভাবে পাকানো হয়েছে।
আশরাফুল ইসলাম নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘আনারস খুবই ভালো একটি ফল। কিন্তু আনারসের নামে যদি বিষ খেতে হয় তবে তা শরীরের জন্য হুমকিস্বরূপ। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে মনিটরিং করার দাবি জানাচ্ছি।’
ঢাকার ইব্রাহিমপুরের আনারস বিক্রেতা লোকমান হোসেন বলেন, ‘এখন প্রতিটি আনারস ৬০ থেকে ৭০ টাকা করে বিক্রি করি। আনারসগুলো আমি ঢাকার কারওয়ানবাজার থেকে পাইকারিতে কিনে এনে খুচরা বিক্রি করি। যত দূর জানি এগুলো টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর থেকে কারওয়ান বাজারে আসে। আমি খুচরা কেনাবেচা করি শুধু, আর কিছু জানি না।’
ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারের সাবেক পরিচালক ড. এম এ রহিম বলেন, ‘এখন আনারসের মৌসুম না। ঢাকায় খুব হলদে পাকা যে আনারসগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো মাত্রাতিরিক্ত হরমোন ও ইথিলিন দিয়ে পাকানো হয়েছে। অতিরিক্ত হরমোন ও ইথিলিন ব্যবহার করলে আনারস পেকে যায় কিন্তু খেতে সুস্বাদু হয় না। মাত্রাতিরিক্ত হরমোন ও ইথিলিন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।’
বাকৃবি পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলামও অনুরূপ কথা বললেন। তিনি বলেন, ‘অধিক মুনাফা তথা দ্রুত টাকা হাতে পাওয়ার লোভে কিছু অসাধু চাষি আনারস পাকাতে বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহার করছেন। এই ফল খাওয়ার কারণে মানুষের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হচ্ছে। জমিতে এসব রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে মাটি, পানি, বায়ু তথা পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।’
টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, ‘এখানকার আনারসের মৌসুম মূলত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত। অল্প কিছু ক্ষেত্রে আগাম আনারস চাষ হয়। যদি আগাম ফল পাকাতে হরমোন কিংবা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় তাহলে তা পাকবে, কিন্তু খেতে সুস্বাদু হবে না। অন্যদিকে স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকারক হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।