জুমবাংলা ডেস্ক : কার্গো জাহাজ ছিনতাই। সেই জাহাজের ক্রুদের ধরে সোমালিয়া নিয়ে যাওয়া। এরপর সবাইকে গায়েব করে দেওয়া। পূর্ব আফ্রিকায় একসময় এটি প্রায় চিরায়ত নিয়মে পরিণত হয়েছিল। আর তাতে জড়িয়ে ছিল সোমালিয়ার জলদস্যুরা। বলতে গেলে তারা জীবিকাই নির্বাহ করে আসছে এভাবে।
তবে, এ নিয়ে বেশ বিতর্কও রয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন, এসব ছিনতাই হতো অনেকটা রবিনহুড স্টাইলে। সাগরে অবৈধভাবে যারা মাছ ধরছেন, তাদের সর্বস্ব লুট করে গরীবদের বিলিয়ে দিতেন এসব জলদস্যুরা। তবে, এই মতের পক্ষে কোনো শক্ত প্রমাণ নেই।
গত ৭ বছর ধরে এই ঘটনা তেমন একটা দেখা যায়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও মাল্টার পতাকাবাহী এমভি রুয়েন সফলভাবে ছিনতাই করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা।
যদিও এমভি রুয়েন নিজেদের কবজায় রাখতে পারেনি তারা। এমনকি জলদস্যুদের দলও এখন ভারতে আছেন সাজার অপেক্ষায়। সুদিনের আশায় সাগরে নামা জলদস্যুদের দুর্দিনেই ফিরে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।
এর আগে এভাবে একের পর এক জাহাজ ছিনতাই রুখতে ২০১১ সালে সাগরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। থেমে যেতে হয় জলদস্যুদের। এবার তারা সাগরে ফিরেছেন মূলত কয়েকটি কারণে। এর মধ্যে একটি হলো হুতিদের হামলা।
গত ৭ অক্টোবর হামাস–ইসরায়েল সংঘাত শুরু হয়। এরপর থেকে আরব সাগরসহ বিভিন্ন জলপথে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করছে হুতিরা। এতে এসব জাহাজ পথ পরিবর্তন করছে, আর এই সুযোগটা নিচ্ছে জলদস্যুরা। জলদস্যুদের নজরদারি করা যুক্তরাজ্যের মেরিন ট্রেড অপারেশনস বলছে, গত মধ্য ডিসেম্বর থেকে ছিনতাই করে ছয়বার সোমালিয়া বন্দরে আনা হয় বিভিন্ন জাহাজ।
বছরখানেক আগে ফ্রান্সের ম্যারিটাইম সিকিউরিটি এজেন্সি এমআইসিএ জানায়, ২০২৩ সালে জলদস্যুদের আবারও উত্থানের আশঙ্কা রয়েছে। ওই বছর রেকর্ড নয়বার এ ধরনের আক্রমণ হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগই পুন্টল্যান্ডের কাছাকাছি নেওয়া হয়। বাংলাদেশের এমভি আবদুল্লাহও সেখানেই রয়েছে বলে জানা গেছে।
এমআইসিএর কমান্ডার এরিক জেসলিন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, সতস্ফুর্তভাবেই এ ধরনের হামলা বেড়ে গেছে। হুতির বিভিন্ন হামলাই এর অন্যতম কারণ। এ কারণে সাগরে মাছ ধরতেও সংকটে পড়তে হচ্ছে। ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরটি স্টাডিসের (আইএসএস) গবেষক তিমুথি ওয়াকার বলেন, গত বছরের এসব ঘটনার পরই ধারণা করা হয়েছিল, সাগরে আবারও সক্রিয় হতে যাচ্ছে জলদস্যুরা।
অতীতে যেমন হতো, বড় জাহাজ ছিনতাই করার আগে মাছ ধরার ট্রলার কিংবা ছোটখাটো জাহাজ ছিনতাই করতেন জলদস্যুরা। এবারও সেই পথেই এগিয়েছেন তারা। হুতির হামলা রুখতে কার্গো জাহাজগুলো লোহিত সাগরের নির্ধারিত পথ থেকে সরে গিয়ে অন্য পথে যাচ্ছে। এতে জলদস্যুদের বরং সুবিধাই হচ্ছে।
এ ছাড়া সোমালিয়ার বর্তমান অবস্থাও জলদস্যুদের স্বরুপে ফিরে আসার আরেকটি কারণ। সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনের কারণে উপকূলে নিরাপত্তা কমিয়ে দিয়েছে সরকার। এমনটাই বলছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের গবেষক ওমর মাহমুদ। আর এতেই অপরাধের জাল বিস্তার করতে পেরেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এ ব্যাপারে পুন্টল্যান্ড ম্যারিন পুলিশের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছিল একটি জায়গায়। সোমালিয়া উপকূলে মাছ ধরছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া, ইরান ও ইউরোপের মাছ ধরার ট্রলারগুলো। এভাবে মাছ ধরার কারণে সোমালিয়ার জেলেদের জীবিকা নির্বাহ হুমকির মুখে পড়ছে।
তবে, সাগরে স্বরুপে ফিরলেও আগের মতোই হয়তো দুর্দিনেই যেতে হচ্ছে জলদস্যুদের। এর কারণ সাগরে বিদেশি নৌবাহিনীর কঠোর নজরদারি ও যুদ্ধজাহাজের তাড়া। এর আগে ২০১১ সালে জলদস্যুরা সর্বশেষ সুসময় কাটিয়েছিলেন। এবার সেই সময় ফিরে পেতে চেয়েও পারছেন না তারা। আবারও দুর্দিনে আপতিত হচ্ছেন।
তাদের উপকূলে এখন জাপান, যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিলের নজরদারি। চলতি শতকের প্রথমদিকে নজরদারিতে এত কড়াকড়ি ছিল না। এখন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই জলদস্যুদের কার্যক্রম, গতিবিধি ও বণিকদের জাহাজ পর্যবেক্ষণ করছে বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনী। আর সে তুলনায় তাদের কাছে রয়েছে কেবল সেই মান্দাতার আমলের অস্ত্র ও জাহাজ চালনার কৌশল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।