জুমবাংলা ডেস্ক : ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামের জাহাজটি ইতিমধ্যেই আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে থাকা ২৩ নাবিককে জিম্মি করেছে দস্যুরা। বাঁচার আকুতি জানিয়ে অডিও বার্তা দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ সময় গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে এমভি আবদুল্লাহ নামের জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এরপর অন্তত ১০০ জলদস্যু জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। বর্তমানে ২৩ নাবিককে কেবিনে রাখা হয়েছে।
তবে জিম্মি হওয়ার আগমুহূর্তে গোপনে জাহাজ মালিকের কাছে এক অডিওবার্তা পাঠিয়েছেন চিফ অফিসার মো. আবদুল্লাহ। ৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের ওই অডিওবার্তায় জলদস্যুদের কবলে পড়ার পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে জানিয়েছেন জাহাজ ও তাদের বর্তমান পরিস্থিতিও।
মো. আবদুল্লাহ তার অডিও বার্তায় জানান, জাহাজটিতে খাবার পানির পরিমাণ কম। আবার যেসব কার্গো রয়েছে, সেগুলোও বিপজ্জনক। রয়েছে অগ্নিঝুঁকিও। সোমালিয়ান জলদস্যুরা জাহাজে ওঠার পর কার সঙ্গে কী আচরণ করেছে তাও বর্ণনা করেছেন তিনি। তার অডিও বার্তাটি তুলে ধরা হলো—
‘আসসালামুলাইকুম স্যার, আমি চিফ অফিসার আবদুল্লাহ বলছি।
আজকে সকালে জাহাজের সময় আনুমানিক সাড়ে ১০টার সময় একটা হাইস্পিড বোট আমাদের দিকে আসছিল। সঙ্গে সঙ্গে আমরা অ্যালার্ম দিয়ে ব্রিজে গেলাম। ওখান থেকে পরে সিটে চলে গেলাম। ক্যাপ্টেন স্যার ও সেকেন্ড অফিসার ব্রিজে ছিল। আমরা ঝিকঝাক কোর্স করলাম। তার পর এএসএস-এ করলাম। ইউকে এমটিকেও ট্রাই করলাম। কিন্তু তারা ফোন রিসিভ করেনি। এর মধ্যে জলদস্যুরা চলে এলো।
চলে আসার পর ওরা ক্যাপ্টন স্যার ও সেকেন্ড অফিসারকে জিম্মি করে। আমাদের ডাকল। আমরা সবাই গেলাম। আমাদের ডেকে কিছু গোলাগুলি করল। আমরা একটু ভয় পেয়েছি। সবাই ব্রিজে বসে ছিলাম। কারও গায়ে হাত তোলেনি। শুধু সেকেন্ড অফিসারকে একটু মারধর করেছে। তারপর ওরা আরেকটি স্পিডবোটে করে আরও কয়েকজন চলে এল। এভাবে মুহূর্তেই প্রায় ১৫-২০ জন চলে আসে।
এর কিছুক্ষণ পরে একটি বড় ইরানিয়ান ফিশিং বোট নিয়ে আরও জলদস্যু চলে আসে। ইরানিয়ান ওই ফিশিং বোটটি এক মাস আগে তারা জিম্মি করেছিল। এটি দিয়ে তারা এক মাস ধরে নতুন কোনো জাহাজ জিম্মি করার জন্য সাগরে ঘোরাঘুরি করছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সামনে পড়ে গেলাম।
এই ফিশিং বোটের তেল শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের জাহাজে থাকা পাম্প দিয়ে কিছু ডিজেল নিয়ে ওই বোটে দিয়েছে তারা। তেল দেওয়ার পর আমাদের জাহাজে উঠে জিম্মি করা ফিশিং বোটটিকে ছেড়ে দেয়। তারপর ওরা আমাদের সেকেন্ড ও থার্ড অফিসারকে নিয়ে জাহাজের ইঞ্জিন রুমে যায়। তাদের নিয়ে গিয়ে জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়। এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে কারও কোনো ক্ষতি হয়নি। জাহাজের কোনো ক্ষতি হয়নি। আমাদেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে সবাই ভয়ে আছি। ওরা খুব ভয় দেখাচ্ছে।
আমাদের জাহাজে ২০-২৫ দিনের খাবার পানি আছে। প্রায় ২০০ টনের মতো। সবাইকে বলেছি— এগুলো একটু সাবধানে ব্যবহার করতে। শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়ব আমরা। তবে একটা সমস্যা হচ্ছে, আমাদের জাহাজে কিছু কোল্ড কার্গো আছে। প্রায় ৫৫ হাজার টন। এগুলো একটু ডেঞ্জারাসও। ফায়ারেরও ঝুঁকি আছে। মিথেন বাড়ে। লাস্ট যখন অক্সিজেন মেপেছি তখন ৯-১০ শতাংশ লেভেল পেয়েছি। এটি নিয়মিত মনিটরিং করতে হয়। কোনো কারণে অক্সিজেন লেভেল বেড়ে গেলে বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে হবে। এটার একটু ব্যবস্থা করবেন, স্যার।
আমাদের জন্য দোয়া করবেন, স্যার। আমাদের পরিবারকে একটু দেখবেন, স্যার। সান্ত্বনা জানাবেন, স্যার। আসসালামুলাইকুম।’
এদিকে জাহাজে থাকা এক নাবিক জানান, প্রায় শতাধিক জলদস্যু ছোট ছোট বোটে করে প্রথমে জাহাজটিকে ঘিরে ফেলে। পরে তারা সশস্ত্র অবস্থায় জাহাজে উঠে এর নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ সময় নাবিক ও ক্রুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে জলদস্যুরা কোনো নাবিকের ওপর হামলা চালায়নি।
জানা যায়, জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই জলদস্যুরা সেটিকে সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে জাহাজটি সোমালিয়ার বন্দরে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন জাহাজটির এক নাবিক।
উল্লেখ্য, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি এস আর শিপিংয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছিল। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে দুবাই আসছিল পণ্যবাহী জাহাজটি। জিম্মি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাবিকদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মালিকপক্ষ।
কত রোজা পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম চলবে, আবারও জানাল দুই মন্ত্রণালয়
এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরেই সোমালীয় জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের এমভি জাহানমণি নামে অন্য একটি জাহাজ। জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রেখেছিল সোমালিয়ান জলদস্যুরা। পরবর্তী সময়ে নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।