আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরানের খাবার পারস্যীয় খাবার বলে পরিচিত। ইরানি রান্না পদ্ধতিতে কোজিয়ান, তুর্কি, লেভান্তীয়, গ্রিক, মধ্য এশিয়া এবং রাশিয়ান পদ্ধতি মিলেমিশে একাকার। এশীয় মুগল রাজবংশের হাত ধরে ইরানি রন্ধনবিদ্য উত্তর ভারতীয় রন্ধনপ্রণালীতে গৃহীত হয়েছে।
সাধারণত ইরানের প্রধান খাবারের মধ্যে আছে ভাত, ভেড়ার মাংস, মুরগির মাংস, মাছ, পেঁয়াজ এবং বিভিন্ন ধরনের শাক। ইরানের খাবারে বাদাম, তাল, ডালিম, কুইন, প্রুনিস, খুরফু, এবং রেসিনসের মতো ফলের সঙ্গে সবুজ গুল্ম ব্যবহার করা হয়। ইরানি মসলার মধ্যে আছে জাফরান, শুকনা লেবু, দারুচিনি এবং পেসলে যা বিশেষ খাবারের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়। ইরানের কাবার, স্টু এবং ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো বিশ্ববিখ্যাত।
১৬ শতাব্দির শেষ দিকে প্রথমবারের মতো সাফাভিদ সাম্রাজ্যের রন্ধনপ্রণালীতে চাল ব্যবহার শুরু হয়। যা ইরানি রান্নার একটি প্রধান শাখায় পরিণত হয়। ঐতিহ্যগতভাবে চাল থেকে প্রস্তুতকৃত খাবার উত্তর ইরানের একটি প্রধান খাদ্য উপাদান। শুরুর দিকে ইরানের ধনী পরিবারগুলোর প্রধানতম খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হত ভাত তখন দেশের বাকি অংশে রুটি চাহিদা বেশি ছিল।
ইরানে বিভিন্ন ধরনের চালের মধ্যে আছে ডোমাসিয়া, চম্পা, জেরড, দোদি, লেনজেন (লেনজেন প্রদেশের), তরম (টারম প্রদেশের), আনবারবু ইত্যাদি। দোদি চাল দিয়ে ধোঁয়া ওঠা ভাত রান্না করে ইরানিরা।
ইরানে দ্বিতীয় উৎপাদিত শস্য হচ্ছে গম। ইরানি রন্ধনশৈলীতে চ্যাপ্টা রুটি এবং পেস্ট্রি রুটি বানানো হয়। বিভিন্ন প্রকার রুটির মধ্যে রয়েছে সাঙ্গাক। যা আয়তাকার অথবা ত্রিকোনাকৃতির রুটি যা পাথরে সেঁকা হয়। তাফতুন রুটি পাতলা, নরম এবং গোলাকৃতির রুটি যা লাভাশের থেকে কিছুটা পুরু। আরও আছে তানুর রুটি। এটি (তান্দুর) নামক চুলায় তৈরি রুটি। ইরানে ক্বান্ডি রুটি হচ্ছে এক ধরনের মিষ্টি রুটি। ইরানের মানুষ তাবরিজি নামের এক ধরনের রুটি খায়। এই রুটি পুরু এবং উপবৃত্তাকার। বাগুট্টে রুটি হয়ে থাকে লম্বা, সরু। এটি ফরাসি ঘরানার রুটি। সাধারণত এর মধ্যে সবজির পুর দেওয়া থাকে তবে অমুসলিম প্রধান অঞ্চলে সসেজ ও সবজি দেওয়া হয়।
মিষ্টি পিঠাজাতীয় রুটি নান এ গিসু । যা শিরমাল নামেই অধিক পরিচিত। শিরমাল শব্দের অর্থ দুধে মোড়া । মিষ্টি খেঁজুরের রুটি কোমাজ। যাতে হলুদ ও জিরা ব্যবহৃত হয়। অনেকটা নান ই গিসুর মত।
ইরানি মিষ্টি খাবার: প্রায় ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রাচীন ইরানিরা একটি বিশেষ মজার খাবার তৈরি করে যা গোলাপের পানি ও সেমাই দিয়ে তৈরি করা হতো। এখনও খাওয়া হয় খাবারটি। এ খাবার গ্রীষ্মকালে রাজপ্রাসাদে পরিবেশন করা হতো। বরফকে জাফরান ও ফল মিশ্রিত করা হয়। আজকের দিনে সর্বাধিক জনপ্রিয় ইরানি মিষ্টি জাতীয় খাবার হচ্ছে নুডলস দিয়ে তৈরি ফালুদা যা প্রথম খাওয়া হয়েছিল ইরানের শিরাজ শহরে। জাফরান আইসক্রিম ইরানের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। বিভিন্ন ধরনের চাল, গম ও দুগ্ধবৈচিত্র্যে তৈরি হয়।
ইরানিরা আবগুশ্ট খায়। এই খাবার মূলত মাংসের ঝোল। ছোট ভেড়ার মাংসের সঙ্গে ছোলা, আলু, সাদা মটরশুটি ও মসলার সমন্বয়ে তৈরি হয় এই খাবার। এটি সাধারণত রুটি দিয়ে খাওয়া হয়। বিভিন্ন ধরনের মসলা এই খাবারকে সুস্বাদু করে।
আলুর সালাদ: আলু, ডিম ও মুরগির নরম মাংসের সঙ্গে মেয়জেনের মিশ্রণে তৈরি সালাদ। ইরানি অনুষ্ঠানে এটা অবশ্যই পরিবেশন করা হয়।
‘সবজি পোলো বা মাহি’ হচ্ছে ইরানের ঐতিহ্যবাহী খাবার। এই খাবার নতুন বছরের অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়। সাদা মাছের সঙ্গে হার্বড রাইস পিলাফের সংমিশ্রণে এটি তৈরি করা হয়।
‘ফেসেনজান’মিট স্ট্যু ও ডালিমের রস দিয়ে তৈরি খাবার। এই খাবারটিতে রন্ধন দক্ষতা সম্পর্কে ইরানিদের নৈপুণ্য ফুটে উঠতে দেখা যায়।
কেইমেহ: ভাঙা মটরশুটি, টমেটো, শুকনা লেবু ও পেঁয়াজের সঙ্গে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও বেগুনের সংমিশ্রণে এই খাবারটি প্রস্তুত করা হয়। স্বাদ ও গন্ধে অসাধারণ।
সুইট ক্যান্ডি গাজ চিনি, বাদাম ও ডিম দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। ইরানের নববর্ষের মতো ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে এই ক্যান্ডি পরিবেশন করা হয়। এটা মূলত গোলাপজলের স্বাদে পরিপূর্ণ মিষ্টি খাবার।
বিখ্যাত ইরানি খাবার ‘মির্জা কাশেমি’কাবাব করা বেগুন মসলা দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। মসলা, টমেটো ও ডিমের সঙ্গে বেগুনের যথাযথ সমন্বয়ে এটি প্রস্তুত করা হয়।
তাহচিন রাইস কেক: মুরগি, দই ও ডিম দিয়ে এই রাইস কেক বানানো হয়। খাঁটি ইরানি খাবারটিতে জাফরানের দারুণ সুগন্ধি রয়েছে।
সূত্র: উইকিপিডিয়া, ফ্লেভরভারস ডটকম, দি ডেলিশাস ক্রিসেন্ট ডট কম ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।