মুফতি আবদুল্লাহ তামিম : ব্যাঙ একটি উভচর প্রাণী। ব্যাঙ সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। কুনো ব্যাঙ (toad) ও সোনা (কোলা) ব্যাঙ (frog)। এই দুরকম ব্যাঙের মধ্যে পার্থক্য করার চেষ্টা করা হয়। কুনো ব্যাঙ শুকনো জায়গায় বেশি থাকে আর কোলা ব্যাঙ পানিতে বেশি থাকে।
ব্যাঙ খাওয়া কি জায়েজ?
ইমাম মারগিনানি রহ. লিখেছেন, জলজ প্রাণীর মধ্য থেকে মাছ ছাড়া কোনো প্রাণী খাওয়া যাবে না। কেননা মহান আল্লাহ নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করেছেন, আর মাছ ছাড়া পানির সব প্রাণীই নিকৃষ্ট। (হেদায়া ৪/৩৫৩)
বর্তমানে অনেককে কাঁকড়া, ব্যাঙ ইত্যাদি খেতে দেখা যায়, এগুলো খাওয়া না-জায়েজ। কেননা, মহান আল্লাহ সফল মুমিনদের গুণাবলি উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, ‘নিজেদের জন্য উৎকৃষ্ট বস্তু হালাল করে আর নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করে।’ (সুরা: আরাফ ১৫৭)
ব্যাঙ হত্যা করা যাবে?
হাদিসে ব্যাঙ হত্যার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হজরত আব্দুর রহমান ইবনে উসমান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘কোনো চিকিৎসক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ব্যাঙ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, এটা ওষুধে প্রয়োগ করবেন কি না। উত্তরে রাসুল সা. তা হত্যা করতে নিষেধ করলেন। (আহমদ ১৫৩৩০, নাসাঈ ৪৩৫৫, আবু দাউদ ৩৮৭১, দারেমি ১৯৯৮, হাকিম ৪র্খ খণ্ড ৪১১ পৃষ্ঠা। সহিহুল জামে ৬৯৭০)
শরিয়তের একটি মূলনীতি হলো, যে প্রাণী হত্যা করা হারাম তা খাওয়াও হারাম। সেটা খাওয়া হালাল হলে তা হত্যা করা বৈধ হতো।
ওষুধ হিসেবে ব্যাঙ খাওয়ার বিধান
ব্যাঙ হানাফি মাজহাব অনুযায়ী খাওয়া জায়েজ নেই। ব্যাঙ জরুরি প্রয়োজনে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা উপকারী প্রমাণিত হলে খাওয়া জায়েজ। ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করতে ক্রয়-বিক্রয় ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ বলা হবে। (ফাতাওয়া শামি ৬/৩০৮, ১/১৩৫, আলবাহরুর রায়েক ৬/৮০)
ব্যাঙ জায়নামাজে পেশাব করে দিলে করণীয় কী?
পানির ব্যাঙের পেশাব নাপাক নয়। তাই বাস্তবেই যদি সেটি পানির ব্যাঙ হয়ে থাকে তাহলে এর কারণে জায়নামাজ নাপাক হবে না।
অবশ্য আপনাদেরকে যাচাই করে দেখতে হবে, যেসব ব্যাঙ সেখানে যাতায়াত করে সেগুলো পানির ব্যাঙ কি না। কেননা স্থলের ব্যাঙের পেশাব নাপাক। (বাহরুর রায়েক ১/৮৮; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া পৃ ২৮; শরহুল মুনয়া পৃ. ১৪৬; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৭৫
বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে
অনাবৃষ্টির কারণে এক গ্রামের লোকেরা মিলে একটি ব্যাঙ ধরে ঢাকঢোল পিটিয়ে আরেক গ্রামের একটি ব্যাঙের সাথে বিশেষ কায়দায় বিয়ে দেয়। এতে উভয় গ্রামের লোকেরা বিয়ের মতো হই-হুল্লোড় করে আনন্দ উদ্যাপন করে! তাদের ধারণা, এতে বৃষ্টি নেমে আসে!! নাউযুবিল্লাহ। বৃষ্টির সাথে ব্যাঙের কী সম্পর্ক?
বৃষ্টির সঙ্গে ব্যাঙের বিয়েরই-বা কী সম্পর্ক? এমন হিন্দুয়ানি কুসংস্কার আদি যুগের অনেক কুসংস্কারকেও হার মানায়। আর কেউ যদি বৃষ্টি বর্ষণকে ব্যাঙের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেয় তবে তা তো সুস্পষ্ট ঈমান বিধ্বংসী বিশ্বাস।
আল্লাহ তাআলা বলেন, هو الذى انزل من السماء ماء ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন।’ অনাবৃষ্টি হলে কী করতে হবে, তার সুন্দর নির্দেশনা ইসলামেই বিদ্যমান। ইস্তিগফার করা, উন্মুক্ত মাঠে ‘সালাতুল ইসতিস্কা’ আদায় করা, সম্মিলিতভাবে দুআ করার কথা হাদিসে এসেছে। প্রত্যেকটি হাদিসের ও ফিকহের কিতাবে এই সংক্রান্ত স্বতন্ত্র অধ্যায় রয়েছে। অতএব সে নিয়মানুযায়ী আল্লাহর কাছেই বৃষ্টি চাওয়া উচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।