লাইফস্টাইল ডেস্ক : বঙ্গোসাগরে আবারও চলছে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব। নতুন এই ঝড়টার নাম ‘মিগজাউম’। মিয়ানমারের দেওয়া এ নামটির অর্থ বল, শক্তি বা প্রাণোচ্ছল, সজীব।
গত দেড় মাসের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে আঘাত হানা তৃতীয় ঘূর্ণিঝড় এটি।
এর আগে ১৭ নভেম্বর আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’। ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ উপকূলে দুর্বল হয়ে চলে যায় ‘হামুন’। মিধিলি নামটা ছিল মালদ্বীপের দেওয়া, আর হামুন নামটি দিয়েছিল ইরান। পরের ঘূর্ণিঝড়ে নামকরণ করা হবে ‘রেমাল’, এটা ওমানের দেওয়া।
তালিকা অনুযায়ী, তারপর আসবে পাকিস্তানের দেওয়া ‘আসনা’। বাংলাদেশের দেওয়া সর্বশেষ নামটি ছিল ‘বিপর্যয়’, দ্বিতীয় কলামের প্রথম নাম ছিল সেটি। অর্থাৎ বাংলাদেশের পরবর্তী নামটি আসবে তৃতীয় কলাম শুরু হলে। মিগজাউমের আরো আটটি দেশের আটটি নাম শেষে আসবে সে ক্রম।
বাংলাদেশের প্রস্তাবিত পরবর্তী নামটি ‘অর্ণব’।
নামকরণের ইতিকথা
শুরুটা হয় ১৯৫৩ সালে। যুক্তরাষ্টের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর মায়ামির জাতীয় হ্যারিকেন সেন্টার আটলান্টিক অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য প্রস্তাব দেয়। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের একটি ইউনিট ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের বৈঠকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য একটি তালিকা তৈরি করা হয়।
ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল ওয়েদার অর্গানাইজেশন এবং এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন ২০০০ সালে এর সদস্য দেশগুলোর পরামর্শ নিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য নাম প্রস্তুত করার কাজ শুরু করে— বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, ওমান, পাকিস্তানের মতো আরো ১২টি দেশকে সঙ্গে নিয়ে।
শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এই প্যানেলের অংশ। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, যে মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়, তার অববাহিকায় থাকা দেশগুলো নামকরণ করে। পৃথিবীতে মোট ১১টি সংস্থা ঝড়ের নামকরণ করে থাকে।
নামকরণের এই সামগ্রিক বিষয়টা নিয়ন্ত্রিত হয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডাব্লিওএমও) মাধ্যমে। ২০০৪ সালে ৮টি দেশ ৮টি করে মোট ৮৪টি নাম দেয়। সেখানে প্রথম নামটি ছিল বাংলাদেশের (অনিল)। নামের ক্রম আসে দেশের ক্রম অনুযায়ী। অর্থাৎ দেশের নামের ইংরেজি বর্ণানুক্রমে একটি করে দেশের নাম নির্ধারিত হয় আগত ঘূর্ণিঝড়ের নাম।
২০২০ সালে মোট ১৩টি দেশ ১৩টি করে মোট ১৬৯টি নাম দেয়। ১৩টি দেশ হলো- বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, আরব-আমিরাত এবং ইয়েমেন। ডাব্লিওএমওর ভারতীয় উপমহাদেশের এই সদস্য দেশগুলোই নাম দেয়।
ঝড়ের কেন নাম দিতে হয়?
ঝড়ের নাম দেওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এদের মাঝে অন্যতম- এটা ঝড়ের অঞ্চলে বসবাস করেন যাঁরা তাঁদের সতর্ক করে দিতে সহজ হয়। তা ছাড়া ঝড়ের নাম দেওয়া হলে, কোন ঝড়ে কেমন ক্ষতি হয়েছে বা কোনো গবেষণার প্রয়োজনে তথ্য ঘাঁটতে সুবিধা হবে।
বেশির ভাগ নামই নারীদের নামে কেন?
বিশ শতকের মাঝের দিকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণে মেয়েদের নাম বেশি ব্যবহৃত হতো। এ ক্ষেত্রে আবহাওয়াবিদদের যুক্তি ছিল, মেয়েদের নামগুলো মানুষ সহজে মনে রাখতে পারবেন। সে জন্যই নার্গিস, রেশমি, রিটা, বিজলি, নিশা, গিরি, হেলেন, চপলা, অক্ষি, লুবান, তিতলি, নিলুফার, ক্যাটরিনাসহ অনেকগুলো ভয়ংকর ঝড়ের নাম অমর হয়ে আছে। যেগুলো নারীদের নামেই রাখা হয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা কর্তৃক শর্ত দেওয়া হয়— নামগুলো লিঙ্গনিরপেক্ষ হবে।
নামকরণের শর্ত
একই নাম বারবার দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ নামের পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। ধর্মীয় বা রাজনৈতিক আদর্শে আঘাত হানতে পারে— এমন নাম দেওয়া যাবে না। নামটি হতে হবে লিঙ্গনিরপেক্ষ। বিশ্বের কোনো জনগোষ্ঠীর ভাবাবেগে যেন আঘাত না করে, সে বিষয়টি খেয়াল রাখা চাই। নামের মাধ্যমে কোনো প্রকার নিষ্ঠুরতা, রুক্ষ ভাষা বা নির্মমতা প্রকাশ পাবে না। নামের উচ্চারণ হবে সহজ। নাম হবে সর্বোচ্চ আটটি বর্ণে। সাথে থাকতে হবে উচ্চারণ নির্দেশিকা। আবহাওয়াসংক্রান্ত বৈঠকে আলোচনার পর নামের তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে।
এসব শর্ত পূরণ করলেই চূড়ান্ত হয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম।
সূত্র :
১. Tropical Cyclone Naming/World Meteorological Organization,
২. বাংলাদেশ আবহওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট (https://bmd.gov.bd/)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।