বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : ডিজিটাল টুইন হল কোনো শারীরিক অবকাঠামো, মানুষ, সিস্টেম বা পদ্ধতির ডিজিটাল রেপ্লিকা।
এ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান বেশ কিছু বাস্তব জগতের পরিস্থিতি ও ফলাফল তৈরি করতে পারে, যার ফলে তারা পরবর্তীতে গিয়ে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে।
কত ধরনের ডিজিটাল-টুইন প্রযুক্তি আছে?
এ মুহুর্তে বেশ কয়েক ধরনের ডিজিটাল টুইন আছে।
প্রথমত, পণ্যের জমজ বা ‘প্রোডাক্ট টুইন’, যেখানে কোনো পণ্যের ডিজিটাল রেপ্লিকা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে থাকতে পারে বিভিন্ন পণ্যের জীবনচক্রের বিভিন্ন স্তরও। যেমন- এর ধারণামূলক নকশা বা কনসেপ্ট ডিজাইন ও এর সামগ্রিক কার্যকারিতার পেছনে কাজ করা প্রকৌশল।
এর মানে দাঁড়ায়, ক্রেতারা এর মাধ্যমে পণ্যের রিয়েল-টাইম, লাইভ ডেটা পাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন, যেন এটি সেবারই অংশ।
আরেক ধরনের ডিজিটাল টুইন হল, ডেটা টুইন, যার নজির এরইমধ্যে চলে এসেছে ব্যবহারকারীদের পকেটে। উদাহরণ হিসেবে, ভূপৃষ্ঠের ডিজিটাল টুইন হচ্ছে গুগল ম্যাপস। এতে ব্যবহারকারী ট্রাফিকের রিয়াল টাইম ডেটা পাওয়ার সুযোগ পান, যা তার পথ বাছাই করার ক্ষেত্রেও সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
অন্যান্য ধরনের ডিজিটাল টুইনের মধ্যে রয়েছে ‘সিস্টেম টুইন’, যেখানে বাস্তব ও ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মধ্যে সংযোগের মডেল তৈরি করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ‘এন্ড-টু-এন্ড’ সরবরাহ চেইন ব্যবস্থাপনা, স্টোর অপারেশন ও গ্রাহক ভ্রমণের মতো বিষয়গুলো।
এদিকে, অবকাঠামোগত জমজ বা ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার টুইন’-এ কোনো মহাসড়ক, ভবন এমনকি একটি স্টেডিয়ামের ডিজিটাল রেপ্লিকাও তৈরি করা যায়।
ডিজিটাল টুইনের ধারণাটি কাজে লাগিয়ে এর চেয়েও দক্ষ ও স্থিতিশীল কাজ করার সুযোগ আছে, যা স্রেফ বিভিন্ন কোম্পানির সিইও’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ম্যাককিনস-এর গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, প্রযুক্তি খাতের ‘সি-স্যুট’ বা শীর্ষ নির্বাহীদের ৭০ শতাংশ এরইমধ্যে ডিজিটাল টুইন ব্যবহারের বিভিন্ন উপায় খতিয়ে দেখছেন।
প্রোডাক্ট ডিজিটাল টুইনের তিন মাত্রা কী কী?
প্রোডাক্ট ডিজিটাল টুইনকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে।
● নিযুক্ত মডেলিং ও ডেটার পরিশীলিত স্তর।
● টুইন প্রযুক্তির দৈহিক অবকাঠামোগত সুযোগ।
● টুইন প্রযুক্তি থেকে মূল্যবান সরবরাহ চেইন তৈরির বিষয়টি, প্রকৌশল, উৎপাদন বা পরিষেবা, যে পর্যায়েই হোক না কেন।
কোনো প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল টুইন যাত্রার ক্ষেত্রে এই তিন মাত্রার প্রতিটিই অন্তর্ভূক্ত। একটি ডিজিটাল টুইন প্রযুক্তির প্রকল্প হয়ত একক কোনো জটিল উপাদান দিয়ে শুরু করে পরবর্তীতে ডিজিটাল টুইনের পরিপক্বতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা গোটা পণ্যেই বিস্তৃত করা যেতে পারে।
সাপ্লাই চেইন ডিজিটাল টুইন কী?
নিজস্ব সাপ্লাই চেইন ধরে রাখার বিষয়টি যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসাবে বিবেচিত। ম্যাককিনস’র বিশ্লেষণ অনুসারে, সাপ্লাই চেইনে ব্যাঘাত ঘটলে তা কোম্পানির বার্ষিক গড় লাভ থেকে ৪৫ শতাংশই কেড়ে নিতে পারে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই ঝুঁকি নিয়ে ওয়াকিবহাল, যেখানে সাম্প্রতিক জরিপে অংশ নেওয়া ৮৬ শতাংশ কোম্পানিই নিজস্ব সাপ্লাই চেইনের রূপ বদলে ফেলার সম্ভাবনা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছে।
ডিজিটাল উপায়ে সক্রিয় সাপ্লাই চেইনের অপটিমাইজেশন ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এরইমধ্যে ডিজিটাল টুইন এবং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
বিভিন্ন কোম্পানি যেভাবে ডিজিটাল-টুইন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে
ডিজিটাল টুইনে আগ্রহের সঙ্গে উন্নতমানের সহায়ক প্রযুক্তি ব্যবহারকে সমন্বিত করলে দেখা যায়, ২০২৬ সাল নাগাদ ডিজিটাল টুইন খাতে আর্থিক বিনিয়োগ হতে পারে চার হাজার আটশ কোটি ডলারের বেশি। এক্ষেত্রে এরইমধ্যে কিছু কিছু অগ্রগতিমূলক পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে:
● এমিরেটস টিম নিউ জিল্যান্ড- যা পালতোলা নৌকার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন দল এমিরেটস টিম নিউ জিল্যান্ডের জন্য তৈরি। এটি মূলত সমুদ্রের পরিবেশ, নৌকা এবং ক্রু’র সদস্যদের ডিজিটাল টুইন সংস্করণ। এর মাধ্যমে নৌকা না বানিয়েই এদের বিভিন্ন সম্ভাব্য নকশা পরীক্ষা করার সুযোগ পেয়ে থাকে দলটি। এতে করে পালতোলা নৌকার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন এই দলটি হাজার হাজার ‘হাইড্রোফয়েল’ নকশা তৈরি করে সেগুলো মূল্যায়ন করার সুযোগ পেয়েছে।
● অ্যানহাইজার-বুশ ইনবেভ- বহুজাতিক এই মদ উৎপাদক কোম্পানিটির সাপ্লাই চেইন ডিজিটাল টুইনে পানকারী ব্যক্তি নিজের সক্রিয় অবস্থার ভিত্তিতে ইনপুট সামঞ্জস্য করতে ও বিভিন্ন উৎপাদন সংশ্লিষ্ট বাধার বিপরীতে ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে, যখন মদের গামলা পূর্ণ হয়ে যায়।
● সোফি স্টেডিয়াম- এ ডিজিটাল টুইন থেকে স্টেডিয়ামের ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন কাজ অপটিমাইজ করার সুযোগ মেলে, যেখানে একাধিক ডেটার উৎস থেকে তথ্য নেওয়া হয়, যার মধ্যে রয়েছে স্টেডিয়ামের অবকাঠামো ও রিয়েল-টাইম ফুটবল ডেটা।
● স্পেস ফোর্স- মার্কিন সামরিক বাহিনীর এ শাখা মহাকাশের ডিজিটাল টুইন বানাচ্ছে, যার মধ্যে আছে ভিনগ্রহের কাঠামো ও স্যাটেলাইটের রেপ্লিকাও।
● স্পেসএক্স- ইলন মাস্ক মালিকানাধীন এই রকেট কোম্পানিটির ‘ড্রাগন’ ক্যাপসুলের ডিজিটাল টুইন দিয়ে রকেটের গতিবিধি, ভর ও প্রপালশন সিস্টেম মনিটর করার সুযোগ মেলে,খানে ভ্রমণের সময় সর্বোচ্চ সুরক্ষা ও নির্ভরযোগ্যতা তৈরির লক্ষ্য নিয়েছে কোম্পানিটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।