বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : কোয়ান্টাম তত্ত্ব বুঝতে হলে ক্ষুদ্র জগতে ঢুঁ মারতে হয়। এ জগতে রয়েছে ইলেকট্রন, ফোটন, কোয়ার্ক। রয়েছে শক্তির ব্যাখ্যা। রয়েছে ক্ষেত্র তত্ত্ব।
প্রকৃতির তিনটি মৌলিক বল কোয়ান্টাম তত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে পারে। সেগুলো হলো বিদ্যুৎচুম্বক বল, সবল ও দুর্বল নিউক্লিয় বল।
এরা কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব মেনে চলে। ব্যতিক্রম— মহাকর্ষ বল।
যা ব্যাখ্যা করতে দরকার হয় আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। ফলে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। এর ফলে প্রকৃতির অসংখ্য আচরণ থেকে গেছে অমীমাংসিত।
বিগ ব্যাংয়ের কথাই ধরা যাক।
এই বিশাল গ্রহ নক্ষত্র সবকিছু বিগ ব্যাং শুরুর মুহূর্তে একটি বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত ছিল। সেই বিন্দুটি ছিল অকল্পনীয় ভারী ও ক্ষুদ্র। আবার ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্র বা সিঙ্গুলারিটির কথা ভাবুন। সেটি একইসাথে ভারী ও ক্ষুদ্র। এদের ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম ও আপেক্ষিকতা— দুটো নিয়মই প্রযোজ্য।
তাই বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন, কীভাবে কোয়ান্টামের সাথে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার সমন্বয় করে একটা সফল তত্ত্ব দাঁড় করানো যায়। যাকে বলা হবে ‘থিওরি অব এভরিথিং’। থিওরি অব এভরিথিং পদার্থবিজ্ঞানের বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটা।
ব্যাপারটা একই শহরে দুটো ট্রাফিক নিয়ম চালু করার মতো। আপেক্ষিকতা বলে, মহাকর্ষ কোনো বল নয়। এটা কেবল স্থান-কালের বক্রতা, যা বস্তুর ভরের কারণে তৈরি হয়। কণারও ভর আছে। কিন্তু কোয়ান্টাম নিয়মে, কণারা একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে থাকতে পারে। তাহলে কণা কীভাবে স্থান-কাল বক্রতা তৈরি করবে?
কোয়ান্টামে স্থান-কাল বক্রতার ব্যাখ্যা নেই। তবে কোয়ান্টাম বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, মহাকর্ষের পেছনে গ্র্যাভিটন নামের একটা কণার হাত আছে। রহস্যময় এক কণা। যার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই স্ট্যান্ডার্ড মডেলে এই কণার জায়গা হয়নি।
থিওরি অব এভরিথিং তত্ত্বের কাছাকাছি পথে হাটছে আরেকটি তত্ত্ব। যার নাম ‘স্ট্রিং থিওরি’। যদিও এই তত্ত্ব অনেকটা কল্পকাহিনীর মতো। গ্র্যাভিটনের অস্তিত্বের ধারণা দেয় এই তত্ত্ব। সেইসাথে দেয় অদ্ভুত কিছু তথ্য।
স্ট্রিং থিওরি অনুযায়ী বিশ্বজগতে মোট ১১টি মাত্রা বা ডাইমেনশন রয়েছে। এই মাত্রাগুলোর সাথে যোগসূত্র আছে গ্রাভিটনের। মাত্রাগুলোর একটা অংশও যদি শনাক্ত করা যায়, তবে গ্রাভিটনের অস্তিত্ব তো পাওয়া যাবেই, পাশাপাশি পাওয়া যাবে সমান্তরাল জগৎ বা প্যারালাল ইউনিভার্সের খোঁজ।
আপেক্ষিকতা মহাকর্ষ বলকে একটা জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে ব্যাখ্যা করে। কোয়ান্টামে মহাকর্ষের সঠিক কোনো ব্যাখ্যা নেই। তবে আপেক্ষকতা ও কোয়ান্টাম তত্ত্ব একীভূত করে গ্রহ, নক্ষত্রের চরিত্র ব্যাখ্যা করার চেষ্টা চলছে। সেটা যদি সম্ভব হয়, তবে মহাকর্ষের সেই কোয়ান্টাম চেহারার নাম হবে কোয়ান্টাম গ্রাভিটি।
গ্র্যাভিটন কণা এখনও একটা হাইপোথিসিস বা অনুকল্প, যার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সার্ন ও ফার্মিল্যাবের মতো গবেষণাগারে এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে। সার্নে রয়েছে একটি শক্তিশালী কণা ত্বরক। যার নাম লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার।
এসব যন্ত্রে পরমাণুকে উচ্চ গতিতে চূর্ণ করে তার ভেতর মৌলিক কণার খোঁজ করা হয়। হয়ত এভাবে কখনো গ্রাভিটনের দেখাও পাওয়া যাবে। কিন্তু স্ট্রিং তত্ত্ব অনুযায়ী, গ্রাভিটন খুব অল্প সময়ের জন্য দেখা যাবে। কারণ উৎপন্ন হওয়ার সাথে সাথেই কণাটি চলে যাবে অন্য ডাইমেনশনে।
সম্পর্কিত তত্ত্ব
কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব
বিজ্ঞানী
পল ডিরাক
১৯০২-১৯৮৪
ইংরেজ পদার্থবিদ, আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণের সাথে একীভূত করে নতুন এক সমীকরণের জন্ম দেন।
অভয় অস্তকর
১৯৪৯— বর্তমান
ভারতীয় তাত্ত্বিক পদার্থবিদ, ১৯৮৬ সালে সাধারণ আপেক্ষিকতার সাথে কোয়ান্টাম তত্ত্বের কিছুটা গাণিতিক সমন্বয় ঘটাতে সক্ষম হন, ‘লুপ কোয়ান্টাম গ্রাভিটি’ তত্ত্বের জনক।
বর্ণনা
সোফি হিবদিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।