লাইফস্টাইল ডেস্ক : আমরা জানি ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি আগের যেকোনো ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি থেকে অনেক বেশি এডভান্সড। আর তাই মডার্ন সব ডিভাইস গুলোতেও ব্যবহৃত হচ্ছে ওয়াই-ফাই টেকনোলজি।ওয়াইফাই রাউটার থেকে নানা জটিল রোগ হতে পারে, এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে, এমন নানা মতামত বিভিন্ন সময়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কয়েক মাস আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছিল, মাথার কাছে রাতভর ওয়াইফাই রাউটার চললে, যে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ শরীরে ঢোকে তার থেকে ক্যানসার বা ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
তবে এ দেশের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ (এনআইএইচ)-এর তথ্য বলছে, ওয়াইফাই রাউটার থেকে যে তরঙ্গ বার হয় তার কম্পাঙ্ক খুবই কম। শরীরের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়।
তবে যদি একদম মাথার কাছেই রাউটার থাকে, তা হলে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।ওয়াইফাই চালু রেখে মাথার কাছে ফোন নিয়ে ঘুমোলে, অনিদ্রা, মাথা যন্ত্রণা বা মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিতেই পারে, এমনটাই জানালেন স্নায়ুরোগ চিকিৎসক অনিমেষ কর। তাঁর মতে, ওয়াইফাইয়ের তরঙ্গ হল ‘নন-আয়নাইজ়িং’। সাধারণত রাউটার থেকে যে তরঙ্গ বার হয় তার কম্পাঙ্ক ২.৪ থেকে ৫ গিগাহারটজ। এই মাত্রার কম্পাঙ্ক থেকে শরীরের বড়সড় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। ব্রিটেনের ক্যানসার রিসার্চ সেন্টারও একই কথা জানিয়েছে। ওয়াইফাই থেকে ক্যানসার হওয়ার কোনও রকম ঝুঁকিই নেই।
এর সুবিধা সমূহ:
১)ওয়াইফাই রাউটার দিয়ে আপনি একাধিক ডিভাইসে একসাথে সংযোগ করতে পারেন।
২)ওয়াই-ফাইএর স্পীড খুব দ্রুত হওয়ার কারনে এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে জনসাধারণের নিকট।
৩)আপনি যে কোনও স্থান থেকে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে পারেন(আপনার রাউটারের সিগনাল অনুযায়ী)।
৪)ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়াইফাই একটি জনপ্রিয় ইন্টারনেট সংযোগ হিসাবে পরিচিত।
৫)কাঠামোগত ক্যাবলিং ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই আপনি খুব সহজেই ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারবেন।
৬)ওয়াইফাই খুব দ্রুত এবং সহজ। ওয়াইফাই সিস্টেম এবং এর প্রোটোকলগুলির প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রয়োজন নেই।
৭)আপনি খুব সহজেই টিপি-লিংক, ডি-লিংক, টেন্ডা ইত্যাদি থেকে খুব সাশ্রয়ী মূল্যে ওয়াইফাই পেতে পারেন।
৮)বিভিন্ন ধরণের ডিভাইসে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে পারবেন যেমন: স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ডিভাইস এবং অন্যান্য পোর্টেবল ডিভাইস।
৯)ইন্টারনেট যে কোনও জায়গা থেকে অ্যাক্সেস করা যায়। বাস, ট্রেন, কফি-শপ, সুপার মার্কেট ইত্যাদি।
১০)আপনি ওয়াই-ফাই এক্সটেন্ডার ব্যবহার করে নেটওয়ার্কটি প্রসারিত করতে পারেন।
ওয়াই-ফাই এর অসুবিধা সমূহ:
১)ডেটা ট্রান্সফার রেট কমে যায় যখন ব্যবহারকারী বা ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত কম্পিউটারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
২)ওয়াইফাই রাউটারে আমাদের নেটওয়ার্কের পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত করতে বিভিন্ন এনক্রিপশন পদ্ধতি রয়েছে। আপনার ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৩)ওয়াইফাই অ্যাক্সেস প্রায় ৩০ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত (যেমন ১০০ থেকে ৩০০ ফুট) সীমাবদ্ধ।
৪)অনেক রাউটার সর্বাধিক ৩০ ডিভাইসকে সংযুক্ত করার অনুমতি দেয়। আপনি আরও ডিভাইস যুক্ত করার সাথে সাথে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের ব্যান্ডউইদথ দুর্বল হয়ে যায়।
৫)ওয়াইফাই এর কারণে মানুষের স্বাস্থ্য ক্ষতিও হতে পারে; যেমন: ক্যান্সার, অনিদ্রা, অ্যাপোপটোসিস এবং গর্ভবতী মহিলাদের ওয়াইফাই রেডিয়েশনের বাইরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৬)সঠিকভাবে সুরক্ষিত না করা হলে লোকেরা ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস করতে পারে এবং তথ্য চুরি করতে এবং এমনকি খারাপ উদ্দেশ্যে আপনার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারে।
ওয়াই-ফাই শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর: হায়দরাবাদের গ্লেনিগলস হাসপাতালের কনসালট্যান্ট চিকিৎসক ও ডায়াবেটোলজিস্ট ডা. হিরণ এস. রেড্ডি বলেন, ওয়াই-ফাই রাউটার থেকে নির্গত রেডিয়েশন খুবই নিম্নমাত্রার এবং এটি ‘নন-আয়নাইজিং’ ধরনের, যা সাধারণভাবে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয় বলেই বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। তাই রাতের বেলা সাত দিন রাউটার বন্ধ রাখলেও দেহে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা খুবই কম।
তবে যারা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডের প্রতি সংবেদনশীল বলে মনে করেন, তাদের জন্য কিছু উপসর্গে স্বস্তি অনুভূত হতে পারে—যেমন: মাথাব্যথা, ঘুমের ব্যাঘাত কিংবা মানসিক অবসাদ। যদিও ‘ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক হাইপারসেন্সিটিভিটি’ নামে পরিচিত এই অবস্থার পক্ষে এখনও যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
ওয়াই-ফাই এর অনেক সুবিধা এবং অসুবিধা দুটিই রয়েছে। তবে এর অনেক সুবিধা থাকার কারনে, এই প্রযুক্তিটি বর্তমানে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সময়ের সাথে সাথে ওয়াই-ফাই এর ব্যবহার কারীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছ এবং অদূর ভবিষ্যৎ এ ওয়াই-ফাই এর ব্যবহার আরো ব্যাপক হরে বাড়বে বলে অনুমান করা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।