মুফতি জাকারিয়া হারুন : স্বপ্ন আর ঘুম একটি অপরটির পরিপূরক। মানুষ ঘুমের ঘোরে বিভিন্ন স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন কখনও স্বস্তিদায়ক হয় আবার কখনও ভয়ংকর হয়ে থাকে। স্বপ্নে অনেকে ‘বিয়ে’ও দেখেন। জানতে চান, স্বপ্নে ‘বিয়ে’ দেখলে কী হয়?
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সত্য স্বপ্ন নবুওয়াতের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ। যতক্ষণ পর্যন্ত তা কারও কাছে ব্যক্ত করা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। আর যখন কারও কাছে ব্যক্ত করে ফেলা হয় এবং শ্রোতা এর কোনো ব্যাখ্যা দিয়ে দেয়, তখন সে ব্যাখ্যা অনুযায়ী তা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়ে যায়। কাজেই জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ছাড়া অথবা অন্ততপক্ষে বন্ধু ও হিতাকাঙ্ক্ষী ছাড়া অন্য কারও কাছে স্বপ্নের বিষয় ব্যক্ত করো না। (তিরমিজি)
স্বপ্ন সম্পর্কে কোরআনের বর্ণনা
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন,
وَ قَالَ الۡمَلِكُ اِنِّیۡۤ اَرٰی سَبۡعَ بَقَرٰتٍ سِمَانٍ یَّاۡكُلُهُنَّ سَبۡعٌ عِجَافٌ وَّ سَبۡعَ سُنۡۢبُلٰتٍ خُضۡرٍ وَّ اُخَرَ یٰبِسٰتٍ ؕ یٰۤاَیُّهَا الۡمَلَاُ اَفۡتُوۡنِیۡ فِیۡ رُءۡیَایَ اِنۡ كُنۡتُمۡ لِلرُّءۡیَا تَعۡبُرُوۡنَ অর্থ: মিশরের অধিপতি বলেছিল, আমি দেখেছি সাতটি মোটা গাভি, যাদের সাতটি শীর্ণকায় গাভি খেয়ে ফেলল এবং সাতটি সবুজ শস্যের শিষ ও সাতটি শুষ্ক। হে প্রধানরা, যদি তোমরা আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পার তবে স্বপ্নের তাৎপর্য বলো।(সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৪৩)
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহান আল্লাহ বদরের যুদ্ধের আগে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
اِذۡ یُرِیۡكَهُمُ اللّٰهُ فِیۡ مَنَامِكَ قَلِیۡلًا ؕ وَ لَوۡ اَرٰىكَهُمۡ كَثِیۡرًا لَّفَشِلۡتُمۡ وَ لَتَنَازَعۡتُمۡ فِی الۡاَمۡرِ وَ لٰكِنَّ اللّٰهَ سَلَّمَ ؕ اِنَّهٗ عَلِیۡمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوۡرِ অর্থ: স্মরণ করুন, যখন আল্লাহ আপনাকে স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন যে, তারা সংখ্যায় কম; যদি আপনাকে দেখাতেন যে, তারা সংখ্যায় বেশী তবে অবশ্যই সাহস হারাতে এবং যুদ্ধ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। অবশ্যই তিনি অন্তরে যা আছে সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবগত। (সুরা আনফাল, আয়াত: ৪৩)
স্বপ্ন সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনা
হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তিন ব্যক্তি থেকে হিসাব-নিকাশের কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছে, ১. ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ-না সে জাগ্রত হয়। ২. নাবালেগ, যতক্ষণ-না সে বালেগ হয়। ৩. পাগল ব্যক্তি, যতক্ষণ-না সে সুস্থ হয়। (তাহাবি: ৩০২৮; আবু দাউদ: ৪৪০৫)
স্বপ্নে ‘বিয়ে’ দেখলে কী হয়
স্বপ্নে নিজের বিয়ে দেখলে তার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। অতি দ্রুত সম্পদশালী হয়ে উঠতে পারেন। কোনো কোনো সময় অবিবাহিত লোক যে বিয়ে করার আকাঙ্ক্ষা করে, তাহলে হতে পারে এটা তার চিন্তাভাবনারই প্রতিফলন। কেননা মানুষ যা চিন্তা করে- কখনও কখনও তা স্বপ্নেও চলে আসে।
আরেকটি ব্যাখ্যা হলো, মহান আল্লাহর নির্দেশে সে শিগগির বিয়ে করবে। এটা তো হলো যে অবিবাহিত তার স্বপ্নের ব্যাখ্যা। আর যে ব্যক্তি আগেই বিয়ে করেছে, সে যদি বিয়ে স্বপ্নে দেখে সে ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর স্বপ্নের মধ্যে পার্থক্য আছে।
যদি কোনো বিবাহিত পুরুষ স্বপ্ন দেখে যে তার বিয়ে হচ্ছে তাহলে এর ব্যাখ্যা হলো তার সার্বিক অবস্থা উন্নত হবে, তার ব্যবসা, চাকরি, কাজ কারবারে উন্নতি হবে, বিশেষ করে তার খানদান থেকে সে কল্যাণ লাভ করবে।
যদি কোনো বিবাহিত নারী স্বপ্ন দেখে যে তার বিয়ে হচ্ছে, তাহলে এর ব্যাখ্যা হলো কারো পক্ষ থেকে সে নারী ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। সে জন্য কিছু সদকা করে দেয়া উত্তম। কেননা সদকায় মানুষের বিপদাপদ কাটে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।