আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে নজিরবিহীন যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ৬ দিনে ছয় হাজার বোমা ফেলার তথ্য জানিয়েছে ইসরাইল। এতে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে গাজা।
রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলের বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা ১৯০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে সাত হাজার ৭০০ জনেরও বেশি।
যুদ্ধের অষ্টম দিনেও গাজায় ইসরাইলি বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এই যুদ্ধে ইসরাইল আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ সাদা ফসফরাস বোমা ব্যবহার করেছে। শুধু গাজা নয়, লেবাননেও এই বোমা ফেলেছে ইহুদিবাদী দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সংস্থাটি বলছে, গাজা ও লেবাননে সামরিক অভিযানে সাদা ফসফরাস ব্যবহার করছে ইসরাইল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের ফলে সেখানকার নাগরিকদের গুরুতর ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা গাজায় সাদা ফসফরাসের ব্যবহার বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ঝুঁকি বাড়ায় এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ অভিযোগের বিষয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা জানায়, এই মুহূর্তে গাজায় সাদা ফসফরাস অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে তারা অবগত নয়। লেবাননে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী কোনো মন্তব্য করেনি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, তারা ১০ অক্টোবর লেবানন এবং ১১ অক্টোবর গাজায় তোলা ভিডিও যাচাই করেছে, যেখানে গাজা সিটি বন্দর এবং ইসরাইল-লেবানন সীমান্তের কাছে দুটি গ্রামে সাদা ফসফরাস ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার পরিচালক লামা ফাকিহ বলেন, যখনই ঘনবসতিপূর্ণ কোনো বেসামরিক এলাকায় সাদা ফসফরাস ব্যবহার করা হয়, তখন মানুষের মারাত্মক দগ্ধ হওয়া এবং আজীবন ভোগান্তির ঝুঁকি থাকে।
সাদা ফসফরাস আসলে কী, কতটা ভয়ঙ্কর?
সাদা ফসফরাস দাহ্য বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এটি একটি রাসায়নিক পদার্থ যা অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে পুড়ে যায়। এটি আর্টিলারি শেল, বোমা এবং রকেটে ব্যবহৃত হয়।
একবার সাদা ফসফরাস অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে রাসায়নিক বিক্রিয়া ৮১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপ উৎপাদন করে। অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাদা ফসফরাস জ্বলে হালকা এবং ঘন ধোঁয়া তৈরি করে, যা সামরিক অভিযানে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সাদা ফসফরাস যখন মানুষের সংস্পর্শে আসে, তখন তা ভয়ানক আঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এটি বিধ্বংসী আগুনের কারণ হতে পারে এবং ভবন, অবকাঠামো ধ্বংস করতে পারে এবং ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে।
সাদা ফসফরাস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থল সামরিক অপারেশন লুকানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। সাদা ফসফরাস ব্যবহার করে, সেনাবাহিনী একটি স্মোকস্ক্রিন তৈরি করে তাদের ক্রিয়াকলাপ লুকানোর চেষ্টা করে।
সাদা ফসফরাস ইনফ্রারেড অপটিক্স এবং অস্ত্র ট্র্যাকিং সিস্টেম এড়িয়ে অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো গাইডেড অস্ত্র থেকে সামরিক বাহিনীকে রক্ষা করে।
সাদা ফসফরাস স্থল বিস্ফোরণের চেয়ে বিমান থেকে ফেলে বিস্ফোরণে বৃহত্তর অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত হয় এবং বড় সামরিক কার্যকলাপ লুকিয়ে রাখতে সহায়তা করে।
সাদা ফসফরাস কতটা ক্ষতি করে?
সাদা ফসফরাসের সংস্পর্শে এলে মানুষ তীব্র জ্বালা অনুভব করে অনেক ক্ষেত্রে এটা মানুষের হাড় পর্যন্ত পুড়িয়ে দেয় এবং এর নিরাময়ে অনেক সময় লাগে। সেসঙ্গে সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকে।
সাদা ফসফরাসের কারণে যদি মানুষের শরীরের মাত্র ১০ শতাংশও দগ্ধ হয়, তাহলেও তা মারাত্মক। এর সংস্পর্শে এলে মানুষের শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে এবং শরীরের অনেক অঙ্গ কাজ করা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সাদা ফসফরাস থেকে সৃষ্ট প্রাথমিক ক্ষত থেকে বেঁচে থাকা লোকেরা সারা জীবন ভোগেন।
সাদা ফসফরাসের আগুন ঘরবাড়ি এবং পাকা ভবনেরও ক্ষতি করতে পারে, ফসল ধ্বংস করতে পারে এবং গবাদি পশুর প্রাণহানীর কারণ হতে পারে।
সাদা ফসফরাস নিয়ে আইনি এবং নৈতিক উদ্বেগ
সশস্ত্র সংঘাতে সাদা ফসফরাস ব্যবহার বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোতে নিষিদ্ধ।
কনভেনশন অন কনভেনশন উইপনস (সিসিডব্লিউ) এর প্রটোকল ৩ বেসামরিক জনগোষ্ঠী বা বেসামরিক এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র হিসেবে সাদা ফসফরাস ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।
প্রোটোকলের অধীনে, এটি কেবল আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের নীতি অনুসারে সংকেত, স্ক্রিনিং এবং চিহ্নিতকরণের জন্য ব্যবহার করা উচিত।
সশস্ত্র সংঘাতে সাদা ফসফরাসের ব্যবহার একটি উল্লেখযোগ্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, কেউ কেউ বেসামরিক নাগরিক এবং পরিবেশের ক্ষতি হ্রাস করার জন্য কঠোর বিধিবিধান এবং আরো নজরদারির আহ্বান জানিয়েছে।
সূত্র: আলজাজিরা, এইচআরডব্লিউ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।