জুমবাংলা ডেস্ক : চিকিৎসার কথা বলে ভারতে গিয়ে খুন হওয়া সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম সম্বন্ধে নানা তথ্য সামনে আসছে। ভারত ও বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা, হুন্ডি ব্যবসা ও স্বর্ণ চোরাচালানের টাকার দ্বন্দ্বে তিনি খুন হয়ে থাকতে পারেন। ভারতের গোয়েন্দাদের তদন্তে হত্যাকাণ্ডের পেছনে তিন বাংলাদেশি ও একজন ভারতীয় নাগরিকের নাম ঘুরে ফিরে আসছে।
আনোয়ারুল আজীমের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান তিনি। ১৩ মে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে জানান, দিল্লি যাচ্ছেন। এরপর তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। কলকাতা পুলিশ বুধবার জানায়, আজিম খুন হয়েছেন। একই দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও জানান, সংসদ সদস্য আজীমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
আনোয়ারুল আজীম ঝিনাইদহ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এ ঘটনার পর বুধবার সংসদ সদস্য আজীমের খোঁজ চেয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘গত ১৩ মে বাবার ইন্ডিয়ান সিম নম্বর +৯১৭০৬৩২১৪৫৬৯ থেকে উজির মামার হোয়াটসআপ নম্বরে একটি ম্যাসেজ আসে, “আমি হঠাৎ করে দিল্লী যাচ্ছি, আমার সাথে ভিআইপি আছে। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দিব।” এটা ছাড়াও আরও কয়েকটি ম্যাসেজ আসে। সেই ম্যাসেজগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।’
এ ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে ভারতের সিআইডি। বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি বলছে, আজীমকে কোলকাতার নিউটাউন এলাকায় সঞ্জিবা গার্ডেন নামের একটি অ্যাপার্টমেন্টে শেষবারের মতো প্রবেশ করতে দেখা গেছে। ওই অ্যাপার্টমেন্টটির মালিকের নাম সঞ্জীব রায়। তিনি পশ্চিমবঙ্গের শুল্ক দপ্তরের একজন কর্মকর্তা।
গত ১৩ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত অ্যাপার্টমেন্টটির সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১৩ মে বাংলাদেশি নাগরিক আমানুল্লাহ, ফয়সাল সাজিদ এবং ভারতীয় নাগরিক শিলাশ্রীসহ ভবনটিতে প্রবেশ করেন আজীম। এরপর তাঁকে আর বের হতে দেখা যায়নি। তবে তাঁর সঙ্গে প্রবেশ করা অন্য তিনজন বিভিন্ন সময়ে সেখানে যাওয়া–আসা করেছেন।
ভারতীয় সিআইডি বলছে, অ্যাপার্টমেন্টটি সঞ্জীব রায়ের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান শাহীন নামের একজন বাংলাদেশি আমেরিকান। তিনি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভা মেয়র সেলিমের ছোট ভাই। সেলিমের সঙ্গে আজীমের ব্যবসায়িক যোগাযোগ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, সে সূত্র ধরেই শাহীনের সঙ্গে আজীমের পরিচয় হয়।
বাংলাদেশি গোয়েন্দারা বলছেন, ঝিলাইদহের কোটচাঁদপুর এলাকাটি হুন্ডি ও স্বর্ণ চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য। ধারণা করা হচ্ছে, সেলিম নিজেও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এরই মধ্যে আমানুল্লাহ ও ফয়সাল সাজিদকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাঁদের সঙ্গে মুস্তফা ফকির নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও ডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। সেই কর্মকর্তা বলেন, ‘সংসদ সদস্য আজীম নিহত হয়েছেন, এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তাঁর মরদেহ এখনো পাওয়া যায়নি। যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁকে মেরে টুকরো টুকরো করে টয়লেটে ফেলে ফ্ল্যাশ করে দেওয়া হয়েছে।’
বুধবার সকালে যখন ভারতের পুলিশ কর্মকর্তারা সঞ্জিবা গার্ডেনে অভিযান চালান, তখন তাঁরা কোনো মরদেহ খুঁজে পাননি। তবে অ্যাপার্টমেন্টে রক্ত ও মরদেহের কিছু অংশ পেয়েছেন। এ থেকেই তাঁরা ধারণা করেন আজীমকে মেরে ফেলা হয়েছে। আজীমের মরদেহ খুঁজতে এখনো অভিযান চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ।
এ ঘটনায় অন্য দুই সন্দেহভাজন শিলাশ্রী ও আখতারুজ্জামান শাহীন ভারতের সীমান্ত পেরিয়ে নেপালে পালিয়েছেন বলে ধারণা কলকাতা পুলিশের। তাদের ধারণা হুন্ডি ও স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আজীম। আর এটি নিয়েই তৈরি হওয়া কোনো দ্বন্দ্ব এই হত্যার কারণ। তবে কারণ অনুসন্ধানে এখনো কাজ করে যাওয়ার কথা জানাচ্ছেন তাঁরা।
অন্যদিকে ডিবি পুলিশের কর্মর্কতারা বলছেন, গ্রেপ্তার আমানুল্লাহ ও সাজিদকে জিজ্ঞাবাদ করে এই হত্যার রহস্য উন্মোচন করা হবে। সূত্র : ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।