ডা. সিফাত তানজিলা : নারীদের ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্তন ক্যান্সার। সাধারনত পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে সচেতন নারীরা স্তন ক্যান্সার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেন। তাই সেসব দেশগুলোতে স্তন ক্যান্সার প্রাথমিকভাবে ধরা পরলেও আমাদের দেশে নারীদের ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম।
প্রায় তিন চতুর্থাংশ নারীর ক্ষেত্রেই স্তন ক্যান্সার সম্পূর্ণ রূপে নিরাময় যোগ্য নয় এমন একটি পর্যায়ে গিয়ে রোগটি ধরা পরে, ঠিক সেই অবস্থায় এসে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
পুরো অক্টোবর মাসটি স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসাবে পালন করা হয়।
নারীদের স্তন ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা তৃনমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে গত কয়েক বছর ধরে অক্টোবর মাসটিকে একটি বিশেষ মাস হিসেবে নির্ধারিত করে চালু হলেও সেটি যথেষ্ট নয়।
স্তন ক্যান্সার কী? কারা ঝুঁকিতে রয়েছেন
অন্যান্য ক্যান্সার এর মতোই এটি একটি মরণঘাতী ব্যাধি।
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক কাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি, সাধারনত ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সি মহিলা, আরলি মেনারকি অর্থাৎ অল্প বয়সে রজঃস্রাব শুরু হওয়া, পেট মেনোপজ বেশি বয়সে মাসি বন্ধ হওয়া, অর্থাৎ যারা জীবনের একটি দীর্ঘ সময় ধরে হরমোনের প্রভাবে থাকে, অভুলেশন ইনডাকশন অর্থাৎ প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিকরন ঔষধ সেবন করছেন অথবা জন্মনিয়ন্ত্রনকারী ওষুধ বেশি সেবন করছেন, বন্ধ্যা মহিলা, এরা বেশি ঝুঁকিতে আছে।
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ
উপসর্গগুলো নিয়ে বলতে গেলে একটি ছোট চাকা যেটি প্রাথমিক পর্যায়ে মটরশুঁটির দানার আকার থাকলেও সপ্তাহ খানেক বা মাসঅন্তরে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আকারে বৃদ্ধি পাওয়া, শক্ত এবরো থেবরো আকার ধারন করা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাধাবিহীন। রোগের জটিল পর্যায়ে চামড়ার আলসার ক্ষত, চইড়া কমলার খোসার মতো অমসৃন, নিল বা বোটা দিয়ে রক্ত বা পুঁজ নির্যাস নির্গত হওয়া ।
স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা
রোগটি নির্ণয়ের জন্য আমরা সাধারণত ট্রিপল এসেসমেন্ট বা তিন ধরনের পরীক্ষা করে থাকি- প্রথমত ক্লিনিকাল ফিচার বা শারীরিক নিরীক্ষা, দ্বিতীয়ত রেডিওলজি এবং ইমেজিং অথ্যাৎ স্তন এর (এক্সিলাসহ) আলট্রাসনোগ্রাম এবং ম্যামোগ্রাম, তৃতীয়ত স্তনের কোন কাট বায়োপসি অথবা স্তন এর টিউমার থেকে মাংসের নির্যাস নিয়ে পরীক্ষা। মোটামুটি এই ট্রিপল এসেসমেন্ট পদ্ধতি দ্বারা স্তন টিউমার সঠিকভাবে নির্ণয়ের মাধ্যমে পরবর্তী চিকিৎসার প্লান করা হয়।
এছাড়াও ক্যান্সরটি কোন ধাপে আছে তার জন্য বুকের এক্স-রে, পেটের আলট্রাসনোগ্রাম এবং সিটি-স্ক্যান করা হয়।
রোগের স্টেজ বুঝে পরবর্তীতে সম্পূর্ণ স্তন কেটে ফেলা অর্থাৎ মাসটেকটমি অথবা স্তন এর কিছু অংশ কেটে ফেলা অথবা স্তন কনজারভিং সার্জারি অথবা বি.সি.এস করা হবে কিনা সেটি নির্ধারিত হয়।
লেখক: ডা. সিফাত তানজিলা
জেনারেল,ল্যাপারোস্কোপিক, ব্রেস্ট এন্ড কলোরেক্টাল সার্জন
সহকারী অধ্যাপক, সার্জারি বিভাগ,ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।