জুমবাংলা ডেস্ক : মেট্রোরেলের পুরোপুরি সুফল পাচ্ছেন যাত্রীরা। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সবগুলো স্টেশন চালুর পাশাপাশি মেট্রোরেলের সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে। যানজট এড়াতে মেট্রো ব্যবহারে যাত্রীদের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। এই অবস্থায় যারা মেট্রোরেলে যাতায়াতের জন্য সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে বারবার টিকিট কাটতে চান না, তাদের জন্য আছে এমআরটি পাস কার্ড।
এমআরটি পাস কী?
নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন বা কম দূরত্বের যোগাযোগের জন্য এমআরটি পাস ব্যবহার করা হয়। এটি একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক সংযোগবিহীন স্মার্ট আইডি কার্ড।
এই কার্ড দিয়ে খুবই সহজে মেট্রোরেলের ভাড়া পরিশোধ করা যায়। এই কার্ড দিয়ে ভবিষ্যতে বাস, লঞ্চ, মেট্রোরেলের পরিচালিত শপিংমল ইত্যাদির বিল এবং ভাড়া পরিশোধ করা যাবে।
মেট্রোরেলের এমআরটি পাস কীভাবে পাওয়া যাবে?
প্রথমে ডিএমটিসিএল-এর ওয়েবসাইট (dmtcl.gov.bd) থেকে ফরম ডাউনলোড করতে হবে। সেটি পূরণ করে মেট্রোরেলের টিকিট কাউন্টারে জমা দিলেই পাওয়া যাবে এই কার্ড।
নিজের নাম, বাবা ও মায়ের নাম, জন্মতারিখ, এনআইডি/জন্মসনদ/ড্রাইভিং লাইসেন্সের নম্বর ও মোবাইল নম্বর দিয়েই পূরণ করা যাবে ফরম। আপনার মোবাইলে বা ই-মেইলে এই তথ্যগুলো থাকলেই আপনি এমআরটি পাস ক্রয় করতে পারবেন। এ জন্য আপনার এনআইডি কার্ড বা অন্য কোনো কাগজপত্র সঙ্গে আনতে হবে না। জমাও দেয়া লাগবে না।
সকাল ৭টা ১৫ মিনিট থেকে রাত ৭টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত এমআরটি পাস ক্রয় ও টপআপ করা যাবে।
এমআরটি পাস করতে কত টাকা লাগবে
মেট্রোরেলে ভ্রমণের জন্য বতর্মানে নির্ধারিত টিকিট অফিস থেকে নিবন্ধন ফরমে তথ্য প্রদান করে এমআরটি পাস ক্রয় করা যাবে। এমআরটি পাসের প্রাথমিক মূল্য ৫০০ টাকা। এরমধ্যে নিরাপত্তা জামানত ২০০ টাকা ও ব্যবহারযোগ্য অর্থের পরিমাণ ৩০০ টাকা। এই কার্ডের মেয়াদ ১০ বছর।
এমআরটি পাস ব্যবহারের নিয়ম
এক যাত্রার ক্ষেত্রে ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী প্রতিবার একক যাত্রার টিকিট (এসজেটি) কিনে ভ্রমণ করতে হয়। তবে এমআরটি পাসের ক্ষেত্রে এন্ট্রি বা এক্সিট গেটে পাস স্পর্শ করে ভ্রমণ করা যাবে। এতে আপনাকে লাইন ধরার ঝামেলায় পড়তে হবে না।
রিচার্জ করবেন যেভাবে
এমআরটি পাসে প্রথমবার করা রিচার্জের টাকা শেষ হয়ে এলে যে কোনো স্টেশন থেকে টিকেট কেনার মেশিন (টিভিএম), টিকেট অফিস (টিওএম) এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় অফিস (ইএফও) থেকে এমআরটি পাস সহজেই রিচার্জ করে নিতে পারবেন।
হারানো কার্ড ফেরত পেতে কী করবেন?
হারিয়ে যাওয়া এমআরটি পাস পুনঃইস্যুর জন্য পুনরায় নিরাপত্তা জামানত ২০০ টাকা এবং প্রসেসিং ফি বাবদ ২০০ টাকা মোট ৪০০ টাকা জমা দিতে হবে। পুনঃইস্যুর পর হারিয়ে যাওয়া পাসটি খুঁজে পাওয়া গেলে এবং ব্যবহারযোগ্য হলে ৫০ টাকা সার্ভিস চার্জ প্রদান করে নিরাপত্তা জামানত ফেরত পাওয়া যাবে।
এমআরটি পাস ফেরত দিতে চাইলে
এমআরটি পাস ফেরত দিতে চাইলে ৫০ টাকা সার্ভিস চার্জ কেটে নিরাপত্তা জামানত ও অব্যবহৃত স্থিতি ফেরত দেয়া হবে।
মেট্রোরেল ভ্রমণের জন্য অনেকেই এরইমধ্যে এমআরটি পাস ব্যবহার করছেন। তবে কার্ডটি যত্নে রাখতে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। ওয়ালেটে বা মানিব্যাগে না রেখে সাবধানে রাখার কথা বলা হচ্ছে। কারণ, কার্ডটি নষ্ট হলে বা হারিয়ে গেলে পুনরায় ইস্যুর জন্য আপনাকে টাকা দিতে হবে।
এমআরটি পাসের সুবিধা
এমআরটি পাস ব্যবহার করে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করলে যাত্রীরা ভাড়ার উপর ১০% ছাড় পাবেন।
এমআরটি পাস ব্যবহারে সমস্যা হলে
মেট্রোরেলের এন্ট্রি বা এক্সিট গেটে এমআরটি পাস যথাযথভাবে স্পর্শ করা না হলে পরবর্তী সময়ে এন্ট্রি বা এক্সিটের সময় সমস্যা হবে। এ ক্ষেত্রে ইএফওতে যোগাযোগ করে পাসটি কার্যকর করে নিতে হবে।
এমআরটি পাস ব্লক হলে
এমআরটি পাস ব্যবহারে কোনো অনিয়ম করা হলে পাসটি ব্লক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে পাসটি কার্যকর করার জন্য নির্ধারিত ফরম পূরণ করে ইএফওতে আবেদন দাখিল করতে হবে।
প্রতিদিন সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত উত্তরা-মতিঝিল রুটে চলাচল করবে এই মেট্রোরেল।
তবে স্টেশন থেকে একক যাত্রার টিকিট কেটে যারা যাতায়াত করবেন তারা সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলাচল করতে পারবেন। এর বাইরে অতিরিক্ত সময়ে চলতে হলে থাকতে হবে এমআরটি বা র্যাপিড পাস। সব কটি স্টেশনেই থামবে ট্রেন।
এমআরটি বা র্যাপিড পাস ছাড়া চড়া যাবে না যেসব ট্রেনে
সকাল ৭টা ১০ এবং সকাল ৭টা ২০ মিনিটে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে দুটি ট্রেন মতিঝিলের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এই দুটি ট্রেনে শুধু এমআরটি বা র্যাপিড পাসধারীরাই চড়তে পাবেন।
এছাড়া রাত ৮টা ১০, ৮টা ২০, রাত ৮টা ৩০ এবং রাত ৮টা ৪০ মিনিটে মতিঝিল থেকে ৪টি মেট্রো ট্রেন উত্তরা উত্তর স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রা করবে। প্রতিটি স্টেশনে ট্রেনগুলো থামবে। এই ৪টি মেট্রো ট্রেনে শুধু এমআরটি বা র্যাপিড পাস এবং ভ্রমণের দিন রাত ৭টা ৪৫ মিনিটের আগে কেনা একক যাত্রার টিকিটধারী যাত্রীরা ভ্রমণ করতে পারবেন।
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমানে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল- এই ১৬ স্টেশনে মেট্রোরেল চলাচল করছে। কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজ চলমান। ওই অংশের কাজ শেষ হলে কমলাপুরও যাবে মেট্রোরেল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।