লাইফস্টাইল ডেস্ক : ব্রণ, ত্বকের সাধারণ একটি সমস্যা যেটাতে কম বা বেশি বয়সী, সবাই ভুগে থাকেন। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের জন্য এই সমস্যা মাঝে মাঝে উদ্বেগজনক হয়ে উঠে।
বর্তমান সময়ের নিয়ম ছাড়া জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের ফলে ব্রণ ও ত্বকের সমস্যা নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে।
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্রণ পরিবারের থেকে সংক্রমিত হওয়ার কারণে হয় যা পারিবারিক বা বংশগত ব্রণ হিসাবে পরিচিত। পরিবারের কারও বিশেষ করে বাবা-মায়ের ব্রণ বা ত্বকের নির্দিষ্ট কোন সমস্যা থাকলে সেটা পারিবারিক সূত্রে সন্তান বা পরবর্তী প্রজন্মে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ব্রণ কি?
সেবাসিয়াস গ্রন্থি সেবাম নামে একপ্রকার তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসরণ করে যা ত্বককে মসৃণ রাখে। কোনো কারণে সেবাসিয়াস গ্রন্থির নালির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে সেবাম নিঃসরণের বাধার সৃষ্টি হয় এবং তা ভেতরে জমে ফুলে উঠে যা ব্রণ (acne) নামে পরিচিত।
ব্রণের উপর জীবাণু সংক্রমণ ঘটলে পুঁজ তৈরি হয়। বাইরে থেকে এদের ছোট দেখালেও এরা বেশ গভীর হতে পারে। এজন্য ব্রণে সংক্রমণ সেরে গেলেও মুখে দাগ থেকে যেতে পারে।
ব্রণ বংশগত কেন হয়
পারিবারিক বা বংশগত ব্রণের কোন বৈজ্ঞানিক নাম না থাকলেও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবারের কারও তৈলাক্ত বা ব্রণ-প্রবণ ত্বকের প্রবণতা থাকে যা তাদের পিতামাতার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে থাকেন।
বংশগত ব্রণ সাধারণত বয়ঃসন্ধি শুরু হওয়ার সাথে সাথেই দেখা দেয় এবং এ ধরনের ব্রণ সাধারণত একগুঁয়ে হয়ে থাকে যার কারণে অনেক সময় চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছেও দ্বারস্থ হতে হয়।
জার্নাল অফ ইনভেস্টিগেটিভ ডার্মাটোলজিতে প্রকাশিত ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে নির্দিষ্ট কিছু জিনগত বৈচিত্র্য পরিবারের মধ্যে ব্রণ বিকাশের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই জিনগত কারণগুলি পরিবেশগত এবং জীবনযাপনের উপর নির্ভর করে।
পরিবেশগত কারণগুলোর মধ্যে দূষণ, আর্দ্রতা, পরিবারের খাদ্যাভ্যাস ব্রণ হওয়ার জিনগত প্রবণতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এ ছাড়া পরিবারের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার উপর ও নির্ভর করে ব্রণ হওয়া।
পরিবারের সদস্যদের ত্বক তৈলাক্ত হলে এবং তাদের চুলে তেল দেওয়া এবং তেল-ভিত্তিক প্রসাধনী ব্যবহারের অভ্যাস থাকলেও ব্রণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বংশগত ব্রণ প্রতিকারের উপায়
সচেতনতা
যেসব পরিবারে পারিবারিক বা বংশগত ব্রণের সমস্যা আছে তাদের জন্য জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণগুলো বুঝে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পরিবারের সদস্যদের ত্বক তৈলাক্ত হলে তেল জাতীয় প্রসাধনী এড়িয়ে চলাসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রাখা উচিত।
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা
স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে হলে পরিবারের সবাইকে একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে। এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করাসহ মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকা একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারাকে উৎসাহিত করে যা পরিবারের সবারই ত্বকের স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ব্যক্তিগত প্রসাধনী
পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আলাদা আলাদা ত্বকের ধরন এবং চাহিদা থাকতে পারে এবং সেই অনুযায়ী সবার আলাদা আলাদা ত্বকের প্রসাধনী থাকা উচিত। এতে করে একজনের ত্বক থেকে আরেকজনের ত্বকে ব্রণ ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা অনেক কম।
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি
পরিবারের সদস্যদের নিজ নিজ স্বাস্থ্যবিধির দিকে জোর দেওয়া উচিত। ত্বকের সমস্যা এড়াতে পরিবারের সবারই উচিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এবং ত্বকের যত্নের জন্য পণ্য ভাগাভাগি না করা। এতে করে পরিবারের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চলা
অনেক সময় সবকিছু মেনে চলার পরও বংশগত ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে উঠে। সেক্ষেত্রে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত এবং ব্যক্তিগত ত্বকের যত্ন মেনে চলা উচিত।
ব্রণ হলে যা করবেন না
ত্বকে ব্রণের সমস্যা দেখা দিলে প্রথমেই রোদ এড়িয়ে চলুন, রোদে না বের হওয়াই ভালো।
তেলযুক্ত ক্রিম বা ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা উচিত নয়।
ব্রণে হাত লাগাবেন না এবং ব্রণ খুঁটবেন না।
চুলে এমনভাবে তেল দেবেন না যাতে মুখটাও তেলতেলে হয়ে যায়।
বেশি পরিমাণে নিরামিষ খাবার খান। আমিষ খাবার যতটা সম্ভব না খাওয়ার চেষ্টা করুন।
ডেইরি প্রোডাক্টসের মধ্যে হরমোনাল উপাদান বেশি পরিমাণে থাকে বলে তা খুব সহজে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। এ কারণেই পনির, দুধ এবং দই কম খান।
ত্বক অপরিষ্কার রাখবেন না, নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।