বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : অনেকেই হয়তো অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সেটিংস বা ফিচার্স-এর তালিকায় ‘এক্সটেন্ডেড র্যাম’ বিষয়টি দেখেন। কোম্পানি ভেদে এর নাম ‘র্যাম প্লাস’, ‘ভার্চুয়াল র্যাম’, ‘মেমরি ফিউশন’ বা ‘এক্সপ্যান্ডেড র্যাম’ও হতে পারে।
বিভিন্ন নির্মাতার দাবি, এ ফিচার ফোনে বাড়তি মেমরি ‘যোগ’ করে। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট হাও-টু গিক। চলুন জেনে নেওয়া যাক এটি আসলে কীভাবে কাজ করে, বা আদৌ কিছু করে কী না!
এক্সটেন্ডেড র্যাম কী?
একটি অ্যাপ ডাউনলোড করলে সেটি ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজে যোগ হয়। তবে, অ্যাপ ওপেন করলে সেটি ‘টেম্পোরারি’ বা অস্থায়ী মেমরিতে চালাতে হয়। এর কারণ, ইন্টারনাল স্টোরেজ অ্যাপটি চালানোর জন্য যথেষ্ট দ্রুত কাজ করে না। এ অস্থায়ী মেমরিই হল ফোনের র্যাম। এটি সাধারণ স্টোরেজ থেকে অনেক দ্রুত কাজ করে। ফলে, ফোনে যত বেশি র্যাম থাকবে তত বেশি অ্যাপ কোনো বাধা ছাড়াই চালু রাখা যাবে।
এক্সটেন্ডেড র্যাম, দ্রুত গতিওয়ালা অস্থায়ী মেমরির অংশ নয়। এটি আসলে ধীরগতির ইন্টারনারল স্টোরেজের অংশ, যা র্যাম হিসাবে কাজ করার মতো করে তৈরি করা হয়েছে। ফলে, কোম্পানিগুলো যখন একটি ফোনের র্যাম ‘৮+৫’ জিবি বলে বারজাত করে, তখন এ অরিতিক্ত ৫জিবি ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজ থেকে সরিয়ে রাখা হয়। ফোনের স্টোরেজ যদি ১২৮জিবি হলে ব্যবহার করা যায় ১২৩জিবি। বাকিটা এক্সটেন্ডেড মেমরি ফিচারের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
ফিচারটি বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও ট্যাবলেটে ডিফল্টভাবেই চালু করা থাকে। তবে, এটি কতটা স্টোরেজ ব্যবহার করতে পারবে তা ফোনের সেটিংস থেকে বদলে নিতে পারবেন। বেশিরভাগ ফোনে ফিচারটি বন্ধ করারও সুযোগ আছে।
এটি কীভাবে কাজ করে?
ব্যবহারকারী কোনো অ্যাপ থেকে বেরিয়ে গেলে, অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম তৎক্ষণাৎ অ্যাপটি বন্ধ করে ফেলে না। পরের বার দ্রুত লোড করার জন্য ব্যাকগ্রাউন্ডে অ্যাপটি সক্রিয় রাখে। এজন্য অ্যাপ একেবারে বন্ধ করা উচিত নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে হাও-টু গিক।
অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম ব্যবহার হওয়া প্রতিটি অ্যাপের ক্ষেত্রে একই কাজ করে। অ্যান্ড্রয়েড-এর মেমরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সিদ্ধান্ত নেয় কোন অ্যাপগুলো কখন বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে, বেশিরভাগ অ্যাপই র্যাম-এ লোড করা থাকে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে র্যাম পূর্ণ থাকে।
র্যামের পুরো জায়গা পূর্ণ থাকা অবস্থায়, নতুন অ্যাপ চালু করলে কী হবে?
স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেমরি খালি করতে কম দরকারি কোনো অ্যাপ নিজে থেকেই বন্ধ করে অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম। আর ঠিক এখানেই ভার্চুয়াল র্যাম কাজে লাগে। ফিচারটি থাকলে, কম দরকারি অ্যাপটি বন্ধ না করে এক্সটেন্ডেড র্যামে সংরক্ষণ হয়। পরের বার অ্যাপটি চালু হবে ভার্চুয়াল র্যাম ফিচার থেকে। ফলে, সেটি যেখানে বন্ধ করেছিলেন সেখান থেকেই ব্যবহার শুরু করা সহজ হয়।
সহজভাবে ভার্চুয়াল র্যামের কাজ এটুকুই। এটি অস্থায়ী স্টোরেজ, মেমরি ফুরিয়ে গেলে অ্যান্ড্রয়েড সেখানে কম দরকারি অ্যাপ ধারণ করে।
ফিচারটি যা করতে পারে না
চলুন জানা যাক ফিচারটি কেন সাধারণ র্যামকে সরাসরি প্রতিস্থাপন করতে পারবে না।
ফোনের অ্যাপ কখনোই সরাসরি এতে লোড হয় না, কেবল অফ লোড হয়। ফলে, ফোনে ৮জিবি ভার্চুয়াল র্যাম থাকলেও এটি ফোনের কার্যক্ষমতা তেমন বাড়াবে না। ফ্ল্যাশ স্টোরেজ মূল র্যামের তুলনায় অনেক ধীর গতির। এমনকি আধুনিক ‘ইউএফএস ৩.১’ স্টোরেজেরও র্যামের সঙ্গে তুলনা নেই। আর সক্রিয় অ্যাপগুলো কখনই ইন্টারনার স্টোরেজে চলে না।
এ কারণে গেইমিং অ্যাপ বা অন্যান্য বড় অ্যাপের ওপর ভার্চুয়াল মেমরির তেমন প্রভাব নেই। বরং এতে উল্টো সমস্যা হতে পারে। যেহেতু র্যাম ও অভ্যন্তরীণ স্টোরেজের মধ্যে অ্যাপ্লিকেশনগুলো বার বার আনা নেওয়া করতে সময় ও কম্পিউটিং শক্তি লাগে, তাই ভার্চুয়াল র্যাম সম্ভাব্যভাবে জিনিসগুলো আরও ধীর করে দিতে পারে।
পাশাপাশি, ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজের সীমিত আয়ু থাকে, যা প্রতিটি ‘রিড/রাইট সাইকল’-এর সঙ্গে কমতে থাকে। কেবল অদরকারি অ্যাপ চালু রাখার জন্য ভার্চুয়াল র্যাম স্টোরেজ-এর এ আয়ুর ওপরে প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যও কম জায়গা থাকে।
এটি কী কেবল গ্রাহক আকর্ষণের ছলচাতুরী?
৮ বা ১২ জিবি র্যামওয়ালা আধুনিক ফোনের ক্ষেত্রে এক্সটেন্ডেড র্যাম তেমন কাজের কিছু নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লখ করেছে হাও-টু গিক। ভালো সময়ে এটি অকেজো ও ফোনের খারাপ সময়ে বাধা দিতে পারে নানা কাজে।
পুরনো মডেলের বা ৮ জিবির কম র্যাম রয়েছে এমন ফোনের ক্ষেত্রে, ফিচারটি ‘মাল্টিটাস্কিং’ বা একসঙ্গে অনেক কাজ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। এ ফোনগুলোর মেমরি দ্রুত ফুরিয়ে যায়, ফলে অদরকারি অ্যাপ স্টোরেজে পাঠিয়ে দেওয়াই ভালো অপশন হতে পারে। তবে, উভয় ক্ষেত্রেই, এক্সটেন্ডেড র্যম ফিচারটি ফোন বা বিভিন্ন অ্যাপ দ্রুত চালাতে সাহায্য করে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।